Friday, February 2, 2024

বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা -- মোঃ হেলাল উদ্দিন

বাঙালি জাতি রাষ্ট্রের নির্মাতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারা জীবন ছিলেন বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা ও বিকাশে আপোষহীন। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠাকালে বঙ্গবন্ধু ছিলেন বাঙালিদের মধ্যে সবচেয়ে দৃঢ়চেতা ও সংগ্রামী। এ জন্য পাকিস্থান প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই বারবার শাসকগোষ্ঠীর খড়গহস্ত বঙ্গবন্ধুর ওপর নেমে আসে।

ভাষা আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্বে বঙ্গবন্ধু কারাবন্দি ছিলেন। কারাগারে অবস্থান করেই তিনি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবীতে উচ্চকণ্ঠ থেকে, আন্দোলনকে বেগবান করতে নির্দেশনা দিয়েছেন। ১৬ ফেব্রæয়ারি, ১৯৫২ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও তাঁর সাথে কারাগারে বন্দি মহিউদ্দিন আহমদ রাষ্ট্রভাষা বাংলা এবং রাজবন্দিদের মুক্তির দাবিতে আমরণ অনশন শুরু করেন, যা ভাষা আন্দোলনে নতুন মাত্রা যুক্ত করে। বঙ্গবন্ধুর এসব দাবীর প্রতি সমর্থন পোষণ করে এ  বিষয়ে আলোচনার দাবি জানিয়ে  পূর্ব বাংলার আইন পরিষদে মূলতবি প্রস্তাাব গ্রহণ করা হয়। এ অবস্থায় শাসকগোষ্ঠী ১৮ ফেব্রæয়ারি বঙ্গবন্ধু ও মহিউদ্দিন আহমদকে অনশনরত অবস্থায় ফরিদপুর জেলে স্থানান্তর করেন। এভাবেই রাষ্ট্রভাষা বাংলা প্রতিষ্ঠা ও বিকাশে বঙ্গবন্ধু পাকিস্থান প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই সচেষ্ট থেকেছেন।

১৯৫২ সালে চীনের বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত শান্তি সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান প্রতিনিধি দলের অন্যতম সদস্য হিসেবে যোগদান করেন। সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু বাংলা ভাষায় বক্তৃতা করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু দুটি কারণে ঐ সম্মেলনে বাংলায় বক্তৃতা করেছিলেন। প্রথমত, চীনের অনেক প্রতিনিধি ইংরেজি জানার সত্তে¡ও মাতৃভাষায় বক্তৃতা করেছিলেন এবং দ্বিতীয়ত, বঙ্গবন্ধুর চীন সফরের কিছুদিন আগে পূর্ব বাংলায় মাতৃভাষার জন্য যে আন্দোলন হয়েছে তা অন্য দেশের প্রতিনিধিদের কাছে আরো একবার তুলে ধরা। এভাবে ভাষা আন্দোলনের কিছুদিন পরেই বঙ্গবন্ধু দেশের বাইরে বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রেখেছিলেন।

বাংলা ভাষার উৎকর্ষতা ও বহুমাত্রিকতা বিকাশে ১৯৫৫ সালের ৩ ডিসেম্বর ঢাকায় প্রতিষ্ঠা করা হয় বাংলা একাডেমি। বর্তমানে বাংলা একাডেমি একটি বিশ^মানের প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। অনেকের অজানা, পূর্ব বাংলায় বাংলা ভাষার বিকাশে বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠায় অগ্রগামী ভূমিকা পালন করেন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধু তখন পাকিস্তানের প্রাদেশিক সরকারের মন্ত্রী। মূলত ঐ সময়ে বঙ্গবন্ধুর ঐকান্তিক প্রচেস্টায় পাকিস্তান সরকার পূর্ব বাংলায় বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠায় রাজি হয়। এছাড়া বাংলা একাডেমি প্রথম যে আন্তর্জাতিক সাহিত্যে সম্মেলন করে, সেটিও বঙ্গবন্ধুর উৎসাহ ও আন্তরিক  প্রচেষ্টায়।

ভাষা আন্দোলন, বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠা এসব ঘটনার পর পূর্ব বাংলায় বাংলা ভাষা চর্চা বিশেষ করে মাতৃভাষার মাধ্যমে জ্ঞানচর্চা ও বিদ্যাচর্চার ব্যাপারে এক প্রবল উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়। বঙ্গবন্ধু বাঙালির এই আশা আকাঙ্খা ধারণ করে ১৯৭১ সালের ১৫ই ফেব্রæয়ারি বাংলা একাডেমি আয়োজিত একুশের অনুষ্ঠানমালায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় বলেন 'যে দিনই আমরা ক্ষমতায় যাবো তার পরদিন থেকে সরকারী নথিপত্র, অফিস-আদালত সব জায়গায় বাংলা চালু হবে। এটা কোনো লোক দেখানো ঘোষণা নয়, দেশের জনগণের তীব্র চাহিদার স্বীকৃতি। '

৫ই জুন, ১৯৫৫ বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ঐ সময়ে অবাঙালি পাকিস্থানী শাসকেরা পূর্ব বাংলার নাম পরিবর্তন করে পূর্ব পাকিস্তান রাখতে সচেষ্ট হয়। ২৫শে আগষ্ট, ১৯৫৫ করাচিতে পাকিস্তান গণপরিষদে প্রদত্ত  এক বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধু বলেন,

'স্যার, আপনি দেখবেন ওরা 'পূর্ব বাংলা' নামের পরিবর্তে 'পূর্ব পাকিস্তাান' রাখতে চাই। আমরা বহুবার দাবি জানিয়েছি যে, আপনারা এটাকে বাংলা নামে ডাকেন। 'বাংলা' শব্দটার একটা নিজস্ব ইতিহাস আছে, আছে এর একটা ঐতিহ্য। আপনারা এই নাম আমাদের জনগণের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে পরিবর্তন করতে পারেন। আপনারা যদি ঐ নাম পরিবর্তন করতে চান তাহলে আমাদের বাংলায় আবার যেতে হবে এবং সেখানকার জনগনের কাছে জিজ্ঞেস করতে হবে তারা নাম পরিবর্তনকে মেনে নেবে কি না।'

অর্থাৎ যেখানে বাংলার প্রতি অন্যায় করা হয়েছে, অবহেলা প্রদর্শন করা হয়েছে সেখানেই বঙ্গবন্ধু প্রতিবাদ করেছেন, সংগ্রাম করেছেন।

বাংলা ও বাঙালি সত্তা লালনই ছিল বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির ভিত্তি। বঙ্গবন্ধু তাঁর রাজনৈতিক জীবনের একটা বড় অংশ নির্জন কারাগারে কাটিয়েছেন। তখন দীর্ঘদিন ধরে বাংলায় কথা না বলতে পারা, বাংলায় লেখা বই পড়তে না পারা, বেতারে বাংলা গান শুনতে না পারার মনোবেদনার কথা তাঁর লেখা 'কারাগারের রোজনামচা'য় আমরা দেখতে পাই। ১৯৬৬ সালে গ্রেপ্তার হয়ে দীর্ঘ সময় ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী ছিলেন বঙ্গবন্ধু। এ সময় নুরু নামের এক কয়েদির গান শুনে বঙ্গবন্ধু তাকে বলেছিলেন,' গান গাও নুরু, বাংলার মাটির সাথে যার সম্বন্ধ আছে সেই গান গাও'। ১৯৬৮ সালে আগরতলা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে বঙ্গবন্ধুকে যখন পাকিস্থানী সেনা প্রহরায় ঢাকা কুর্মিটোলা সেনানিবাসে নিয়ে আসা হয় তখন বঙ্গবন্ধুর মনে যে অনুভূতি সৃষ্টি হয় সেটি 'কারাগারের রোজনামচা'য় বঙ্গবন্ধু তুলে ধরেছেন এভাবে, 'মনে মনে বাংলার মাটিকে সালাম দিয়ে বললাম, তোমাকে আমি ভালোবাসি। মৃত্যুর পর তোমার মাটিতে যেন আমার একটু স্থান হয়, মা'। মুক্তিযুদ্ধের দীর্ঘ নয় মাস যখন বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী, যখন মিথ্যা মামলায় তাঁকে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝোলানোর আয়োজন চলছিল তখন বঙ্গবন্ধু বলেই শত্রæর সামনে বলতে পেরেছিলেন, ' ফাঁসির মঞ্চে যাওয়ার সময় আমি বলব, আমি বাঙালি, বাংলা আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা'।

১৯৬৯ সালের ৫ ই ডিসেম্বর গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দির ৬ষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু জনগণের পক্ষে পূর্ব পাকিস্তানের নাম 'বাংলাদেশ' রাখেন। পৃথিবীতে এমন রাজনীতিক দ্বিতীয়টি নেই, যিনি একটি নতুন জাতিরাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেছেন, নতুন সে রাষ্ট্র জন্মানোর আগেই তার নামকরণ করেছেন এবং একটি সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বিজয় অর্জন করে স্বাধীন সার্বভৌম জাতিরাষ্ট্র উপহার দিয়েছেন।

বঙ্গবন্ধু অনেক আক্ষেপ নিয়েই পূর্ব পাকিস্থানের নাম বাংলাদেশ রাখেন। পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী যখন পূর্ব বাংলায় তথাকথিত ইসলামীকরণের নামে বাংলা ভাষা ও বাঙালি সংস্কৃতির উপর একের পর এক আঘাত এনে সবকিছু পরিবর্তন করতে থাকে, তখন বঙ্গবন্ধু বলেন, 'আজ বঙ্গপোসাগর ছাড়া আর কোথাও বাংলা নামের অস্তিত্ব দেখিতে পাই না, জনগণের পক্ষ হইতে ঘোষণা করিতেছি, পাকিস্তানের পূর্ব অংশটি আজ   হইতে পূর্ব পাকিস্তানের পরিবর্তে শুধু বাংলাদেশ।'

১৯৭১ সালের মার্চে বঙ্গবন্ধুর ডাকে সমগ্র পূর্ব বাংলায় যখন অসহযোগ আন্দোলন চলছে, তখন ৩মার্চ, ১৯৭১ বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতিতে ঢাকার পল্টনে ঘোষিত হয় স্বাধীনতার ইশতেহার। তাৎকালীন ছাত্রলীগ ও ডাকসু নেতৃবৃন্দের উদ্যোগে সেই ইশতেহারে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অমর সৃষ্টি 'আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি' গানটিকে স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণে স্বাধীনতার  ইশতেহার সমর্থন করে বক্তৃতা দেন।বস্তুত এভাবে বঙ্গবন্ধু বাংলা ভাষা, বাংলা সাহিত্য, বাংলা সংস্কৃতি অর্থাৎ বাংলা- বাঙালির বিকাশকে  সবসময়  মর্যাদার আসনে বসিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করতেন রাজনৈতিক ক্ষমতা না থাকলে বাংলার কোন দিন বিকাশ হবে না।

বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দীর্ঘ নয় মাসের স্বশস্ত্র সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ পাকিস্থানী হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে পৃথিবীর মানচিত্রে জায়গা করে নেয়। ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা গ্রহন করেই বাংলা বিকাশে তাঁর পূর্বের রাজনৈতিক অঙ্গিকার পূরণে হাত দেন। ১৯৭২ সালের ১৭ মে বঙ্গবন্ধু সরকার জারি করেন 'দি বাংলা একাডেমি অর্ডার, ১৯৭২'। এর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু বাংলা একাডেমির কলরব বৃদ্ধি করেন, বাংলা ভাষার উৎকর্ষতা ও শ্রীবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখেন।

বঙ্গবন্ধু সরকারের অন্যতম লক্ষ্য ছিলো স্বল্প সময়ের মধ্যে দেশের জন্য একটি শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করা। সফলতার সঙ্গে বঙ্গবন্ধু সরকার পৃথিবীর একটি শ্রেষ্ঠতম সংবিধান এদেশের জনগণকে  উপহার দিয়েছিলেন। ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর প্রবর্তিত সেই সংবিধানের ৩ অনুচ্ছেদ এ  বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা বাংলা বলে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ৪(১) অনুচ্ছেদ এ প্রজাতন্ত্রের জাতীয় সংগীত 'আমার সোনার বাংলা'র প্রথম দশ চরণ এবং ৪(২) অনুচ্ছেদ এ প্রজাতন্ত্রের জাতীয় পতাকা 'সবুজের ক্ষেত্রের উপর স্থাপিত রক্তবর্ণের একটি ভরাট বৃত্ত' বলে স্বীকৃতি দেওয়া হয়, যা স্বাধীনতার ইশতেহারে ছিল।

এছাড়া সংবিধানের ১৫৩(৩) অনুচ্ছেদ এ বলা আছে এ সংবিধান পাঠের ক্ষেত্রে বাংলা ও ইংরেজির মধ্যে বিরোধ দেখা দিলে বাংলা পাঠ প্রাধান্য পাবে। এভাবে সংবিধানে মাতৃভাষা বাংলার শ্রেষ্ঠত্ব রাখা হয়েছে।

কাজী নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবির স্বীকৃতি- বাংলা ভাষার মর্যাদা বৃদ্ধিঃ বঙ্গবন্ধু এ সময় আরেকটি উল্লেখযোগ্য কাজ করেন বাংলা ভাষা, বাংলা সাহিত্য বিকাশে। ১৯৭২ সালের ২৪ মে কবি কাজী নজরুল ইসলামকে ভারত সরকারের সাথে আলোচনা করে ভারত থেকে সপরিবারে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। কবিকে দেওয়া হয় নাগরিকত্ব ও জাতীয় কবির মর্যাদা। ঢাকার ধানমন্ডিতে জাতীয় কবিকে বরাদ্দ দেওয়া হয় সরকারি বাড়ি বাড়িটির নাম দেওয়া হয় 'কবি ভবন'। কবি ভবনে সরকারি নিয়মে জাতীয় পতাকা টানানো হতো। মূলত একজন দূরদর্শী রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে বঙ্গবন্ধু সে সময় বাংলা ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি বিকাশে সম্ভাব্য সব কিছু করেছিলেন।

বঙ্গবন্ধু ১৯৭৩ সালে যুদ্ধ-উত্তর বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি, প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের সাথে সম্পাদিত চুক্তি ও পাকিস্তানের সাথে টানাপোড়েন এবং তা নিয়ে উপমহাদেশের রাজনীতির নানা মেরুকরণ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের বক্তব্য তৎকালিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড এম. নিক্সন কে অবহিত করেন। আশ্চার্যের বিষয় হলো বঙ্গবন্ধু এ বিশেষ বার্তা মার্কিন প্রশাসনের কাছে পাঠিয়েছেন চিঠির মাধ্যমে। আরো আশ্চার্যের ব্যাপার হলো বিশেষ দূত মাধ্যমে পাঠানো চিঠিটি ছিলো বাংলায় লেখা। বিশ্বনেতাদের কাছে মাতৃভাষা বাংলায় চিঠি লেখার এ ঘটনা বিশ্বে বিরল, যা বঙ্গবন্ধু বলেই সম্ভব ছিল। যে রিচার্ড নিক্সন ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোর বিরোধী, সেই রিচার্ড নিক্সনকে সদ্য স্বাধীনতা অর্জনকারী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী মাতৃভাষাতে চিঠি দিয়ে শুধু মাতৃভাষা বাংলার শ্রীবৃদ্ধি করেননি, বাঙালি ও বাংলাদেশকে করেছেন মহান।

বাংলা ভাষার মর্যাদা বিকাশে ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর দিনটি তাৎপর্যপূর্ণ। এ দিন বঙ্গবন্ধু জাতিসংঘে বাংলায় বক্তৃতা করেন। বাংলা ভাষার সম্মান প্রতিষ্ঠায় এমন ঘটনা তখন পর্যন্ত পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি ঘটেনি। এর আগে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কার লাভ করে বিশ্বমঞ্চে বাংলা ভাষাকে পরিচিত করে তোলেন। যদিও তিনি নোবেল পেয়েছিলেন গীতবিতান এর ইংরেজি অনুবাদ এর উপর। কবিগুরু  তাঁর নোবেল বক্তৃতাটি বাংলাতে করলে সেটি হতো বাংলা ভাষার জন্য অহংকারের, কিন্তুু  তিনি তা করেছিলেন ইংরেজিতে। এমনকি রবীন্দ্রনাথ নোবেল পুরষ্কার লাভের পর দুনিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কর্মশালায় যে বক্তৃতা করে বেড়িয়েছেন তাও সব ইংরেজিতে। এখানে বঙ্গবন্ধু অনন্য। জীবনে যখন যেখানে তিনি বাংলা ভাষা তুলে ধরার সুযোগ পেয়েছেন,সেখানেই স্বগৌরবে তুলে ধরেছেন বাংলা ভাষাকে।

বঙ্গবন্ধু আজ আমাদের মাঝে নেই সত্যি, কিন্তুু তাঁর জীবনের অর্জনগুলো দিয়ে তিনি আজও বাংলা বিকাশে ভূমিকা রেখে চলেছেন।

ভাষা আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে কারাগারে অনশনে থাকা বঙ্গবন্ধুসহ ভাষাসৈনিকদের সেই আত্মত্যাগের দিনটি আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃত। ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ আজ ইউনেস্কো স্বীকৃত বিশ্ব ঐতিহ্য সম্পদ। ২০১৭ সালের ৩০ শে অক্টোবর ইউনেস্কো কর্তৃক স্বীকৃতি পেয়ে এটি বর্তমানে 'ইন্টারন্যাশনাল মেমোরি অব ওয়ার্ল্ড রেজিস্টার - এ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। কারাগারের বন্দী দিনগুলোতে বাংলা ভাষায় লেখা তাঁর ডায়রিগুলো এখন পর্যন্ত তিন তিনটি গ্রন্থ আকারে প্রকাশিত হয়েছে, যা বাংলাদেশের এক অনন্য দলিলে পরিণত হয়েছে। বইটি তিনটি হলো 'অসমাপ্ত আতœজীবনী', 'কারাগারের রোজনামচা ' এবং 'আমার দেখা নয়াচীন'।  বর্তমানে বইগুলো বিশ্বের বহু ভাষায় অনুদৃত হচ্ছে, যা বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশকে আরো গভীরভাবে পৌছে দিবে বিশ্ববাসীর কাছে। বঙ্গবন্ধুর  লালন করা বাঙালি সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ বাউল সংগীত, জামদানি শাড়ি এবং মঙ্গল শোভাযাত্রাও আজ বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ।

বাঙালি জাতির ইতিহাস হাজার বছরের পুরনো। এ জাতি সবসময় অন্যের দ্বারা শাসিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু এই জাতিকে বিশ্ব মানচিত্রে ঠিকানা করে দিয়েছেন স্বাধীন জাতি হিসেবে। প্রতিষ্ঠা করে দিয়েছেন বাঙালি জাতির আত্মপরিচয় ও আত্মনিয়ন্ত্রের অধিকার। বাংলা ভাষা, বাংলা সাহিত্য, বাঙালি সংস্কৃতি এ জাতির জাতিসত্তা গঠনের পেছনে মূল অনুরণন। বঙ্গবন্ধু আজীবন নিজেকে উৎসর্গ করেছেন সেই বাংলা বিকাশে।

 

বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা 

-- মোঃ হেলাল উদ্দিন

No comments:

Post a Comment