Showing posts with label গল্প. Show all posts
Showing posts with label গল্প. Show all posts

Friday, July 12, 2024

'গল্প হলেও স্বপ্ন' -- মোঃ হেলাল উদ্দিন

বাড়ি ভর্তি মেহমান। সবাই তাদের মেহমানদারি করাতে ব্যস্ত, কিন্তু তরু আর শশী মত্ত আছে তাদের গল্পের মাঝে। বলে রাখা ভালো এই তরু আর শশী হলো সদ্য বিবাহিত এক দম্পতি। তাই এদের গল্পের সময় আর অসময় নেই। আজও তেমনি গল্পের মাঝেই হঠাৎ শশী বলে উঠলো এই তরু, তুমি কি জানো আমি কে?
এই কথা শুনে তরু হাসতে লাগলো আর বললো জানবো না কেন? তুমিতো আমার শশী।
শশী এবার সিরিয়াসলি বললো, না তরু, না। আমি শশী না। শশীর আড়ালেও আমার একটা আলাদা পরিচয় আছে, যা অনেকেই জানে না, তুমি জানো না।
এবাব তরু সত্যিই অবাক হয়ে যায়। সে বিস্মিত চোখে শশীর কাছে জানতে চাই তার আসল পরিচয় কি? শশী আস্তে আস্তে বলতে শুরু করে তার জীবনের সত্যিটা।
আমার আসল নাম ঋতু ঘোষ। আমার বয়স যখন দশ বছরের মতো হবে, তখন রাগ করে বাড়ি থেকে পালিয়ে যাই। এখন যাদের মা বাবা বলে ডাকি, তারাই আমাকে আশ্রয় দেয়, লেখা-পড়া করায়, তাদের কারনেই আজ আমি প্রতিষ্ঠিত। এখন তাদের পরিচয় ই আমার বড় পরিচয়।
তরু অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শশীর মুখের দিকে। এ কি বলছে শশী, এটা কি করে সম্ভব? এতো বড় সত্যিই কিভাবে গোপন রেখেছিল এতো দিন? এর কোন উত্তর খুজে পায় না তরু। তবুও তরু প্রশ্ন করে শশীকে, আচ্ছা তোমার আসল মা-বাবা কোন দিন কি তোমাকে খুজেনি?
শশী সাবলীল ভাষায় উত্তর দেয়, জানতাম মা আমাকে খুঁজতে মাঝে মাঝেই পাশের এলাকাতে, এমনকি পাশের বাড়ি পর্যন্ত আসত যদি আমার দেখা পায়, কিন্তু কখনো আমার দেখা পায়নি আর আমিও কখনো মায়ের সাথে দেখা করিনি।
একথা শুনে তরু আরো অবাক হয়ে যায় এবং শশীকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠে, তুমিতো দেখি ছোট বেলা থেকেই অনেক পাষাণ, অনেক নিষ্ঠুর।
তরুর একথা শুনে শশী অট্ট হাসিতে ফেটে পরে আর তার হাসির শব্দে তরুর ঘুম ভেঙ্গে যায়, সে চোখ খুলে দেখে একি শশীতো দিব্যি ঘুমাচ্ছে। তরুর মনে বার বার প্রশ্ন এ কি দেখলো সে?? এটাই কি সত্যিই?? কি করে তা শশীকে জিজ্ঞাস করবে, এই ভাবতে ভাবতে তরু আবার ঘুমিয়ে পড়ে।
 
 
'গল্প হলেও স্বপ্ন' 

Saturday, February 4, 2023

নীল খামে বেদনার চিঠি -- মোঃ হেলাল উদ্দিন


বেদনার রঙ নীল কিংবা নীল রঙের বেদনা এমন একটা কথা আমাদের সকলেরই জানা।

এই কথা বিশ্বাস করে সাথী। তাই নীল খাম আর নীল কলম নিয়ে নিস্তব্ধ নিশিতে সাথী চেয়ারে বসেছে তার মনে জমে থাকা বেদনার কথাগুলো লিখতে।

কিন্তু কি লিখবে সাথী? শুরু করবে কোথা থেকে তার মনে জমে থাকা বেদনার কথাগুলো এমন ভাবতে ভাবতে চোখ ঝপসা হয়ে আসছে। সময়তো বেশি হয়নি তবু কেন তার এমন লাগছে, মনে হয় হাজার বছর দেখা হয়নি সবুজের সাথে, কথা হয়নি কখনো দু'জনের। কিন্তু তাতো নয়। সবুজ কি করে, কোথায় আছে সবাই সাথীর জানা। তবু কেন এমন মনে হয়। কেন আজ তার কথা মনে পরতে বৈশাখের রৌদ ঝলমলে আকাশে হঠাৎ জমে যাওয়া মেঘের মতো ঝাপসা হয়ে আসছে সব স্মৃতি। বৈশাখের কালো মেঘে আকাশ ছেড়ে গেলেও কোথাও যেমন একটু সূর্যের আলোর সন্ধান পাওয়া যায় তেমনি সাথীর ঝপসা হয়ে যাওয়া চোখের এক কোনে সবুজের সাথে কাটানো সুখস্মৃতি উকিঁ দিচ্ছে। সে লিখতে শুরু করেছে তার বেদনার চিঠি।

প্রিয় সবুজ,

কেমন আছো?

কতোদিন হলো তোমার সাথে কথা হয়না। দেখা হয়না বহুদিন। সেই কবিতার মতো দেখেছিলাম কবে, কোন বৃহস্পতিবারে, মনে হয় এক কোটি বছর তোমার সাথে দেখা নাই। আসলেই কি তাই? তোমার সাথে শেষ দেখার সময়টা কি এতোদিন হয়ে গেছে।

আচ্ছা, তোমার কি আমাকে মনে পড়ে? নাকি ভুলে গেছো আজ সব। তোমার হৃদয়ে আজ অন্য কোন যুবতীর বাস। যতোদূর জানি তোমার পড়ালেখা এখন শেষ হয়নি। তবে কি ক্লাসের কোন বান্ধবী আজ তোমার প্রেমের নতুন সারথী, যেমন আমাকে রাখতে প্রতিটা ক্লাস পিরিয়ডে একই বেঞ্চে তোমার পাশে।

সবুজ, মনে পড়ে আমাদের প্রথম দেখার কথা? আমি কলেজের ক্লাসরুমে একা বসেছিলাম। কোথা থেকে তুমি দৌঁড়ে এসে আমায় ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে তুমি পাশে বসলে। তোমার ধাক্কায় আমি পরে যাচ্ছিলাম প্রায়, কিন্তু কেমন করে ধরলে। আমার তখন মনে হচ্ছিল কোন ঝড়ো বাতাস আমায় উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে আর কোন আপন হাত শক্ত করে আমায় ধরে আছে যেন কোন বিপদ আমায় স্পর্শ করতে না পারে।

একটু স্বাভাবিক হতে অনুভব করলাম কোন এক অজানা ভালো লাগা হৃদয়ে বয়ে যাচ্ছে। সমস্ত শরীরজুড়ে একটা অন্যরকম অনুভূতি বয়ে চলছে। মনে হচ্ছিল এমন একটা শক্ত হাত আমার হাতে ধরা দরকার। কিন্তু আমি তোমার সাথে রাগ করে, কড়া কিছু কথা শুনিয়ে ক্লাস থেকে বের হয়ে গেলাম।

মনে আছে তোমার সেই দিনের কথা। এরপরে কতোবার সরি বলার চেষ্টা করেছিলা। কিন্তু আমি কোন পাত্তাই দিতেছিলাম না। আসলে এটা তোমার প্রতি রাগ থেকে করিনি, শুধু তোমাকে যাচাই করে দেখছিলাম। আমি আবার গানের সেই কথা, বাজারে যাচাই করে দেখিনি তো দাম, সোনা কিনিলাম নাকি রুপা কিনিলাম, এই ভালোবাসায় বিশ্বাস করিনা। তাই তোমাকে ভালো লাগলেও যাচাই করে দেখছিলাম। যদিও জানতাম না তুমি আমায় ভালোবাস কিনা, নাকি এমনিতেই সেদিন এমন করেছিলা। তবে বুঝতেছিলাম, সেদিনের করা তোমার কান্ড ছিলো পরিকল্পিত।

সবুজ, তোমার সাথে কিছুদিনের মধ্যেই সুন্দর একটা সম্পর্ক হয়ে গেলো। কতো মধুর ছিলো সেই দিনগুলো মনে আছে তোমার। জানি তুমি ভুলতে পারোনি, যেমন ভুলতে পারিনি আমি। তোমার সাথে পাশাপাশি বসে ক্লাস করা, ক্লাসের মাঝে তোমার দুষ্টমি কখনো স্যারের রাগান্বিত চোখ বা ক্লাসের অন্যদের বাঁকা কথা শুনে কাটাতে হয়েছে সবই আমার মনের কোণে জমা রয়েছে, শুধু তুমি নেই আমার মনের মাঝে। আমার মনের ঘরে আজ অন্য পুরুষের বাস।

কেন এমন হলো? কেন তুমি হলে না আমার মনের সেই পুরুষ। না, তোমাকে দোষ দিচ্ছি না আমার দোষ ছিলো। আসলে পরিস্থিতি আমাদের বাধ্য করেছে আলাদা হতে, দুইজনকে দুই প্রান্তে রাখতে। দুইটা বছর কতো আনন্দে কেটেছে। কতো খুনসুটি, কতো মান-অভিমান। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে আজ সবই স্মৃতি।

তোমার চোখে বড় হবার স্বপ্ন। ভর্তি হলে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে। আমি রয়ে গেলাম সাধারণ শিক্ষায়। বাবা-মায়ের একমাত্র মেয়ে। তাদের ছেড়ে দূরে যেতে পারিনি। আর তাই হয়তো আজ আমি তোমার থেকে দূরে। চোখের আড়াল হলে নাকি মানুষ মনের আড়াল হয়ে যায় কথাটা তেমন বিশ্বাস করতাম না, কিন্তু আজ তা সত্যিই আমার জীবনে।

তুমি ব্যস্ত লেখাপড়া নিয়ে। এদিকে বাবা পাত্র দেখতে লাগলো। আমার বিয়ে করার কোন ইচ্ছে ছিলো কিন্তু বাবা মায়ের জোড়াজুড়িতে শেষ পর্যন্ত বিয়ে করতে বাধ্য হলাম। আর করারই বা কি ছিলো বলো? তোমার কাছে তো গিয়েছিলাম। আমাকে ধরে রাখার সেই আগ্রহ তখন তোমার ছিলো না। যেমন ছিলো তোমার সাথে দেখা হবার প্রথম দিন কিংবা পাশাপাশি থাকার দিনগুলোতে। তাই আমার জীবনে আগমন ঘটলো,,,,,,

(২)

সজলের কথা মনে হতেই সাথীর ঘোর কেটে গেলো, যেমন বৈশাখের ঝড় হঠাৎ আসে হঠাৎ ই থেমে যায়।

সাথীর বিয়ে হয়েছে প্রায় চার বছর হলো। বেশ সুখেই কাটছিলো তাদের বিবাহিত দিনগুলো। যদিও সজলের চাকুরির কারনে দূরে থাকতে হতো আবার সাথীও পড়ালেখা করতো। কিন্তু সুখের সময়গুলো সাথীর জীবনে বেশি স্থায়ী হতে চায় না। সুখ যেন সাথীর জন্য বালির বাধঁ। বালি দিয়ে বাধঁ দিলে তা যেমন পানিতে ভেসে যায়, তেমনি সাথীর সুখগুলো তার দু'চোখে জলে ভেসে যায় প্রতিনিয়ত। তা নাহলে কেন সব ভুলে বিয়ের পর যাকে নিয়ে সুখের স্বপ্ন দেখছে, সুন্দর দিন কাটাচ্ছে তার সাথেই আবার আলাদা হয়ে থাকতে হচ্ছে। ছোট একটা দুর্ঘটনা কেন সব এলোমেলো করে দিচ্ছে। এমন সব ভাবতে গিয়ে সাথী আবার নীল খামের দিকে তাকায়। সে নীল কলমে নীল বেদনাগুলো লেখা শুরু করে।

প্রিয় সজল,

তুমি কেমন আছো জানি। শুধু জানি না কেন তুমি দূরে আছো। কেন তুমি চাওনা আমি তোমার কাছে থাকি। তোমায় নিয়ে সুখের একটা সংসার করি। কেন তুমি নিজেকে আড়াল করে রাখো। তোমার কাজ, তোমার সারাদিনের ব্যস্ততা তোমায় কি আমার থেকে দূরে রাখে, নাকি শুধুই তোমার ইচ্ছের অভাব। সারাদিনের ব্যস্ততা শেষে বাসায় ফিরে ক্লান্ত যখন তোমার শরীর খাটে শুয়ে পরে তখনও কি একবারের জন্য আমার কথা স্মরণে আসেনা তোমার।

তোমার সাথে শেষ কবে কথা হয়েছে ঠিক মনে নেই। কথা বলতে মনের কথা, ভালো লাগা, ভালোবাসার কথা। বিশেষ কোন প্রয়োজনে তুমি কল দেও আর ঐ একটা বা দুইটা কথাই তোমার ফোন কলের দৈর্ঘ্য। একবারের জন্যও জানতে চাওনা আমি কেমন আছি? আমি কেমন করে তোমায় ছাড়া থাকি। কখন জানার প্রয়োজন মনে করো না।

আমি কি ভুল করেছে? কেন আমার সাথে এমন করো। সবার পছন্দে, সবাইকে নিয়েই তো আমাদের বিয়ে, আমাদের সংসার জীবনের যাত্রা। ভালোই তো চলছিলো আমাদের সুখের ছোট সংসার। আমার পড়ার ফাঁকে, তোমার কাজের শেষে জোসনা রাতে দূর আকাশের চাঁদের আলোয় খোলা ছাদে কতো কথা হতো। চাঁদের আলোয় তুমি আমার দিকে তাকিয়ে কতো বার বলতে প্রিয়তমা, 'তুমি আমার জীবনে এই চাঁদের মতো। তোমার আলোয় আমার জীবন আলোকিত। এই আলোয় দেহ দগ্ধ হবার তাপ নেই, নেই ঝলসে যাবার কোন ভয়। এ আলো দেয় প্রেমের উষ্ণতা, দেহ-মনকে করে শিহরিত।' এমন কতো কথা।

কিন্তু আজ তুমি সব ভুলে কেমন করে থাকো আমায় ছাড়া। আজ কি তোমার শিহরিত হতে ইচ্ছে করে না? ইচ্ছে করে আবার কোন জোসনা রাতে ঝিরঝির বাতাসে এক কাপ কফিতে দু'জনে চুমুক দিতে দিতে সুখের স্বপ্ন দেখতে। একটা সুন্দর সংসার গড়তে, যেখানে তুমি আমি আর আমাদের প্রেমের ফসল ফুটফুটে একটা বাবু ঘরের এ কোণ থেকে ও কোণে দৌড়ে বেড়াবে। এমন কোন ভাবনা কি তোমার মনে আর আসে না। আমি কিন্তু প্রতি মুহুর্তে এমন স্বপ্নে আজও বিভোর থাকি।

আমি স্বপ্নে কি জাগরণে সব সময় তোমায় নিয়ে ভাবি। তোমার ভাবনা আমার সমস্ত অস্তিত্ব জুড়ে। আমি চাই তুমিই থাকো আমার জীবনসঙ্গী হয়ে, আমার ভালোবাসার দুনিয়ায় তোমাকে ছাড়া আর কাউকে চাই না। তুমি কি বুঝতে পারো না আমাকে? মানুষের জীবনে নানান ধরনের বাঁধা আসতে পারে, বিপদ হতে পারে, কতো ঘাতপ্রতিঘাতেও তো মানুষ টিকে থাকে। একটা দুর্ঘটনা কি একটা সম্পর্কে শেষ করে দিতে পারে। ঝড়ের রাতে তো কতো গাছ ভেঙ্গে পারে তাই বলে কি বাগান শুণ্য থাকে। সেখানে তো নতুন করে আবার সৃষ্টি হয় গাছের, বাগানের। তেমনি করে সব ভুলে গিয়ে কি আবার এক হতে পারিনা আমরা।

তোমাকে এতো কথা বলেই বা লাভ কি? তুমি তো মনে করো তোমার অবহেলায় হয়তো আমি অন্য কোথাও যত্ন পাবার স্বপ্নে বিভোর,,,,,,

(৩)

হঠাৎ করেই কলম থেমে গেল সাথীর। আসলেই কি সে অন্য কারো যত্নের স্বপ্নে বিভোর? এমন ভাবনায় মনে পরলো শাওনের কথা।

শাওনের সাথে সাথীর পরিচয় কোন একটা স্বনামধন্য এনজিওতে ভাইভা দেয়ার সূত্রে। সাথীকে দেখে শাওন অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো অনেক সময়। কি ভাবছিলো শাওন তখন এটা মনে করতেই সাথী চোখ স্পর্শ করে। আসলেই কি সাথীর চোখ এতো সুন্দর। শাওন বড় কর্মকর্তা। কাজের কতো ব্যস্ততা। সাথে স্ত্রী, সন্তানের দেখাশোনা কতো কি করতে হয় তাকে। এরমধ্যেও সাথীকে নিয়মিত ফোন করে। নানান ধরনের খোঁজ খবর নেয়। প্রথম যেদিন ফোন কলে কথা হয় সেই স্মৃতি মনে করে সাথী কেমন যেন আনমনে হয়ে গেলো। ফোন করে কি সুন্দর করে সাথীর চোখের, চুলের প্রশংসায় বিভোর করে দিলো। জীবনানন্দে কবিতা কোট করে শাওন বলতেছিলো, 'চুল তার কবে কার অন্ধকার নিশা, মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য। ' 'পাখির বাসার মতো দু'টি চোখ তোমার, ঠিক যেন নাটরের বনলতা সেন।' 

সাথীর খুব হাসি পায়। শাওনকে বলে আপনার কি হয়েছে? আমাকে ইমপ্রেস করতে কি সব আবোলতাবোল বকছেন। সাথীর হাসি থামিয়ে দিয়ে শাওন বললো আবোলতাবোল নয়, আমি তোমার চাহনির মায়ায় পরেছি। তোমার মায়ায় ভরা চোখ, গোলাপফোটা ঠোঁটের হাসি আমায় মুগ্ধ করেছে। আমি তোমাতে হারিয়ে যাচ্ছি।

কথাগুলো ভালো লাগে সাথীর। সাথী মনে মনে ভাবতে থাকে কতো সুন্দর করে কথা বলছে শাওন। একজন মানুষ এতো সুন্দর করে মানুষকে হাসাতে পারে, খুশি করতে পারে তা শাওনের সাথে কথা না হলে জানা হতো না সাথীর। তাই নিয়মিত কথা হতে থাকে দু'জনের। কখনো কাজের ফাঁকে, কখনো রাতের আধাঁরে নিঝুম নিস্তব্ধ ক্ষণে সারারাত্রি কথা হতে থাকে। দু'জনার ভালো লাগা, মন্দ লাগা, মনের মাঝে লুকিয়ে থাকা চাপা বেদনারা বের হতে থাকে শাওন সাথীর ফোনালাপ জুড়ে। ভালোবেসে ফেলে হয়ত দু'জন দু'জনকে কিন্তু কেউ মুখ ফুটে কিছু বলতে পারেনা। সময়ের বাস্তবতায় সব কথা বলা যায় না। অনেক কথা বুকের মাঝেই চাপা রাখতে হয়, নিজের ভালো থাকার জন্য কিংবা অন্যকে ভালো রাখার জন্য।

সাথী আবার ফিরে যায় কলেজের সেই সুখময় স্মৃতিতে। সবুজ সাথী কি সুন্দর নামের মিল। বিধাতা মনে হয় এক সাথে থাকার জন্যই সৃষ্টি করেছে। কিন্তু একসাথে থাকা হয়নি বেশি দিন। কিন্তু সজলকে তো সারা জীবনের জন্য চাই। সারাজীবনের সঙ্গী হিসাবেই তো সজল আমার জীবনে আসল বিয়ে করে। তবু কেন একসাথে থাকতে পারছিনা। একটা সুখের সংসার হচ্ছে না। আমি তো চাই সজলকে নিয়েই বাকি জীবনটা পারি দিতে। সাথী এমন সব ভাবতে ভাবতেই নীল খামের দিকে তাকিয়ে লিখতে শুরু করে তার বেদনার নীল কথা।

প্রিয় শাওন,

অনেক দিন থেকেই ভাবছি একটা কথা বলবো কিন্তু কখনো বলা হয়নি। বলতে পারো সাহস হয়নি। হয়তো কখনো বলাও হবে না যে, আমি তোমাকে ভালোবাসি। তোমার ভালো লাগায়, মন্দ লাগায়, তোমার যত্নে, ভালোবাসায় আমি মুগ্ধ। নিজের অজান্তে তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি। জানি তুমিও আমাকে ভালোবাসো কিন্তু তোমার বাস্তববাদী চিন্তার জগতে শত যন্ত্রণা বুকে নিয়ে বেঁচে থাকলেও সংসার রেখে অন্য মেয়ের জীবনে আসতে চাইবেনা। তুমি আমার জীবনে আসো তা আমিও চাইনা। কারন আমিও চাই আমার সজলের সাথেই জীবন পার করি। কিন্তু তার অবহেলা আমায় কষ্ট দেয়। আমায় হৃদয়কে প্রতিনিয়ত ক্ষতবিক্ষত করে দেয়। আমি কি করব বুঝতে পারিনা।

শাওন, তোমার কেয়ারিং, তোমার রোমান্টিকতা আমায় টানে কিন্তু তোমার কাছে যাবো সেই সুযোগও তুমি রাখনি। তুমি এমনই এক সময় আমার জীবনে এসেছো যখন না পারো আমায় গ্রহণ করতে, না পারি আমি তোমার জীবনে যেতে। কেমন এক শাঁখেরকরাতে ফেলে দিলে আমায়। আমি আজ অসহায়। আমার জীবনে কোন সুখ স্থায়ী হতে চায় না। জানিনা আমার জীবনে কি হবে। আজ সব ছেড়ে দিয়েছি বিধাতার হাতে। দেখি তিনি আমায় কি জন্য কি রেখেছেন শেষ পর্যন্ত।

আচ্ছা এতো কথা কেন তোমাকে বলছি। তোমাকে নিয়ে কেন এতো স্বপ্ন দেখি। তুমি তো আমার হবে না বলেই দিয়েছো, আমিও যে বলিনি তা নয়। আমরা তো দু'জনেই চাইনা দু'জনের হতে তবু কেন ভালোবাসি, কেন কাছে আসার স্বপ্নে বিভোর। দিনেরাতে, ক্ষণে ক্ষণে তোমায় ভাবি। জানিনা কেন এমন হলো আমার। দিন কাটে তো রাত কাটেনা, রাত কাটে তো ভোরের সূর্য দেখিনা। এমন কেন হলো বলতে পারো শাওন,,,,,,

সাথী আর ভাবতে পারছে না। কেন লিখছে এই চিঠিগুলো। কারও কাছে তো পাঠানো হবে না কোন একটা চিঠি। তবুও কেন এতো কথা লিখে রাখা। বেদনার নীল আকাশে নীল রঙের কালিতে লেখা চিঠি নীল খামের ভিতর লুকিয়ে কেঁদে যাবে চিরদিন। কারো মনের আকাশে একবিন্দু জায়গা হবে না এই কথাগুলোর।  এমন ভাবতে ভাবতে চোখের দু'ফোটা জল গড়িয়ে পরলো হাতের কলমে আর মনে বেজে উঠলো সেই সুর, 'না, না কিচ্ছু চাইনি আমি আজীবন ভালোবাসা ছাড়া, আমিও তাদেরই দলে বারবার মরে যায় যারা'।

নীল খামে বেদনার চিঠি 

-- মোঃ হেলাল উদ্দিন

Sunday, November 20, 2022

কল্পিত নবান্নে -- মোঃ হেলাল উদ্দিন

আজ নবান্নের দিনে তোমার হাতের সুস্বাদু খাবারে মনটা বেশ ভরে গেলো। মনে হলো কতোদিন পেটপুরে এমন খাবার খাইনি। আসলেই তাই ইট-পাথরের এই শহরে একা আমার বাস। বুয়ার রান্নায় কেটে যায় দিন মাস। মাঝে মাঝে নিজেকেও রান্নাঘরে যেতে হয়। এই দুই রান্নায় আর যাইহোক তোমার হাতের এমন স্বাদ পাওয়া যায় না। ষড়ঋতুর বাংলাদেশে নবান্ন এখন বইয়ের পাতায় আর শহরের যান্ত্রিকতায় তা কখন আসে, কখন যায় মনে রাখা দায়। লোকারণ্য এই শহরের ভিড়ে তুমি একমাত্র আমার আপন জন। আমার প্রতিদিনকার খোঁজ নেয়ার মানুষ। সকালে তোমার ডাকে ঘুম ভাঙে, যদিও সেই ডাক মোবাইল ফোনে। আমি কি খেলাম, কোথায় গেলাম, মন ভালো কিনা, পড়াশোনা কেমন চলে কোন খবরই তোমার অজানার বাইরে থাকেনা। মনে হয় যেন তুমি আমার সাথেই থাকো সবটুকু সময়। আজ তুমি নিজ হাতে রান্না করেছো। সচরাচর তুমি রান্না করো না, করতে হয় না। আজ তুমি একা, বাসায় তোমার রাজ্য। রান্না করতে করতে আমায় বললে চলে এসো দুপুর, আমার হাতে তোমায় খাইয়ে সারা বিকেল ঘুরবো। এমন মধুর আমন্ত্রণ পেয়ে ছুটে আসলাম তোমার দ্বারে। তোমায় কাছে পাবার আনন্দে বসন্তের বাতাস হৃদয় ছুয়ে গেল, সাথে বাহারি রান্নার আয়োজন ভুলিয়ে দিলো সারা বছরের ভালোমন্দ না খাবার প্রয়োজন। পড়ন্ত বিকেলে তুমি নীল শাড়িতে দাঁড়ালে আমার সামনে। বললে চলো ঘুরে আসি কোন সবুজ প্রান্তে। হাত বাড়িয়ে তোমার হাতে বেরিয়ে পরলাম পথের পানে। তোমার হাতে হাত রেখে রিক্সায় চড়ে পথ চলতে চলতে মনের মাঝে একটাই সুর ভেসে যাচ্ছিলো, 'তোমার ইচ্ছেগুলো ইচ্ছে হলে আমায় দিতে পারো, আমার ভালো লাগা ভালোবাসা তোমায় দিবো আরো।' তোমায় নীল শাড়ি আর নীল টিপে দারুণ লাগে। খোলাচুলে তুমি যখন বাতাসের বিপরীতে দাড়িয়ে ডাগড় চোখে আমার পানে তাকাও, তখন আমার মনে হয় এই তোমার জন্যই হাজার বছর বেঁচে থাকতে হবে। তোমাকে ভালোবাসতে হবে আমৃত্যু। তোমাকে আমার করে রাখতে হবে। মরণের পরেও তোমায় যেন পাই এই প্রার্থনা করে যাই সৃষ্টিকর্তার কাছে। মনের মাঝে এমন হাজারো ভাবনার মধ্যেই তোমার ধাক্কায় ফিরে তাকালাম। চেয়ে দেখি তুমি পাশে নেই। আমি একা বসে কংক্রিটের এক রুমে।
 
 
 কল্পিত নবান্নে -- মোঃ হেলাল উদ্দিন
 

Friday, March 18, 2022

আবদ্ধ -- মোঃ হেলাল উদ্দিন

 

কোথাও আলো বাতাস নেই এমন একটা বদ্ধ ঘরে হাত মুখ বাঁধা অবস্থায় বসে আছে সুনয়না। বসে আছে বললে ভুল হবে জোড় করে তুলে এনে বসিয়ে রাখা হয়েছে। শেষ বিকালে সুনয়না যখন বাড়ির পাশের সবুজ মাঠে একলা মনে পায়চারি করছিলো তখন পিছন থেকে কে যেন চোখ বেঁধে তুলে নিয়ে এসেছে। এরপরে যখন চোখ খুলে দেয়া হলো তখন অন্ধকারের মধ্যে নিজেকে আবিষ্কার করলো। কোথায় আছে, কয়টা বাজে কিছুই অনুমান করতে পারছেনা। এমন অবস্থায় ভয়ে কান্না শুরু করে দিলো, কিন্তু চোখের জল গড়িয়ে পড়লেও শব্দ কেউ শুনতে পাবার সুযোগ ছিলো না। আপ্রাণ চেষ্টা করতে ছিলো চিৎকার করতে কিন্তু এর মধ্যে নিয়নের আলো চোখে এসে পড়লো। ভয়ে ভয়ে তাকিয়ে দেখে সামনে রায়হান দাঁড়িয়ে। রায়হানকে দেখে মনে সাহস হলো কিন্তু তার কথা শুনে ভয়ে আবার কুকড়ে গেলো। রায়হান শুধু বলে চলছে ভয় পেয়েও না, তোমার কোন ক্ষতি করবো না। ভয় পেয়েও না সুনয়না। সুনয়না কান্না করে চলছে আর বাঁধন খোলার চেষ্টা করছে, কিন্তু কোন লাভ হচ্ছে না। রায়হান শুধু বলে যাচ্ছে, ভয় পেয়েও না তুমি। তোমার কোন ক্ষতি করবো না। শুধু নয়ন ভরে তোমাকে দেখার জন্য, তোমার সাথে সারাক্ষণ কথা বলার জন্য নিয়ে এসেছি। রায়হান কথা বলতে বলতে সুনয়নার মুখের বাঁধন খুলে দিলে সে জোড়ে চিৎকার করে। চিৎকারের শব্দে সুনয়নার ঘুম ভেঙে যায়। ভয়ে তখনও শরীর কাঁপছে, শীতের মধ্যেও কপালে ঘাম জমেছে।

অনেকক্ষণ বিছানায় বসে থেকে স্থির হয়ে আস্তে আস্তে বিছানা থেকে নেমে কিচেনে চলে গেলো। প্রচন্ড চায়ের তৃষ্ণা পেয়েছে তার। সুনয়না সাধারণত আটটার আগে ঘুম থেকে উঠে না। আর চা নিজে বানিয়ে খাবে তাতো ভাবাই যায় না। কিন্তু আজ সে নিজ হাতে এক মগ চা বানিয়ে গায়ে চাঁদর জড়িয়ে বারান্দায় চলে যায়। গত রমজানের পরে এমন সকাল তার দেখা হয়নি। তাই শীতের হালকা কুয়াশাচ্ছান্ন সকালের প্রকৃতি দেখছে। কেমন করে কুয়াশা ভেদ করে প্রথম সূর্যটা তার রক্তিম আলোয় ঘাসের ডগায় জমে থাকা শিশির বিন্দুকে মাটির বুকে ফেলে দিচ্ছে, নামাজ শেষে মুসুল্লিরা যে যার বাসায় ফিরছেন, কুয়াশার চাদর মুড়িয়ে খেটে খাওয়া মানুষগুলো কাজে বেড়িয়ে যাচ্ছে, তাদের দেখে রাস্তায় হাঁটতে থাকা দুয়েকটি কুকুর ঘেঁঊ ঘেঁঊ করছে। সুনয়না চায়ে চুমুক দিতে দিতে এই সব দেখছে আর ভাবছে তার স্বপ্নের কথা। স্বপ্নের কথা ভাবতেই শরীর শিহরিয়ে উঠছে। কেন এমন স্বপ্ন দেখলো? রায়হানের সাথে তো তার ভালো একটা সম্পর্ক। রাগ তো দূরের কথা তার সাথে রায়হান তো কখনো কোন কথা নিয়েও বাড়াবাড়ি করেনা। কিন্তু এমন স্বপ্ন কেন দেখলাম? এই কথা ভাবতে ভাবতে তার দাদীর কথা মনে পড়ে গেলো। দাদীর কাছে কোন স্বপ্নের কথা বলতে গেলেই বলে, স্বপ্ন তো স্বপ্নই । এ নিয়ে ভাবনার কিছুই নেই। সুনয়না এই সব ভাবছে আর সূর্যের সোনালী আলো গাছের ফাঁক দিয়ে কুয়াশা ভেদ করে তার চোখে এসে পড়তেই মোবাইলের ট্যুং ট্যুং শব্দ বেঁজে উঠলো। শব্দ শুনে সুনয়না বারান্দা থেকে রুমে চলে আসলো। মোবাইলটা হাতে নিয়ে দেখে রায়হানের টেক্সট, গুড মর্নিং। চায়ের কাপটা টেবিলে রেখে গুড মর্নিং রিপ্লাই দিতে দিতে বিছানায় শুয়ে পরলো। অন্যদিন হলে সুনয়না আর কোন রিপ্লাই দিতো না, কিন্তু আজ আবার রিপ্লাই দিলো, ঘুম কি শেষ?

রায়হানঃ হুম। তোমার?

সুনয়নাঃ আমার অনেক আগেই ঘুম ভেঙ্গেছে, আর ঘুম হয়নি।

রায়হানঃ কেন? কি হয়েছে।

সুনয়নাঃ অনেক ভয়ংকর একটা স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙ্গে গেলো, আর ঘুমাতে পারিনি।

রায়হানঃ কি এমন স্বপ্ন? বলো।

সুনয়নাঃ থাক, পরে বলি।

রায়হানঃ আচ্ছা। ঘুমানোর চেষ্টা করো।

রায়হান কখনোই জোড় করেনা। সুনয়না যা বলে তাই মেনে নেয়। আজও তাই করলো। কিন্তু সুনয়নার ঘুম আর আসছে না। সে ভাবছে কেন এমন স্বপ্ন দেখলাম। রায়হানকে তো অনেক দিন থেকেই চিনি, অনেক দিন থেকেই কথা হয় নিয়মিত, কিন্তু কখনো তো কোন খারাপ আচরণ করেনি, এমন কি একটা খারাপ কথাও বলেনি। আমিও তো কখনো ওর সাথে কোন খারাপ ব্যবহার করিনি। তাহলে এমন স্বপ্ন কেন? তাহলে কি রায়হান তাকে অনেক বেশি কাছে চায়? তাই এতো ভয়ংকর হয়ে উঠেছে। আর ভাবতে পারছে না। রায়হান যে সুনয়নাকে পছন্দ করে, অনেক ভালোবাসে তা সে বুঝতে পারে। আল্লাহ মেয়েদের এই একটা অলৌকিক ক্ষমতা দিয়েছেন। মেয়েরা যে কোন ছেলের চোখের ভাষা খুব সহজেই বুঝতে পারে। সুনয়নাও বুঝতে পারে, কিন্তু রায়হান তো কখনো বলেনি যে, সুনয়না আমি তোমাকে ভালোবাসি কিংবা তুমি কি আমাকে ভালোবাসো? তবে রায়হানের এই কথা বলার আকুলতা, দেখা করার ব্যাকুলতা, দেখা হলে চোখের পানে অপলক তাকিয়ে থাকা বেশ ভালোই লাগে সুনয়নার। আসলে প্রত্যেকটা মেয়েই চায় কেউ তার জন্য অপেক্ষা করুক, তার চোখে তাকিয়ে রুপের-গুণের প্রশংসা করুক। সুনয়না অন্য সকলের চেয়ে আলাদা হলেও রায়হানের বিষয়টা তার কাছে ভালো লাগে। রায়হানের সাথে দেখা হলেই সেই চোখের দিকে তাকিয়ে থাকা, আবার তাকাতে না করলে রাগে মুখ গোমড়া করে থাকা, অন্য দিকে তাকিয়ে এক নিঃশ্বাসে বলে যাওয়া, দেখো আমি তোমার চোখের মাঝে ভরসা খুঁজে পাই। তোমার কথা আমাকে পথ চলতে সাহায্য করে, আমাকে স্বপ্ন দেখায়। তুমি পাশে থাকলে আমি সফল হতে পারবো। এই সব ভাবতে ভাবতে সুনয়না ঘুমিয়ে পড়ে।

মায়ের ডাকে যখন ঘুম ভাংগে তখন বেলা গড়িয়ে দুপুর। মা একটু রাগ করেই বলে এতো ঘুমালে হবে? গোসল, খাওয়া লাগবে না? সুনয়না মাকে ঝড়িয়ে ধরে। মা বাবার বড়ই আদরের মেয়ে সুনয়না। সবাই যখন অফিস নিয়ে ব্যস্ত তখন সুনয়নাই মায়ের সব সময়ের সঙ্গী। কলেজে আসা যাওয়া আর ক্লাসের সময়টুকু বাদে সব সময়ই মা বাবার সাথে কাটে সুনয়নার।

শীতের দুপুর তবে আকাশে ঝলমলে রোদ ছিলো। তাড়াতাড়ি গোসল করে সুনয়না মোবাইলটা হাতে নিয়ে বারান্দার রোদে বসে। ডাটা অন করতেই রায়হানের অনেকগুলো টেক্সট আসে। টেক্সটগুলো দেখলো কিন্তু রিপ্লাই দিলো না। পেটে ক্ষুধারা তাড়া দিচ্ছে। সেই সকালে এক মগ চা ছাড়া আর কিছুই খাওয়া হয়নি। ঐদিকে আবার খাবার টেবিল থেকে সুনয়নার প্রিয় কাচ্চি বিরিয়ানীর ঘ্রাণে আর অপেক্ষা সহ্য হচ্ছিলো না, তাই দ্রুত খাবার টেবিলে চলে যায়। আজ বন্ধের দিন, সবাই বাসায়। তাই মায়ের এই আয়োজন। টমেটো, গাঁজর, শশার সালাদের সাথে সুনয়নার নিজ হাতে তৈরী করে রাখা জলপাইয়ের আচারে মন ভরে খেয়ে নিলো দুপুরের খাবার। অনেক দিন পরে সবাই খাবার টেবিলে এক সাথে অনেক্ষণ আড্ডা শেষে সুনয়না রুমে চলে যায়।

সারাদিনে রায়হান আর কোন টেক্সট করেনি। রাতে মোবাইলটা হাতে নিয়ে সুনয়না ইউটিউবে মুভি দেখতেছে এরমধ্যে রায়হানের টেক্সট, রাতে বাড়িতে যাচ্ছি। অনেক দিন তোমার সাথে কথা হবে না, দেখা হবে না। খুব মিস করবো। সুনয়না রিপ্লাই দিলো, সমস্যা নেই। আসলে তো কথা হবে, দেখা হবে। মাঝে মাঝেই রায়হান দশ পনের দিনের জন্য এমন করে চলে যায়। সুযোগ হলে টেক্সট করে, তবে বেশি কথা হয় না। রায়হানের সবাই গ্রামে থাকে। গ্রামটা এমন যে, বিদ্যুত ঠিক মতো থাকে না, মোবাইলে ভালো নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না। রায়হান সবাইকে ছেড়ে শহরে আছে উচ্চ শিক্ষা আর ভালো একটা ক্যারিয়ারের জন্য। তা-না হলে সেও শহরে থাকতো না। শহরের এই যান্ত্রিক জীবন, অপরিচিত মানুষ, চারিদিকে হর্ণ তার ভালো লাগে না। তবে সুনয়না জানে যেখানে থাকুক একটু সময়ের জন্য হলেও রায়হান তার সাথে কথা বলবে। তাই তারা এই প্রসংগ বাদ দিয়ে নিত্য দিনের মতো তাদের অন্যান্য কথাবার্তা বলে মোবাইল রেখে দিলো।

প্রায় পনের দিন পরে রায়হানের টেক্সট, কেমন আছো? সুনয়না রিপ্লাই দিলো, ভালো। তুমি?

          রায়হানঃ ভালো। চলে আসলাম। অনেক দিন কথা হয় না, দেখা হয় না কতো দিন।

          সুনয়নাঃ হুম, অনেক দিন।

          রায়হানঃ চলো, কালকে দেখা করি।

দেখা করার কথা বলতেই সুনয়নার সেই স্বপ্নের কথা মনে পড়ে গেলো। দেখা করতে গেলে যদি এমন কিছু হয়? না থাক। দেখা করার দরকার নেই। কথায় আছেনা যে, বনের বাঘে খায় না, খায় মনের বাঘে। সুনয়নারও সেই অবস্থা হয়েছে। দু’জন দু’জনকে ভালোবাসি কথাটা না বললেও কেউ কাউকে ছাড়া বেশি দিন দূরে থাকতে পারেনা। দু’জনের প্রতি দু’জনের অগাধ বিশ্বাস আছে। সুনয়নার ইচ্ছে করে দেখা করতে কিন্তু স্বপ্নের ভয়ে সে চুপ করে থাকে। কোন রিপ্লাই দেয় না। অনেকক্ষণ পরে রায়হানের টেক্সট, কেন?

          সুনয়নাঃ সেদিন বলেছিলাম না যে একটা ভয়ংকর স্বপ্ন দেখেছি, তাই।

          রায়হানঃ আচ্ছা মনে পড়েছে। কিন্তু স্বপ্নটা কি? বলা যাবে।

          সুনয়নাঃ বলা যাবে। কিন্তু মনে করলেই তো ভয় লাগে।

          রায়হানঃ এতো ভয়ংকর?

          সুনয়নাঃ হুম। অনেক ভয় পেয়েছি সেই দিন। এমন সবপ্ন কখনো ভুলতে পারবো না।

          রায়হানঃ আচ্ছা, শুনি। স্বপ্নটা কি?

          সুনয়নাঃ আচ্ছা বলছি। স্বপ্নে দেখলাম তুমি আমাকে হাত-মুখ বেঁধে জোড় করে তুলে নিয়ে একটা ঘরে আটকে রেখেছো। আমি ভয়ে কাঁপছি, কান্না করছি আর তুমি শুধু বলে যাচ্ছো ভয় পেয়ও না সুনয়না। আমি তোমার কোন ক্ষতি করবো না। আমি শুধু তোমার চোখের পানে তাকিয়ে থাকবো। নয়ন ভরে তোমাকে দেখবো, মনের যতো কথা বলবো। তুমি কান্না করো না সুনয়না, তোমার কোন ভয় নেই। কিন্তু আমি কান্না করেই যাচ্ছি। কান্না করতে করতেই আমার ঘুম ভেংগে গেলো।

          রায়হানঃ ভয়ের কি আসে সুনয়না? সুন্দর স্বপ্ন দেখেছো। সত্যিই তো তোমাকে যদি এমন করে হলেও নিয়ে আসতে পারতাম কতো ভালো হতো। সারাক্ষণ তোমাকে দেখতে পারতাম। তোমার নয়ন পানে তাকিয়ে মনের সকল কথা বলতে পারতাম। সব সময়ের জন্য তোমাকে কাছে পেতাম।

টেক্সটা দেখে সুনয়না আর কোন রিপ্লাই দিতে পারলো না। ভয়ে হাত পা কাঁপছে। তাই কোন রিপ্লাই না দিয়ে মোবাইলটা রেখেই সুনয়না চোখ বুঝলো।

 

    আবদ্ধ 

-- মোঃ হেলাল উদ্দিন