বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশঃ আমাদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি
মোঃ হেলাল উদ্দিন
প্রবন্ধটি শুরু করতে চাই গবেষক হোসেন জিল্লুর রহমানের একটি উক্তি দিয়ে, Freedom made us aspirational. Now, time to reap high-hanging fruits. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যার জন্ম ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ টুঙ্গিপাড়ায়। ছোটবেলার খোকা- আজকের বঙ্গবন্ধু একটি নাম, একটি ছাত্র সংগঠন, একটি রাজনৈতিক দল, একটি সমাজ, একটি বাংলাদেশ। জাতিয়তাবাদী আন্দোলনের পথিকৃত, স্বাধীকার আদায়ের অগ্রপথিক বঙ্গবন্ধুর ডাকে সারা দিয়ে বাঙ্গালী জনতা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে মাত্র নয় মাসের মধ্যে বিশ্বের মানচিত্র স্বাধীন বাংলাদেশের স্থান নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়। সেদিন যদি বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ডাক না দিতেন হয়তো আজও আমরা পরাধীন জাতি হিসাবে থেকে যেতাম। তাই স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস পড়তে গিয়ে আমার কাছে মনে হয়েছে, বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ আলাদা কোন শব্দ নয়, এটি একটি এক ও অভিন্ন শব্দ।
১৯৪৭ সালে ভারতীয় উপমহাদেশ ভেঙ্গে ভারত এবং পাকিস্তান নামে স্বাধীন দুইটি রাষ্ট্রের সৃষ্টি হলেও মাত্র ২৫ বছর পরে কেন বাংলাদেশ নামের একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের সৃষ্টি হলো তা একটু বিশ্লেষণ করা দরকার। ১৯৪৭ সালে যে পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্ট হয় তার স্বরুপ ও সমস্যাবলি যদি দেখি তাহলে দেখতে পাই, হাজার মাইলের দূরত্বে মধ্যখানে ভারতীয় ভূখন্ড দ্বারা বিভক্ত পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান নামে দুইটি অংশ নিয়ে গঠিত একটি রাষ্ট্র যার মধ্য শুধু ধর্মের মিল ছাড়া জলবায়ূ, সমাজ কাঠামো, ভাষা-সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্যের কোন মিল ছিলোনা। এছাড়া রাষ্ট্রের আদর্শ নির্ধারণ, বৈশিষ্ট্য স্থিরকরণ, সংবিধান রচনা, ভাষার প্রশ্ন প্রভৃতি কারনে দুই অংশের মধ্য শুরু থেকেই বিতর্কের সৃষ্টি হতে শুরু করে এবং শেষ পর্যন্ত স্বাধীন বাংলাদেশের সৃষ্টি হয়।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রওনক জাহান বলেন, “ভাষা, গণতন্ত্র, স্বায়ত্তশাসন, ধর্ম ও অর্থনৈতিক বৈষম্য—এই পাঁচ বিষয় ১৯৫০-এর দশকে আমাদের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ভাষ্যে প্রধান ভূমিকা রেখেছে। এসব ইস্যু ধারাবাহিকভাবে আমাদের পাকিস্তানি শাসকদের থেকে আলাদা করেছে এবং আমাদের জাতীয়তাবাদী সংগ্রামের মূল অ্যাজেন্ডা তৈরি করে দিয়েছে।” আর এই বিষয়গুলোই বাংলাদেশ সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে।
বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার প্রশ্নের বঙ্গবন্ধুর অবস্থান ছিল অনড়। বঙ্গবন্ধু ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’র ৯১ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, “আমরা দেখলাম, বিরাট ষড়যন্ত্র চলছে বাংলাকে বাদ দিয়ে রাষ্ট্রভাষা উর্দু করার। পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ ও তমুদ্দুন মজলিস এর প্রতিবাদ করল এবং দাবি করল, বাংলা ও উর্দু দুই ভাষাকেই রাষ্ট্রভাষা করতে হবে। আমরা সভা করে প্রতিবাদ শুরু করলাম। এই সময় পূর্ব পাকিস্তান মুসলীম ছাত্রলীগ ও তমদ্দুন মজলিস যুক্তভাবে সর্বদলীয় সভা আহ্বান করে একটা ‘রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন করল।” বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবী আদায়ে সফলতা বাঙ্গালীর ঐক্যবদ্ধতা প্রমাণ করে এবং পরবর্তীতে তাদের অন্যান্য দাবী আদায়ের শক্তিকে বৃদ্ধি করে।
আমাদের জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ত্বরান্বিত করার দ্বিতীয় বিষয়টি হলো গণতন্ত্রের দাবি। পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার ৫৪ শতাংশ বাঙালি হলেও দেখা যাচ্ছিল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছিল পশ্চিম পাকিস্তানের বেসামরিক-সামরিক আমলাদের একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠী। পাকিস্তানি শাসকদের নির্দেশে মুসলিম লীগ সরকার বাঙালিদের সব ন্যায্য দাবি উপেক্ষা করে চলছিল। বঙ্গবন্ধু তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে লিখেছেন, এ সময়ে তিনি বুঝতে পারলেন মুসলিম লীগের এই কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে একটি সংগঠিত বিরোধী দল গড়ে তুলতে হবে। সেই বোধ থেকেই ১৯৪৯ সালে আওয়ামী লীগের জন্ম হয়। বঙ্গবন্ধু প্রথমে দলের যুগ্ম সম্পাদক, পরে ১৯৫৩ সালে সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৬৬ সালে সভাপতি হন।
আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের দাবীও বাঙ্গালীকে ঐক্যবদ্ধ করতে সহায়তা করে। অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, তিনি আশা করেছিলেন লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানে দুটি মুসলিমপ্রধান রাষ্ট্র গঠিত হবে। ১৯৫০ সালেই আওয়ামী লীগ এক জাতীয় কনভেনশনে শাসনতন্ত্রের রূপরেখা প্রচার করে। সেখানে তারা পূর্ণ আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের দাবি জানায়, যেখানে কেন্দ্রের হাতে মাত্র দুটি বিষয়—প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্রনীতি থাকবে। এ ছাড়া সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়। আমরা ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দেলনে এই স্বায়ত্তশাসনের দাবিকে আরও বেশি জোরালো চেহারায় দেখতে পাই।
রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহারও পাকিস্তান হতে বাংলাদেশকে পৃথক করতে ভূমিকা পালন করে। কেননা বাঙ্গালীরা ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গঠনের পক্ষে ছিলো যার প্রমাণ পাওয়া যায় ১৯৪৯ সালে প্রথমে আওয়ামী মুসলিম লীগ নাম থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দেওয়া, আওয়ামী লীগ যুক্ত নির্বাচনের পক্ষে অবস্থান নেওয়া, এসব পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে বাঙালি একটি ধর্মনিরপেক্ষ পরিচয়ের দিকে ধাবিত হয়।
অর্থনৈতিক বৈষম্যের কারনেও পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের সৃষ্টির পথ তৈরি হয়। ১৯৫০–এর দশকের মধ্যভাগ থেকেই বাঙালি অর্থনীতিবিদেরা গবেষণা করে দেখাতে থাকেন কীভাবে পূর্ব পাকিস্তান অর্থনৈতিক শোষণের শিকার হচ্ছে এবং বাঙালির টাকায় কীভাবে পশ্চিম পাকিস্তানের অর্থনীতি ফুলে–ফেঁপে উঠছে। এই অর্থনৈতিক বৈষম্যের বিষয়টিও ছয় দফার ভিত্তি রচনা করে।
উল্ল্যেখিত বিষয়ের কারনে পাকিস্তান বিভক্তি নিশ্চিত হলেও ১৯৬৬ সালের ৬দফা কর্মসুচীর দিকে একটু দৃষ্টি দেই। কেননা এই ছয়দফাকে বাঙ্গালি মুক্তির সনদ কেন বলা হয় তা জানা দরকার বলে আমি মনে করি। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রওনক জাহান লিখেছেন, ১৯৬০-এর দশকজুড়ে পাকিস্তান সামরিক সরকারের অধীনে ছিল। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ বা সীমিত হয়েছিল। নেতাদের অনেকেই বেশির ভাগ সময় কারাগারে ছিলেন। তবে এর মধ্যেও বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলন সফলভাবে এগিয়ে যায়। রাজনীতিকেরা যখন কারাবন্দী, তখন শিক্ষাবিদ, অর্থনীতিবিদ, সুশীল সমাজ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের মানুষ প্রতিবাদী ভূমিকা রাখতে শুরু করেন। ১৯৬০-এর দশকের প্রথম থেকেই বঙ্গবন্ধুসহ কিছু তরুণ রাজনৈতিক নেতা–কর্মী পাকিস্তান থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠনের চিন্তা শুরু করেন। বলা যেতে পারে, ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধুর ছয় দফার দাবি পূর্ব বাংলাকে প্রায় স্বাধীন করার দাবি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুব রহমানের ভাষায়- “৬ দফা বাংলার শ্রমিক-কৃষক মুজুর-মধ্যবিত্ত তথা আপামর মানুষের মুক্তির সনদ, ৬ দফা শোষকের হাত থেকে শোষিতের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজোনৈতিক অধিকার ছিনিয়ে আনার হাতিয়ার, ৬ দফা মুসলিম-হিন্দু-খৃস্টান-বৌদ্ধদের নিয়ে বাঙ্গালী জাতির স্বকীয় মহিমায় আত্মপ্রকাশ আর আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনের চাবিকাঠি,,,, ৬ দফার সংগ্রাম আমাদের জীবন মরণের সংগ্রাম।”
সারা দেশে এই আন্দোলনের পেছনে ব্যাপক জনসমর্থন দেখে পাকিস্তান সরকার বুঝে ফেলেছিল যে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। তাই বঙ্গবন্ধুকে কারাবন্দী করা হয় এবং তাঁর বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দেওয়া হয়। এই নিবর্তনমূলক পদক্ষেপের কারণেই ১৯৬৯ সালের ছাত্র আন্দোলন অনিবার্য হয়ে ওঠে। সংগঠিত হয় গণঅভ্যুত্থান এবং পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। শুধু তাই-ই নয় আইউব খানের সামরিক শাসনের অবসনও ঘটে এই আন্দোলনে। ফলশ্রুতিতে জেনারেল ইয়াহিয়া ক্ষমতায় এসে ১৯৭০ সালে নির্বাচন দিতে রাজি হলেন।
১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনী ইশতেহার হিসাবে ৬ দফাকেই বেছে নেয় এবং ১৯৭০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু ৫৫ টি শহর, সকল জেলা ও মহকুমা সদর এবং ৪০০ থানায় জনসভা করেন। বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি ভাষণে বাঙ্গালী জাতির মুক্তির বিষয়ে সর্বাধিক গুরুতব আরোপ করেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচন এবং মুক্তিযুদ্ধের শুরু সম্পর্কে বলতে গিয়ে ভারতীয় উপমহাদেশের ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষক বিশেষজ্ঞ প্রিয়াজিৎ দেবশঙ্কর লিখেছেন, ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে পাকিস্তানে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, যা পাকিস্তানের সামরিক শাসনের ইতিহাসে একটি বিরল ও ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত ছিল এবং ৩০০টি নির্বাচনী এলাকার মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমানের আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের জনগণের অখণ্ডনীয় আদেশপত্রে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে ১৬২টি আসন লাভের মাধ্যমে জয় নিশ্চিত করে। কিন্তু পরাজিত পশ্চিম পাকিস্তান গণতন্ত্রের পথে একটি বাধা হয়ে দাঁড়ায় এবং ইচ্ছাকৃতভাবে স্বৈরাচার থেকে স্বায়ত্তশাসনের রূপান্তরকে বাধা দেয়। পশ্চিমারা তাদের উদ্দেশ্য পূরণের লক্ষ্যে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ ঢাকায় অপারেশন সার্চলাইট নামে একটি বর্বর নৃশংস গণহত্যার অভিযান চালায়, যেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরীহ শিক্ষার্থী ও শিক্ষাবিদদের গুম করা হয়। শিগগিরই শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে বন্দী অবস্থায় নির্বাসনে পাঠানো হয়। মিলিটারিদের কঠোর উচ্ছেদের কারণে লাখো মানুষ বাংলাদেশ থেকে ভারতে রিফিউজি হয়ে আশ্রয় নেয়।
১৯৭১ সালের মার্চ মাসের দিকে একটু নজর দেই। সংখ্যাগরিষ্ট দলের নেতা হিসাবে বঙ্গবন্ধুর হাতে পাকিস্তানি শাসন ক্ষমতা হস্তান্তর করার কথা থাকলেও ইয়াহ্ইয়া খান তাতে গড়িমসি শুরু করে। বঙ্গবন্ধুও ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে এক ভাষণের মাধ্যমে বাঙ্গালী জাতিকে মুক্তির সংগ্রামের প্রস্তুতি নেবার আহব্বান জানায়। একুশে পদক প্রাপ্ত কৃষি অর্থনীতিবিদ ও গবেষক মুক্তিযোদ্ধা ড. জাহাঙ্গীর আলম লিখেছেন, বঙ্গবন্ধু তার ধৈর্যশীল রাজনৈতিক ভূমিকার পাশাপাশি পাকিস্তানিদের হিংস্রতা ও নৃশংসতার বিবরণ দিয়ে সবশেষে হাত উঁচিয়ে অঙ্গুলি দোলানোর মাধ্যমে পরবর্তী দিকনির্দেশনা দিচ্ছিলেন এভাবে- ‘আমি পরিষ্কার অক্ষরে বলে দিবার চাই যে, আজ থেকে কোর্ট, কাছারি, আদালত, ফৌজদারি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে... আর যদি একটি গুলি চলে, আর যদি আমার লোককে হত্যা করা হয়, তোমাদের উপর আমার অনুরোধ রইল- প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো।তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে’। ড. জাহাঙ্গীর আলম এব ভাষায়, আমি অনুভব করছিলাম, বঙ্গবন্ধুর কণ্ঠ থেকে অবিরাম আগুনের ফুলকি ঝড়ে পড়ছে। মনে হচ্ছিল, তিনি আগুনের অক্ষরে লেখা এক দীর্ঘ কবিতা আবৃত্তি করে যাচ্ছেন। অবশেষে তিনি ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ রমনার রেসকোর্স ময়দানের লাখ লাখ কণ্ঠে তখন ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হতে থাকে- ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’। প্রকৃত অর্থে সেটিই ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা।
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর আলোচনা ব্যর্থ হলে নেমে আসে ২৫ মার্চের কালরাত। অপারেশন সার্চলাইটের নামে মধ্যরাতে ঢাকায় ঘুমন্ত নিরীহ মানুষের ওপর শুরু হয় পাকিস্তানি সৈন্যদের বর্বরোচিত সশস্ত্র আক্রমণ। চলতে থাকে গণহত্যা। সেই রাতেই বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় পাকিস্তানি সৈন্যরা। তার আগে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এক ওয়ারলেস বার্তায় তিনি বলেন, ‘এটাই হয়তো আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের মানুষকে আহ্বান জানাই, আপনারা যেখানেই থাকুন, আপনাদের সর্বস্ব দিয়ে দখলদার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত প্রতিরোধ চালিয়ে যান। বাংলাদেশের মাটি থেকে সর্বশেষ পাকিস্তানি সৈন্যকে উৎখাত করা এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের আগ পর্যন্ত আপনাদের যুদ্ধ অব্যাহত থাকুক।’
শুরু হয়ে যায় বাঙ্গালী জাতির মুক্তির সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে, ৩০ লাখ শহীদের তাজা রক্তের বিনিময়ে, ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা। ১৯৭১ সালের এই দিনে আমরা বিজয় ছিনেয়ে এনে বাংলার আকাশে বাতাসে উড়িয়েছি লাল-সবুজের পতাকা। আর এই অর্জনে আমাদের কান্ডারী ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
বঙ্গবন্ধু ছিলেন সাম্রাজ্যবাদবিরোধী জাতীয় আন্দোলনের মূর্ত প্রতীক। গণতন্ত্রের অতন্দ্র প্রহরী। তিনি তার ব্যক্তিসত্তাকে বাঙালি জাতিসত্তায় রূপান্তরিত করেছিলেন। নিজের স্বার্থকে জাতীয় স্বার্থে বিলীন করে দিয়েছিলেন। আর একারনেই আমি লিখেছি বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ এক ও অভিন্ন শব্দ।
বঙ্গবন্ধু ডাকে সাড়া দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশ পেলাম। তাই আমার প্রবন্ধের শুরুর কথায় একটু ফিরে যাই। সেখানে আমি উল্লেখ্য করেছিলাম Freedom made us aspirational. Now, time to reap high-hanging fruits. স্বাধীনতা আমাদের উচ্চাকাংখী করেছে। এখন সময় সেই কাংখিত ফল ভোগ করার। যেই স্বপ্ন নিয়ে, যেই প্রত্যাশা নিয়ে বাঙ্গালী জাতি তাদের বুকের রক্ত দিয়ে গেছেন তা ছিল, বাংলাদেশ হবে একটি ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র যেখানে প্রত্যেকটি ধর্মের মানুষ নিজ নিজ ধর্ম পালনে কোন ধরনের বাধার সম্মোখিন হবে না। কিন্তু বাস্তবে আমরা কি দেখছি? আমরা দেখছি ধর্মের দোহাই দিয়ে মসজিদ-মন্দির ভাংচুর, বাড়ি-ঘর থেকে উচ্ছেদ যা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে লুন্ঠিত করে। যেই ভাষার জন্য রফিক, শফিক, সালাম, বরকত শহীদ হয়েছে, যেই ভাষা আন্দোলনের মধ্যে আমাদের মুক্তির আন্দোলনের বীজ নিহিত ছিল, যেই আন্দোলনের পথ ধরেই আমাদের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে সেই বাংলা ভাষা এখনো দেশের সর্বস্তরে পরোপুরি চালু হয়নি। যেই গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য বাঙ্গালী জাতি জীবন দিতে দ্বিধাবোধ করেননি, স্বাধীনতার মাত্র ৪ বছরের মধ্যে সেই গনতন্ত্র বন্দুকের নলে বাধা পড়ে যায়, সামরিক শাসনের কবলে চলে যায় বাংলাদেশ। সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণ, দূর্নীতি দমন এগুলো ছিল যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার পিছনে কতিপয় কারন। কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশে আমরা কি দেখতে পাই? আমরা দেখতে পাই বঙ্গবন্ধু তার সাড়ে তিন বছরের শাসনকালে যেসব সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিলেন স্বাধীনতার ৫০ বছর পরেও সেই সমস্যার মোকাবিলা করতে হচ্ছে। জাতির পিতার ১৯৭৫ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক বিশাল জনসভায় বলেছিলেন-“আজকে আমার একটিমাত্র অনুরোধ আছে আপনাদের কাছে— আমি বলেছিলাম, ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল, যুদ্ধ করতে হবে শত্রুর বিরুদ্ধে। আজকে আমি বলব বাংলার জনগণকে— এক নম্বর কাজ হবে দুর্নীতিবাজদের বাংলার মাটি থেকে উৎখাত করতে হবে।... আমি গ্রামে গ্রামে নামবো। এমন আন্দোলন করতে হবে যে, যে ঘুষখোর, যে দুর্নীতিবাজ, যে মুনাফাখোর, যে আমার জিনিস বিদেশে চোরাচালান দেয়, তাদের সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে।... আপনারা সংঘবদ্ধ হন। ঘরে ঘরে আপনাদের দুর্গ গড়তে হবে। সে দুর্গ করতে হবে দুর্নীতিবাজদের খতম করার জন্য, বাংলাদেশের দুঃখী মানুষের দুঃখমোচন করার জন্য।” বঙ্গবন্ধু ওই ভাষণে করণীয় প্রসঙ্গে আরও বলেছিলেন, এক নম্বর হল- দুর্নীতিবাজ খতম করা, দুই নম্বর হল- কলকারখানায়, ক্ষেতে-খামারে প্রোডাকশন বাড়ানো, তিন নম্বর হল- পপুলেশন প্ল্যানিং, চার নম্বর হল- জাতীয় ঐক্য। কিন্তু এই ঘোষণা দিয়ে বেশি দিন কাজ করার সুযোগ পাননি বঙ্গবন্ধু। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে বাংলার উন্নয়নকেও হত্যা করা হয়।
আমাদের প্রত্যাশা এবং প্রাপ্তির জায়গায় ব্যবধান একটু বেশি হওয়াতে প্রথমে কিছু হতাশার কথা বললেও বাংলাদেশের সুবর্ণ জয়ন্তীতে আর হতাশার কথা নয়। এবার একটু আশার কথা শুনি। এতো অপ্রাপ্তির মাঝেও আমাদের প্রাপ্তি নেহাত কম নয়। উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ার শর্ত পূরণ করেছে বাংলাদেশ। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। মানুষের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পেয়েছে, শিক্ষার হার বৃদ্ধি পেয়েছে, নারী-পুরুষের সমতা বৃদ্ধি পেয়েছে, গনতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা চলছে, খাদ্যে ঘাটতি কমেছে, আমদানি নির্ভরশীলতা কমেছে, যুদ্ধাপরাধের বিচার চলছে এবং অনেকগুলো রায় কার্যকরও হয়েছে। সমগ্র বিচার সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হলে তা এ ধরনের অপশক্তির তৎপরতা রোধে সহায়ক হবে-আশা করা যায়। এতে আইনের শাসন জোরদার করার পথও সুগম হবে। জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাস, মাদক নিয়ন্ত্রণে সফলতা অর্জন করেছে। খেলাধূলা, শিল্প-সাহিত্য, প্রযুক্তি প্রভৃতিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
আমরা যদি বর্তমান সরকারের সফলতার দিকে একটু নজর দেই তাহলে যা দেখবো তা বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্নেরই প্রতিফলন। তাহলে এক নজরে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নগুলো দেখিঃ ১-পদ্মা সেতু নিমার্ণ, ২-সমুদ্র সীমানা বিজয়, ৩-শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি, ৪-ফ্লাইওভার নিমার্ণ, ৫-জেলেদের খাদ্য সহায়তা প্রদান, ৬-দরিদ্রতার হার নিম্ন পর্যায়ে, ৭-যুদ্ধাপরাধী ও রাজাকারদের বিচার, ৮-বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার, ৯-বিনামূল্যে প্রত্যেকটি শিক্ষার্থীদের হাতে বই বিতরণ, ১০-বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ, ১১-কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান, ১২-বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি, ১৩-দেশের রপ্তানি আয় বৃদ্ধি, ১৪-মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, ১৫- গরিব শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি, ১৬- অসহায় মুক্তিযোদ্ধাদের আবাসন ব্যবস্থা, ১৭- রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ১৮- মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা প্রদান, ১৯- প্রতিটি ইউনিয়নে ডিজিটাল তথ্য সেবা কেন্দ্র, ২০- বিভিন্ন জেলায় বিনোদন কেন্দ্র নিমার্ণ, ২১- বিভিন্ন জেলায় শিল্প পার্ক নিমার্ণ, ২২- দেশের বিভিন্ন স্থানে ইকোনমিক জোন নিমার্ণ, ২৩- গ্রামীণ রাস্তাঘাট ও কালভাটর্ নিমার্ণ, ২৪- মোবাইল ও ইন্টারনেট গ্রাহক বৃদ্ধি, ২৫- একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প, ২৬- কমর্সংস্থান বৃদ্ধি, ২৭- কৃষিতে সফলতা, ২৮- জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনে সফলতা, ২৯- এশিয়া হাইওয়ে রোড প্রকল্প, ৩০- বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি, ৩১- প্রতিবন্ধী ভাতা প্রদান, ৩২- নারীর ক্ষমতায়ন, ৩৩- বিধবা ভাতা প্রদান, ৩৪- মাতৃত্বকালিন ছুটি বৃদ্ধি, ৩৫- বয়স্ক ভাতা প্রদান, ৩৬- মাতৃকালীন ভাতা প্রদান ৩৭-ডিজিটাল বাংলাদেশ কাযর্কর, ৩৮-মেট্রোরেল, ৩৯- হাতিরঝিল প্রকল্প, ৪০- এলিভেটেড একপ্রেস প্রকল্পের কাজ চলছে, ৪১-স্যাটেলাইট ৪২-৪ জি-৫ জি, ৪৩- মাদক নিধন, ৪৪-ভিক্ষুক মুক্তকরণ, ৪৫-হরতাল মুক্তকরণ, ৪৬- ২০০টি উপরে মসজিদ স্থাপন, ৪৭- রূপপুরে পারমাণবিক স্থাপন, ৪৮-প্রাইমার স্কুল সরকারিকরণ, ৪৯-আশ্রয়ণ প্রকল্প, ৫০-করোনা মহামারীতে সকলের ভ্যাক্সিন নিশ্চিত করা। এই উন্নয়নগুলো বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতিফলন, মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগের ফসল।
সর্বশেষ গবেষক এম আর খায়রুল উমাম এর কথা দিয়েই শেষ করি। তিনি লিখেছেন, সরকার দাবি করে উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশ। স্ব-অর্থায়নে পদ্মা সেতু, প্রশস্তকরণসহ মহাসড়ক সংস্কার, মেট্রোরেল, ট্যানেল, উড়াল সেতু, ওভার ব্রিজ, ফ্লাইওভার, অসংখ্য ব্রিজ-কালভার্ট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভবন, রেল উন্নয়ন, নৌপথ উদ্ধার, নতুন রাস্তা নির্মাণ ও পুরানো রাস্তা সংষ্কার, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার অনুমোদন, বিদ্যুৎ উৎপাদন, গ্রামীণ স্বাস্থ্য সেবা ইত্যাদি কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে মানুষের নিরাপদ ও সুরক্ষিত জীবনের ভারসাম্য আনতে উদ্যোগী সরকার। শিক্ষানীতি, নারী উন্নয়ন নীতি, তথ্য অধিকার আইন, সড়ক নিরাপত্তা আইন, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নীতি, শিল্প নীতি, বাণিজ্য নীতি ইত্যাদি জনগণের সুন্দর ভবিষ্যতের আশায় গাইড লাইন হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু সাধারণ মানুষ তাদের প্রতিদিনকার জীবনের অভিজ্ঞতা দিয়ে বুঝতে পারছে বর্তমান উন্নয়নের ধারা তাদের ভাগ্য পরিবর্তনে ব্যর্থ হচ্ছে রাজনৈতিক অস্থিতি, দুর্নীতি আর নৈরাজ্য সৃষ্টির প্রতিযোগিতার কারণে। স্বাধীনতাবিরোধীদের দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টার পাশাপাশি সরকারি দলের কর্মীরা ব্যক্তিগত আধিপত্য বিস্তারে সারাদেশে প্রতিযোগিতায় নেমেছে। সরকারি উন্নয়নের ওয়াচডগ না হয়ে তারা সরকারের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পর্দা-বালিশ-চেয়ার কেলেংকারী চলমান, উন্নয়ন প্রকল্প প্রাক্কালিক ব্যয় ও সময়ে শেষ হচ্ছে না, ব্যাংক জালিয়াতি ও শেয়ার ধস ঘটছে, সিন্ডিকেট বাজার নিয়ন্ত্রণ নষ্ট করছে, আলু চাষ-পুকুর কাটা-গ্রাম উন্নয়ন প্রশিক্ষণ নিতে বিদেশ ভ্রমণ চলছে, কমিশন বাণিজ্যের প্রসার ঘটছে। সরকার এসব ব্যাপারে সতর্ক হলে, যথোপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করলে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাস্তবায়ন হবে এবং দেশ আরও এগিয়ে যাবে।
বাংলাদেশের সুবর্ণ জয়ন্তীতে আমাদের শপথ হোক বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে বুকে ধারণ করে, কাজের মাধ্যমে সেই বাংলাদেশ গড়তে ভূমিকা রাখা যার জন্য ত্রিশ লাখ বাঙ্গালী তাদের বুকের রক্ত দিয়ে বাংলাদেশ নামক স্বাধীন রাষ্ট্র আমাদেরকে দিয়েছেন। আসুন, আমরা সেই বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত করি। জয় বাংলা।
তথ্যসুত্রঃ
১। অসমাপ্ত আত্মজীবনী; শেখ মুজিবুর রহমান
২। বাংলাদেশঃ রাজনীতি সরকার ও শাসনতান্ত্রিক উন্নয়ন; ড. হারুন-অর-রশিদ
৩। বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ; ড. জাহাঙ্গীর আলম (প্রথম আলো, ২৭ মার্চ ২০২০)
৪। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের অভ্যুদয়; রওনক জাহান (প্রথম আলো, ১৬ ডিসেম্বর ২০২০)
৫। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ;
৬। প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির বাংলাদেশ; এম আর খায়রুল উমাম (bdnews24.com, ৬ ফেব্রুয়ারী ২০২০)
@ বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশঃ আমাদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি; মোঃ হেলালউদ্দিন, প্রভাষক (রাষ্ট্রবিজ্ঞান), সরকারি ফজলুল হক কলেজ, চাখার, বরিশাল।