Monday, November 18, 2024

এক নজরে বাংলাদেশ সংবিধানের সংশোধনীসমূহ -- মোঃ হেলাল উদ্দিন

প্রত্যেক দেশের সংবিধানে এর সংশোধনের বিধান থাকে। বাংলাদেম সংবিধানও এর ব্যতিক্রম নয়। বাংলাদেশ সংবিধানের ১৪২ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রয়োজনে সংবিধান সংশোধন করার বিধান রেখেছে। সময়ের চাহিদা এবং রাষ্ট্রের প্রয়োজনে ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭২ সালে কার্যকর হবার পর থেকে এখন পর্যন্ত ১৭ বার সংশোধন করা হয়েছে। সংক্ষেপে সংশোধনীসমূহ আলোচনা করা হলো-
 
প্রথম সংশোধনী: সংবিধানের প্রথম সংশোধনী পাশ হয় ১৯৭৩ সালের ১৫ জুলাই। এ সংশোধনীর মাধ্যমে ৪৭ অনুচ্ছেদে দুটি নতুন উপধারা সংযোজন করা হয়। এ সংশোধনীর মূল কারণ ছিল গণহত্যাজনিত অপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ ও আন্তর্জাতিক আইনের অধীন অন্যান্য অপরাধের জন্য আইন তৈরি এবং তা কার্যকর করা। সংবিধান (প্রথম সংশোধনী) আইন ১৯৭৩ উপস্থাপন করেন তৎকালীন আইনমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন ১২ই জুলাই, ১৯৭৩ সালে।

দ্বিতীয় সংশোধনী: সংবিধানের দ্বিতীয় সংশোধনী পাশ হয় ১৯৭৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর। এতে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ২৬, ৬৩, ৭২ ও ১৪২ এ সংশোধন আনা হয়। নিবর্তনমূলক আটক, জরুরি অবস্থা ঘোষণা ও এ সময় মৌলিক অধিকারগুলো স্থগিতকরণ সম্পর্কে প্রথমদিকে সংবিধানে কোনো বিধান ছিল না। এ সংশোধনীর মাধ্যমে বিধানগুলো সংযোজন করা হয়। সংবিধান (দ্বিতীয় সংশোধনী) আইন ১৯৭৩ উপস্থাপন করেন তৎকালীন আইনমন্ত্রী মনোরঞ্জন ধর ১৮ই সেপ্টেম্বর, ১৯৭৩ সালে।

তৃতীয় সংশোধনী: সংবিধানের তৃতীয় সংশোধনী পাশ হয় ১৯৭৪ সালের ২৩ নভেম্বর। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত চুক্তি অনুমোদন এবং চুক্তি অনুযায়ী ছিটমহল ও অপদখলীয় জমি বিনিময় বিধান করার জন্য এ সংশোধনী আনা হয়। সংবিধান (তৃতীয় সংশোধনী) আইন ১৯৭৪ উপস্থাপন করেন তৎকালীন আইনমন্ত্রী মনোরঞ্জন ধর ২১শে নভেম্বর, ১৯৭৪ সালে।

চতুর্থ সংশোধনী: সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী পাশ হয় ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি। এ সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদীয় পদ্ধতি পরিবর্তন করে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা চালু করা; একদলীয় শাসন ব্যবস্থার প্রবর্তন করা; রাষ্ট্রপতি ও সংসদের মেয়াদ বৃদ্ধি এবং রাষ্ট্রপতি অপসারণ পদ্ধতি জটিল করা; মৌলিক অধিকার বলবৎ করার অধিকার বাতিল করা; উপ-রাষ্ট্রপতির পদ সৃষ্টি করা এবং বাকশাল গঠন করা হয়। সংবিধান (চতুর্থ সংশোধনী) আইন ১৯৭৫ উপস্থাপন করেন তৎকালীন আইনমন্ত্রী মনোরঞ্জন ধর ২৫শে জানুয়ারি ১৯৭৫ সালে।

পঞ্চম সংশোধনী: সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী পাশ হয় ১৯৭৯ সালের ৫ এপ্রিল। পঞ্চম সংশোধনী সংবিধানে কোনো বিধান সংশোধন করেনি। এ সংশোধনী ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টে সামরিক শাসন জারির পর থেকে ৬ এপ্রিল ১৯৭৯ পর্যন্ত সামরিক সরকারের যাবতীয় আদেশ, ঘোষণা ও দন্ডাদেশ বৈধ বলে অনুমোদন করে নেওয়া হয়। সংবিধান (পঞ্চম সংশোধনী) আইন ১৯৭৯ উপস্থাপন করেন তৎকালীন সংসদ নেতা শাহ আজিজুর রহমান ৪ এপ্রিল ১৯৭৯ সালে। ২০১০ সালের ফেব্রæয়ারি মাসে এ সংশোধনীটি উচ্চ আদালতের রায়ে বাতিল হয়।

ষষ্ঠ সংশোধনী: সংবিধানের ষষ্ঠ সংশোধনী পাশ হয় ১৯৮১ সালের ৮ জুলাই। ষষ্ঠ সংশোধনী কোনো রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক কারণে করা হয়নি। এ সংশোধনীর মাধ্যমে উপ-রাষ্ট্রপতি পদে বহাল থেকে রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনের বিধান নিশ্চিতকরণ করা হয়। এ সংশোধনীতে বলা হয়, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী পদকে প্রজাতন্ত্রের কোনো লাভজনক পদ বলে গণ্য করা হবে না। সংবিধান (ষষ্ঠ সংশোধনী) আইন ১৯৮১ উপস্থাপন করেন তৎকালীন সংসদ নেতা শাহ আজিজুর রহমান ১ জুলাই ১৯৮১ সালে।

সপ্তম সংশোধনী: সংবিধানের সপ্তম সংশোধনী পাশ হয় ১৯৮৬ সালের ১০ নভেম্বর। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ থেকে ১৯৮৬ সালের ১০ নভেম্বর পর্যন্ত দেশে সামরিক শাসন বহাল ছিল। তাই এ সংশোধনীর মাধ্যমে সামরিক শাসনামলে জারি করা সব আদেশ, আইন ও নির্দেশকে বৈধতা দেওয়া হয় এবং আদালতে এ বিষয়ে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন না করার বিধান করা হয়। এছাড়াও এ সংশোধনীতে বিচারপতিদের অবসরের বয়সসীমা ৬২ থেকে বাড়িয়ে ৬৫ করা হয়। সংবিধান (সপ্তম সংশোধনী) আইন ১৯৮৬ উপস্থাপন করেন তৎকালীন আইনমন্ত্রী ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী বিচারপতি কে এম নুরুল ইসলাম ১০ নভেম্বর ১৯৮৬ সালে। ২০১০ সালের ২৬ আগস্ট এ সংশোধনী আদালতে কর্তৃক অবৈধ ঘোষিত হয়।

অষ্টম সংশোধনী: সংবিধানের অষ্টম সংশোধনী পাশ হয় ১৯৮৮ সালের ৯ জুন। এ সংশোধনীর মাধ্যমে অনুচ্ছেদ ২, ৩, ৫, ৩০ ও ১০০ এ পরিবর্তন আনা হয়। এ সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ইসলামকে স্বীকৃতিদান, ঢাকার বাইরে হাই কোর্ট বিভাগের ৬টি স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপন, উধপপধ-এর নাম উযধশধ এবং ইধহমধষর-এর নাম ইধহমষধ-তে পরিবর্তন করা হয়। সংবিধান (অষ্টম সংশোধনী) আইন ১৯৮৮ উপস্থাপন করেন তৎকালীন সংসদ নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ১১ই মে ১৯৮৮ সালে। তবে হাই কোর্টের বেঞ্চ গঠনের বিষয়টি সর্বোচ্চ আদালত বাতিল করে।

নবম সংশোধনী:
সংবিধানের নবম সংশোধনী পাশ হয় ১৯৮৯ সালের ১০ জুলাই। এ সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচনের সাথে একই সময়ে উপরাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা, রাষ্ট্রপতি পদে কোন ব্যক্তিকে পর পর দুই মেয়াদে সীমাবদ্ধ রাখার বিধান সংযোজন করা হয়। সংবিধান (নবম সংশোধনী) আইন ১৯৮৯ উপস্থাপন করেন তৎকালীন সংসদ নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ৬ জুলাই ১৯৮৯ সালে।

দশম সংশোধনী: সংবিধানের দশম সংশোধনী পাস হয় ১৯৯০ সালের ১২ জুন। এ সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির কার্যকালের মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বে ১৮০ দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ব্যাপারে সংবিধানের ১২৩(২) অনুচ্ছেদের বাংলা ভাষ্য সংশোধন ও সংসদে মহিলাদের ৩০টি আসন আরো ১০ বছরকালের জন্য সংরক্ষণ করা হয়। সংবিধান (দশম সংশোধনী) আইন ১৯৯০ উপস্থাপন করেন তৎকালীন আইন ও বিচারমন্ত্রী হাবিবুল ইসলাম ১০ জুন ১৯৯০ সালে।

একাদশ সংশোধনী: সংবিধানের একাদশ সংশোধনী পাস হয় ১৯৯১ সালের ৬ আগস্ট। এ সংশোধনীর মাধ্যমে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদের স্বপদে ফিরে যাবার বিধান করা হয়। এতে আরো বলা হয়, নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার পর এ অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি দেশের প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্বগ্রহণ করতে পারবেন এবং অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে তার কর্মকাল বিচারপতি হিসেবে হিসেবে গণ্য হবে। সংবিধান (একাদশ সংশোধনী) আইন ১৯৯১ উপস্থাপন করেন তৎকালীন আইন ও বিচারমন্ত্রী মীর্জা গোলাম হাফিজ ২ জুলাই ১৯৯১ সালে।

দ্বাদশ সংশোধনী: সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনী পাস হয় ১৯৯১ সালের ৬ আগস্ট। এ সংশোধনীর মাধ্যমে ১৭ বছর পর দেশে পুনরায় সংসদীয় সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। এছাড়া উপরাষ্ট্রপতির পদ বিলুপ্ত করা হয়। সংবিধান (দ্বাদশ সংশোধনী) আইন ১৯৯১ উপস্থাপন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া ২রা জুলাই ১৯৯১ সালে।

ত্রয়োদশ সংশোধনী: সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী পাস হয় ১৯৯৬ সালের ২৭ মার্চ। এ সংশোধনীর মাধ্যমে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নিরপেক্ষ-নিদর্লীয় তত্ত¡াবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়। সংবিধান (ত্রয়োদশ সংশোধনী) আইন ১৯৯৬ উপস্থাপন করেন তৎকালীন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার ২১ মার্চ ১৯৯৬ সালে।

চতুর্দশ সংশোধনী: সংবিধানের চতুর্দশ সংশোধনী পাস হয় ২০০৪ সালের ১৬ মে। এ সংশোধনীর মাধ্যমে সংরক্ষিত মহিলা আসন ৩০ থেকে ৪৫ করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অবসরের বয়সসীমা ৬৫ থেকে ৬৭ বছর করা হয়। এছাড়া রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি এবং সরকারি ও আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিদেশে বাংলাদেশ মিশনে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিকৃতি বা ছবি প্রদর্শনের বিধান করা হয়। সংবিধান (চতুর্দশ সংশোধনী) আইন ২০০৪ উপস্থাপন করেন তৎকালীন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ২৭ মার্চ ২০০৪, দ্বিতীয়বার ২৮ এপ্রিল ২০০৪ সালে।

পঞ্চদশ সংশোধনী: সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হয় ২০১১ সালের ৩০ জুন। এ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের প্রস্তাবনা সংশোধন, ১৯৭২-এর মূলনীতি পূনর্বহাল, তত্ত¡াবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বিলুপ্তকরণ, ১/১১ পরবর্তী দ্বিতীয় তত্ত¡াবধায়ক সরকার নিয়ম বহির্ভুতভাবে ৯০ দিনের অধিক ক্ষমতায় থাকার বিষয়টি প্রমার্জ্জনা, নারীদের জন্য সংসদে ৫০ টি সংসদীয় আসন সংরক্ষণ, নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা বৃদ্ধি, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা পত্র সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা, অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা দখলের জন্য রাষ্ট্রদ্রোহিতার অপরাধ বিবেচনায় সর্বোচ্চ দন্ডের বিধান রাখা ইত্যাদি যুক্ত করা হয়। সংবিধান (পঞ্চদশ সংশোধনী) আইন ২০১১ উপস্থাপন করেন তৎকালীন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমদ ২৫শে জুন ২০১১ সালে।

ষোড়শ সংশোধনী: সংবিধানের ষোড়শ সংশোধন পাস হয় ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর। এ সংশোধনীর মাধ্যমে উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা আইন প্রণেতাদের হাতে ফিরিয়ে দিতে বাহাত্তরের সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ পুনঃস্থাপন করা হয়। সংবিধান (ষোড়শ সংশোধনী) আইন ২০১৪ উপস্থাপন করেন তৎকালীন আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সালে।

সপ্তদশ সংশোধনী: সংবিধানের ষোড়শ সংশোধন পাস হয় ২০১৮ সালের ৮ জুলাই। এই সংশোধনীর মাধ্যমে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচনের বিধি আরও ২৫ বছর বহাল রাখা হয়। সংবিধান (ষোড়শ সংশোধনী) আইন ২০১৮ উপস্থাপন করেন আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক ৮ জুলাই ২০১৮ সালে।

 


এক নজরে বাংলাদেশ সংবিধানের সংশোধনীসমূহ 

-- মোঃ হেলাল উদ্দিন

Friday, November 15, 2024

'দিনের শেষে' আসলেই সবাই একা -- মোঃ হেলাল উদ্দিন

 ‘দিনের শেষে’ বইটি একটি প্রেমের উপন্যাস, তা বলাই বাহুল্য। উপন্যাসের শুরুতে তিনি ইশরাত নামের কাউকে উৎসর্গ করেন যেখানে লেখা ছিল, ‘জনম জনম কাঁদিও।’ এটি উল্লেখ করার উদ্দেশ্য হচ্ছে, উপন্যাসে ‘জনম জনম কাঁদিব’ গানটি কয়েকবার আসবে এবং তা পরিস্থিতির সাথে বেশ ভালোভাবে মানিয়ে যাবে। হুমায়ূন আহমেদের বইয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জীবনানন্দ দাশের গান-কবিতার ব্যবহার বেশ ভালো লাগে আমার।

যাই হোক, মূল কথায় ফিরে আসি। উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র জহির নামের একজন যুবক। হুমায়ূন আহমেদের নায়কদের সিগনেচার বৈশিষ্ট্যের একটি হলো, নায়ককে শুরুতে মনে হবে বোকা প্রকৃতির কিন্তু কাহিনির ভেতরে ঢুকলে বোঝা যাবে, তিনি অত্যন্ত বুদ্ধিমান।

সাদাসিধে জহিরকে ভালবাসে অরু, তরু নামের দুই মামাতো বোনই। কিন্তু জহির তাদের ভালবাসা বুঝতে পারে না বা বুঝলেও না বোঝার ভান করে থাকে। উপন্যাসের শুরুটা হয়, জহিরের অফিসের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা করিম সাহেবের বর্ণনা থেকে। জহিরের প্রতি তার ভাবনা থেকে মোটামুটি জহিরের চরিত্র সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যায়। তার কথা ও বিভিন্ন কার্যক্রম পড়ে বোঝা যাচ্ছিলো, তিনি জহিরকে বেশ স্নেহ করেন কিন্তু কাহিনির শেষের দিকে বলেন, ‘তোমাকে আমি কী রকম পছন্দ করি তা কি তুমি জানো?’ এমন বক্তব্যের কোনো প্রয়োজনই ছিল না। গল্পে বেশ হালকা চালে একে একে চরিত্র প্রবেশ করিয়ে দেওয়ার কায়দাটি আমার ভালো লেগেছে। অনেকটা স্পটলাইট একজন থেকে অন্যজনে ঘুরে ঘুরে আসার মত ব্যাপার।

তবে, উপন্যাসের শুরুতে যতটা গুরুত্বের সঙ্গে করিম সাহেবকে আনা হয়েছিলো, ততোটা গুরুত্ব তিনি পরবর্তীতে পাননি। এমনটা ঘটেছে, অরুর ছোট বোন তরুর ক্ষেত্রেও। তার সাথে জহিরের কথোপকথন শুনে মনে হচ্ছিল, তরুর চরিত্রটি হুমায়ূন আহমেদের অন্যান্য নায়িকার তুলনায় বেশ স্বাভাবিক এবং তার চেয়েও বড় ব্যাপার ছিল, তরু অন্যান্য নায়িকার মত রূপবতী ছিল না। কিন্তু করিম সাহেবের মত তরুর গুরুত্বও ক্রমে ফুরিয়ে যায়। গল্পের অন্যতম কেন্দ্রীয় চরিত্র হয়ে উঠে অরু। হবে না-ই বা কেন হুমায়ূন আহমেদের গল্পের নায়িকা তো সাধারণ কেউ হতেই পারে না। অরু আত্মকেন্দ্রিক, ছন্নছাড়া স্বভাবের মেয়ে যে কিনা বরিশাল মেডিকেলে পড়া বাদ দিয়ে তার কলেজের ইতিহাস বিভাগের একজন স্যারের কথার প্রেমে পড়ে তার সঙ্গে পালিয়ে যায়। সেই স্যারের আবার স্ত্রী সন্তানও রয়েছে। কিন্তু অরু মনেপ্রাণে ভালবাসে জহিরকে।

উপন্যাসের বিশেষ চরিত্রে ছিল, অরুর স্বামী আজাহার। যিনি বেশ কায়দা করে মানুষের আকর্ষণের উদ্রেক হয় এমনভাবে গল্প করেন। তিনি মদ খান, তাস খেলেন, সংসার ছেড়ে আসায় তাকে হতাশ মনে হয় কিন্তু স্ত্রীকে তার মত করে ভালোও বাসেন। তবে অরু যে জহিরকে ভালবাসে তা জানার পরও তিনি জহিরের প্রতি বেশ উদার। কথা শুনে মনে হয়, জহিরের প্রতি তার কোনো বিদ্বেষ তো নেইই বরং তিনিও এই মানুষটির প্রতি মমতাবান। হুমায়ূন আহমেদের বইয়ে চরিত্রের স্বাভাবিকতা থাকে না কিন্তু তার জাদুকরী লেখা দিয়ে দর্শককে অস্বাভাবিক বিষয়ও বেশ স্বাভাবিকভাবে গেলান। আজহার চরিত্রটির ভালো মানুষী অস্বাভাবিক। উপন্যাসে বোঝা যাচ্ছিলো, কেবল লেখক চাইছেন বলেই জহিরের প্রতি সবাই অকারণে মমতা প্রদর্শন করেন কিন্তু তাতে তার দুর্ভাগ্য ঘোচে না একটুও।

জহির গ্রামের সাধারণ নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলে। বিএ পরীক্ষায় সেকেন্ড ক্লাস পাওয়ার পর সে যখন ঢাকা আসে, প্রচণ্ড ঠান্ডার মধ্যেও তার গায়ে ছিল একটা ছেড়া সোয়েটার যা ঢাকতে সে ফুল হাতা শার্ট পরেছে আর গলায় ছিল লাল রঙের মাফলার। হুমায়ূন আহমেদের নায়িকাদের মধ্যে মায়াভাব প্রবল থাকে। যে কারণেই হয়ত অরু-তরু দুই বোন জহিরের সরলতা আর অসহায়ত্বের প্রতি মমতাময়ী হয়ে তার প্রেমে পিছলে যায়। পুরো কাহিনীতে এমন কোনো বিষয় নেই যা ব্যাখ্যা দেবে কেন দু’জন কিশোরী জহিরের প্রেমে ব্যাকুল।

তবে, বইয়ের সবচেয়ে বিরক্তিকর জায়গাটি হলো, জহিরের মেয়ে দেখতে যাওয়া, মেয়ে পছন্দ হওয়া এবং পরবর্তীতে বিয়েটা ভেঙ্গে যাওয়া। আসমানী নামের যে মেয়েটিকে জহির ও তার মামা দেখতে যায়, তার আগেও একবার বিয়ে হয়েছিলো কিন্তু তা টেলিফোনে। কিন্তু আসমানীর আমেরিকা প্রবাসী স্বামীই বিয়ের প্রায় এক বছরের মাথায় টেলিগ্রামে কোনো কারণ উল্লেখ না করেই সম্পর্ক বিচ্ছেদ করার কথা বলে। কখনো স্বামীর সঙ্গে আসমানীর দেখা হয়নি; এমনটাই পাত্রপক্ষকে জানানো হয়। কিন্তু আমাদের নায়ক তো জায়গামতো খুবই বুদ্ধিমান, তিনি ঠিকই ধরতে পারেন তথ্যটি আসলে ঠিক নয়। হুমায়ূন আহমেদের নায়িকাদের মতো এই আসমানীও অত্যন্ত রূপবতী, মুখে মায়াভাব প্রবল, স্বভাবে অত্যন্ত কোমল।

বইয়ের পৃষ্ঠা কমার সঙ্গে সঙ্গে পাঠক পাঠিকারা যখন মোটামুটি নিশ্চিত আসমানীর সাথেই জহিরের বিয়েটা হতে যাচ্ছে, ঠিক তখনই একের পর এক দুর্যোগের ঘনঘটা আসতে থাকে। প্রথমে অরু নিখোঁজ হয়ে যায়, তারপর জহিরের চাকরি চলে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়, বিয়ের দুইদিন আগে আসমানীর প্রথম স্বামী এসে হাজির হয় এবং বিয়েটা ভেঙ্গে যায় আর সবশেষে যা না করলে চলছিলোই না, পা পিছলে গর্ভবতী অরুর রক্তপাত শুরু হয় এবং সে ও তার গর্ভের সন্তান মারা যায়। যারা হুমায়ূন আহমেদের বই পড়ে অভ্যস্ত তারা নিশ্চয়ই এ ধরনের সমাপ্তির সাথে পরিচিত আছেন। শেষে ট্র্যাজেডি না দিলে চলছে না বলে দুম করে সব দুঃসংবাদ একসাথে হাজির করে উপন্যাস শেষ করে দেওয়াটা মোটেই ভালো লাগেনি।

(ফাবিহা বিনতে হক এর " 'দিনের শেষে’ হুমায়ূন আহমেদের বিকল্প পাঠ" লেখা থেকে নেয়া।)



বইঃ দিনের শেষে
লেখকঃ হুমায়ূন আহমেদ
প্রকাশকঃ অন্যপ্রকাশ
মূল্যঃ ২৮০ টাকা

Md. Helal Uddin
16.09.2024

শীত সকালের রোদে -- মোঃ হেলাল উদ্দিন

 

"সকালের হিম শীতে

সোনালী রোদের মিষ্টি আলোতে

তুমি আমি দু'জনে

চলো যাই হারিয়ে অজানাতে।"

কিংবা

"এমনই এক রোদেলা শীতের সকালে

তোমার হাতে হাত রেখে

ইচ্ছে করে হারিয়ে যেতে

দূর অজানাতে।"

 

শীত সকালের রোদে 

৩১।১২।২০১৬ 

Thursday, November 14, 2024

বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে -- মোঃ হেলাল উদ্দিন

 
দেশের তরে জীবন দিল যারা,

তাদের মধ্যে ছিলা তোমরা বুদ্ধিজীবীরা।

চৌদ্দ ডিসেম্বর বিজয়ের দু'দিন আগে,

পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করলো তাদেরকে।

এই হামলায় শুধু হানাদার বাহিনী নয়,

জড়িত ছিল কতিপয় দোসর এই বাংলার।

কি পাইলি হে অভাগা দোসর বাঙালি,

করে মোদের সাথে এমন বেঈমানি।

কবি সাহিত্যিক ডাক্তার সাংবাদিক, 

আরো কত জন যে জীবন করলে বিলীন। 

তোমাদের তরে শ্রদ্ধা মোদের,

তোমরাই মোদের পথ দেখালে।

সেই পথে আজ এগিয়ে যাচ্ছি মোরা,

এগিয়ে যাচ্ছে সোনার বাংলাদেশ।

তোমরা ছিলে তোমরা আছো,

থাকবে তোমরা চিরতরে এই বাংলায় ।

------------------

বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে 

-- মোঃ হেলাল উদ্দিন

১৪.১২.২০১৭

নায়েম।

Friday, November 8, 2024

সামাজিক গবেষণায় আইসিটি’র প্রয়োগ -- মোঃ হেলাল উদ্দিন

 

সামাজিক গবেষণায় আইসিটি’র প্রয়োগ

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার সামাজিক গবেষণায় অনেক প্রভাব ফেলে। তিনটি শ্রেনিতে ভাগ করে গবেষণায় আইসিটি’র প্রয়োগকে দেখা যায়। যেমন-

১. প্রাক-তথ্য বিশ্লেষণে আইসিটি

২. তথ্য বিশ্লেষণে আইসিটি

৩. উত্তর-তথ্য (Post-data) বিশ্লেষণে আইসিটি

১। প্রাক-তথ্য বিশ্লেষণে আইসিটি’র প্রয়োগের মধ্যে রয়েছে-

১. সাহিত্য অনুসন্ধানঃ লাইব্রেরিতে হাজার হাজার বইয়ের মধ্য থেকে প্রয়োজনীয় সাহিত্য অনুসন্ধান করা ক্লান্তিকর ও সীমিত ফলাফলের চেষ্টা। সেখানে ইন্টারনেটে সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে বই, নিবন্ধ, জার্নাল সহ প্রয়োজনীয় সকল কিছু সহজেই পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে যে সকল এ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে সাহিত্য অনুসন্ধান করা যায় তা হলো- Shodh Ganga, Google Scholar, Microsoft Academia Search, Mendeley, SSRN. এছাড়াও রয়েছে- AMS, Annual Reviews, ASME, Digital Collection, Cambridge Core, CAS, Cochrane Library, e-Book Academia Collection, EBSCO, Databases, IEEE Xplore, JSTOR, Springer Link ইত্যাদি।

২. বিষয়বস্তু অনুসন্ধানঃ সাহিত্য অনুসন্ধানে গবেষক সফ্ট কপি ব্যবহার করে আরো সহজে গবেষণা করতে পারে। অনলাইনে প্রযুক্তি ব্যবহার করে গবেষক সহজে অধ্যায় অনুসন্ধান করে এবং কম সময়ে উর্পযুক্ত পর্যালোচনা করতে পারে। বিশেষ করে গুণগত গবেষণায় এটা অত্যন্ত কার্যকরী একটা পদ্ধতি।

৩. সাহিত্য ট্রাকিংঃ অতীতে গবেষককৃত তৈরি করা সমস্ত সাহিত্য বা নির্দশনগুলোকে বাছাই করতে, শ্রেণিবদ্ধ করতে এবং সংরক্ষণ করতে তারা যে ফোল্ডারগুলো ব্যবহার করেছে বর্তমানে গবেষকরা মেন্ডেরির মতো সফটওয়্যার ব্যবহার করে সহজেই তা করতে পারেন। তবে কম্পিউটার ছাড়া এই কাজ করা কঠিন।

৪. তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহঃ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে অনলাইনে জরিপের মাধ্যমে স্বল্প সময় ও খরচে খুব সহজে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা যায়। তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের জন্য ব্যবহৃত দুইটি এ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যারের নাম হলো- Google Forms এবং Survey Mankey.

২। তথ্য বিশ্লেষণে আইসিটি’র প্রয়োগের মধ্যে রয়েছে-

১. পরিমাণগত তথ্য বিশ্লেষণঃ অনুসন্ধানমূলক ঘটনা বিশ্লেষণে, একাধিক প্রত্যাবৃত্তি (Multiple regression), টি-টেস্ট (T-Test), অনৈক্যবিশ্লেষণ (Analysis of Variance), ইত্যাদির ক্ষেত্রে গবেষক পরিমাণগত তথ্য বিশ্লেষণ পদ্ধতি ব্যবহার করেন। বর্তমানে আরো কতিপয় তথ্য বিশ্লেষণ কৌশল ব্যবহার করা হয়। যেমন- Path Analysis, Covariance Base Structural Equation Modeling SEM, Hierarchical Regression Analysis, Hierarchical Linear Modeling ইত্যাদি। এছাড়াও পরিমাণাত্মক তথ্য বিশ্লেষণে সহজে আরো যে এ্যাপ্লিকেশন সফ্টওয়্যার ব্যবহার করা হয় তার মধ্যে রয়েছে-

                                I.            Statistical Package for Social Science

                             II.            R (R foundation for statistical computing)

                           III.            MATLAB (The math work)

                          IV.            Microsoft Excel

                             V.            SAS (Statistical Analysis Software)

                          VI.            Graph Pad Prism

                        VII.            Minitab ইত্যাদি।

২. গুণাত্মক তথ্য বিশ্লেষণঃ গুণাত্মক তথ্য বিশ্লেষণের জন্য যে সকল পরিসংখ্যানগত সফ্টওয়্যার সমূহ ব্যবহার করা হয় তার মধ্যে রয়েছে-

                                I.            NVivo

                             II.            ATLAS.ti

                           III.            MAXQDA

                        IV.            SPSS Text Analysis

                           V.            Transan ইত্যাদি।

৩। উত্তর-তথ্য (Post-data) বিশ্লেষণে আইসিটি’র প্রয়োগের মধ্যে রয়েছে-

১. তথ্যসূত্র ও গ্রন্থপঞ্জি সংকলন। এক্ষেত্রে যে সকল সফ্টওয়্যার ব্যবহৃত হয় তা হলো- End Note, Zotero এবং Mendeley ইত্যাদি

২. প্রবন্ধ এবং থিসিস/ গবেষণামূলক আলোচনার যে অনলাইন প্লাটফর্ম রয়েছে তা হলো- Academia.edu Research Gate ইত্যাদি।

৩. চৌর্যবৃত্তি সনাক্তকরণে আইসিটি’র বড় অবদান রয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন সফ্টওয়্যারের মাধ্যমে চৌর্যবৃত্তি সনাক্তকরণ সহজ হয়েছে। এই সফ্টওয়্যারের মধ্যে রয়েছে- Grammarly, Article Checker, Turnitin, Dupli Checker ইত্যাদি।

৪. জার্নাল পান্ডুলিপি জমা দেয়ার ক্ষেত্রে এখন ওয়েব ভিত্তিক পান্ডুলিপি ব্যবস্থাপনা এবং পিয়ার রিভিউ সফ্টওয়্যার ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যা সময় বাঁচায় এবং গুনগত মানকে উন্নত করে। এক্ষেত্রে ব্যবহৃত সফ্টওয়্যারগুলোর মধ্যে রয়েছে- Elsevier, Wiley, Saga Publication ইত্যাদি।

গবেষণার জন্য উল্লেখিত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির এ্যাপ্লিকেশন সফ্টওয়্যার ছাড়াও আরো বহু সফ্টওয়্যার রয়েছে যা একটি মান সম্মত গবেষণাপত্র তৈরির জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। সুতরাং বলা যেতে পারে, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার গবেষণাকে আরো সহজ এবং মানসম্মত করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।

সামাজিক গবেষণায় আইসিটি’র প্রয়োগ 

-- মোঃ হেলাল উদ্দিন