ক্রোধ
বা রাগ মানুষের জন্য বহু অনিষ্টের কারণ। রাগের ফলে মানুষের শারীরিক ও
মানসিক সমস্যা হয় আবার এ রাগই মানুষকে জাহান্নামের ইন্ধনে পরিণত করে দেয়।
রাগ এমন এক জিনিস; যা নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত কঠিন কাজ। এ জন্য রাগ বা ক্রোধ
নিয়ন্ত্রণকারীকে হাদিসে বীর পুরুষ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘ওই ব্যক্তি বীর পুরুষ নয় যে
অন্যকে ধরাশায়ী করে; বরং সেই প্রকৃত বীর যে রাগ বা ক্রোধের সময় নিজেকে
নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। (বুখারি, মুসলিম ও মিশকাত)
এ রাগের ফলে
মানুষ অনেক নির্দয় ও অত্যাচারমূলক কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে ফেলে। পরবর্তীতে যার
জন্য লজ্জিত হতে হয় আবার ক্ষেত্র বিশেষ অনেক কঠিন খেসারত দিতে হয়। তাই
মানুষের উচিত কোনো অবস্থাতেই রাগ বা ক্রোধ প্রকাশ না করা।
মানুষ
স্বাভাবিক অবস্থায় একজন আরেকজনকে ক্ষমা করে দেয়া সহজ ব্যাপার; কিন্তু
রাগের সময় ক্ষমা করা অত্যন্ত কঠিন কাজ। প্রকৃত মুমিন যারা তারা রাগের সময়ও
অন্যকে ক্ষমা করে দেয়। আল্লাহ তাআলা মুমিনদের প্রশংসায় বলেন, ‘এবং যখন তারা
ক্রোধান্বিত হয় তখনও তারা ক্ষমা করে দেয়।’ (সুরা শুরা : আয়াত ৩৭)
রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষকে রাগ থেকে নিজেদের হিফাজত করার
ব্যাপারে তাগিদ দিয়েছেন। বর্তমান সময়ে চিকিৎসক ও আল্লাহওয়ালা ব্যক্তিগণ যে
উপদেশগুলো মানুষকে দিয়ে থাকেন, তার মধ্যে রাগ থেকে নিজেদেরকে নিয়ন্ত্রণ
করার কথা অন্যতম। রাগের কারণে মানুষের দ্বারা অত্যাচার থেকে শুরু করে অধিক
উত্তেজিত হওয়ার ফলে জীবনহানির সম্মুখীন হয়।
হজরত
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, এক ব্যক্তি বলল, ‘হে
আল্লাহর রাসুল! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে ওসিয়ত (উপদেশ)
করুন। তিনি বললেন, রাগ করবে না। লোকটি বারবার তার কথাটি বলতে থাকলে
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও একই জবাব দিলেন এবং বললেন
রাগ করবে না।’ (বুখারি, মিশকাত)
রাগ
বা ক্রোধ থেকে বেঁচে থাকতে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
মানুষকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, রাগ বা ক্রোধ শয়তানের
পক্ষ থেকে আসে। আর শয়তান আগুনের তৈরি। আর আগুনকে পানি দ্বারা ঠাণ্ডা বা
নিভানো যায়। যদি কেউ রাগ বা ক্রোধান্বিত হয়; তবে তার উচিত অজু করে নেয়া।
(আবু দাউদ, মিশকাত)
অন্য
হাদিসে হজরত আবু যর গিফারি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যদি দাঁড়ানো অবস্থায় কেউ রাগ বা
ক্রোধান্বিত হয়, তবে সে যেন বসে যায়। এতেও যদি তা প্রশমিত না হয় তবে সে যেন
শুয়ে পড়ে। (মুসনাদে আহমদ, তিরমিজি)
পরিশেষে, সুস্থ
ও সুন্দর জীবন গঠনে দুনিয়া ও পরকালের শান্তি ও কল্যাণ লাভে সর্বাবস্থায়
রাগ বা ক্রোধ থেকে নিজেদেরকে নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। অযথা রাগের কারণে ঈমান
নষ্ট হয়ে যায়।
রাগের
যাবতীয় অনিষ্ট থেকে বেঁচে থাকার জন্য বিশ্বনবির ছোট্ট একটি হাদিসই যথেষ্ট।
আর তা হলো- ‘রাগ মানুষের ঈমানকে নষ্ট করে দেয় যেমনিভাবে তিক্ত ফল মধুকে
নষ্ট করে দেয়।’ (বাইহাকি, মিশকাত)
আল্লাহ
তাআলা মুসলিম উম্মাহকে রাগ বা ক্রোধের অনিষ্ট থেকে হিফাজত করুন।
সুস্বাস্থ্য ও সুন্দর জীবন গঠন এবং ঈমান রক্ষায় আত্মনিয়োগ করার তাওফিক দান
করুন। আমিন।।
ক্রোধ বা রাগ মানুষের জন্য বহু অনিষ্টের কারণ
No comments:
Post a Comment