আজ
নবান্নের দিনে তোমার হাতের সুস্বাদু খাবারে মনটা বেশ ভরে গেলো। মনে হলো
কতোদিন পেটপুরে এমন খাবার খাইনি। আসলেই তাই ইট-পাথরের এই শহরে একা আমার
বাস। বুয়ার রান্নায় কেটে যায় দিন মাস। মাঝে মাঝে নিজেকেও রান্নাঘরে যেতে
হয়। এই দুই রান্নায় আর যাইহোক তোমার হাতের এমন স্বাদ পাওয়া যায় না। ষড়ঋতুর
বাংলাদেশে নবান্ন এখন বইয়ের পাতায় আর শহরের যান্ত্রিকতায় তা কখন আসে, কখন
যায় মনে রাখা দায়। লোকারণ্য এই শহরের ভিড়ে তুমি একমাত্র আমার আপন জন। আমার
প্রতিদিনকার খোঁজ নেয়ার মানুষ। সকালে তোমার ডাকে ঘুম ভাঙে, যদিও সেই ডাক
মোবাইল ফোনে। আমি কি খেলাম, কোথায় গেলাম, মন ভালো কিনা, পড়াশোনা কেমন চলে
কোন খবরই তোমার অজানার বাইরে থাকেনা। মনে হয় যেন তুমি আমার সাথেই থাকো
সবটুকু সময়।
আজ তুমি নিজ হাতে রান্না করেছো। সচরাচর তুমি রান্না করো না, করতে হয় না। আজ
তুমি একা, বাসায় তোমার রাজ্য। রান্না করতে করতে আমায় বললে চলে এসো দুপুর,
আমার হাতে তোমায় খাইয়ে সারা বিকেল ঘুরবো। এমন মধুর আমন্ত্রণ পেয়ে ছুটে
আসলাম তোমার দ্বারে। তোমায় কাছে পাবার আনন্দে বসন্তের বাতাস হৃদয় ছুয়ে গেল,
সাথে বাহারি রান্নার আয়োজন ভুলিয়ে দিলো সারা বছরের ভালোমন্দ না খাবার
প্রয়োজন।
পড়ন্ত বিকেলে তুমি নীল শাড়িতে দাঁড়ালে আমার সামনে। বললে চলো ঘুরে আসি কোন
সবুজ প্রান্তে। হাত বাড়িয়ে তোমার হাতে বেরিয়ে পরলাম পথের পানে। তোমার হাতে
হাত রেখে রিক্সায় চড়ে পথ চলতে চলতে মনের মাঝে একটাই সুর ভেসে যাচ্ছিলো,
'তোমার ইচ্ছেগুলো ইচ্ছে হলে আমায় দিতে পারো, আমার ভালো লাগা ভালোবাসা তোমায়
দিবো আরো।'
তোমায় নীল শাড়ি আর নীল টিপে দারুণ লাগে। খোলাচুলে তুমি যখন বাতাসের বিপরীতে
দাড়িয়ে ডাগড় চোখে আমার পানে তাকাও, তখন আমার মনে হয় এই তোমার জন্যই হাজার
বছর বেঁচে থাকতে হবে। তোমাকে ভালোবাসতে হবে আমৃত্যু। তোমাকে আমার করে রাখতে
হবে। মরণের পরেও তোমায় যেন পাই এই প্রার্থনা করে যাই সৃষ্টিকর্তার কাছে।
মনের মাঝে এমন হাজারো ভাবনার মধ্যেই তোমার ধাক্কায় ফিরে তাকালাম। চেয়ে দেখি
তুমি পাশে নেই। আমি একা বসে কংক্রিটের এক রুমে।
কল্পিত নবান্নে -- মোঃ হেলাল উদ্দিন
No comments:
Post a Comment