Monday, August 21, 2023

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ায় ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা -- মোঃ হেলাল উদ্দিন

 

ইতিহাসের পাতায় আগস্ট মানে নৃশংসতার এক মাস। এই মাসে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কতিপয় ঘটনা বিশ্বব্যাপী আলোচনা সমালোচনার সৃষ্টি করেছিল। তেমনি একটি ঘটনা ২১ আগস্ট, ২০০৪ এ বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা। যে হামলার ঘটনায় বিশ্বব্যাপী প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছিল। কেমন ছিলো সেই প্রতিক্রিয়া বিভিন্ন পত্রপত্রিকার সংবাদ বিশ্লেষণে তা দেখা হবে। তবে এর পূর্বে আগস্টের আরো কিছু নৃশংস ঘটনা দেখা যাক।

এই আগস্টে ঘটেছে ইতিহাসের প্রথম পারমানবিক বোমা হামলা। ৬ আগস্ট, ১৯৪৫ সালের সকালে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনী জাপানের হিরোশিমা শহরের ওপর লিটল বয় নামের নিউক্লীয় বোমা ফেলে এবং এর তিন দিন পর ৯ আগস্ট নাগাসাকি শহরের ওপর ফ্যাট ম্যান নামের আরেকটি নিউক্লীয় বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। অনুমান করা হয় যে ১৯৪৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বোমা বিস্ফোরণের ফলে হিরোশিমাতে প্রায় ১৪০,০০০ জন এবং নাগাসাকিতে প্রায় ৭৪,০০০ জন লোক মারা যান এবং পরবর্তীতে এই দুই শহরে বোমার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় সৃষ্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান আরও ২১৪,০০০ জন।

স্বাধীন বাংলাদেশে ১৫ আগস্ট, ১৯৭৫ সালের রাতে বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িতে সেনাবাহিনীর একটি দল হানা দেয়। এ সময় তারা বঙ্গবন্ধুসহ বাড়িতে থাকা পরিবারের সবাইকে একে একে হত্যা করে। বঙ্গবন্ধুর শিশুপুত্র শেখ রাসেলও সেদিন ঘাতকের হাত থেকে রেহাই পায়নি। বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা দেশের বাইরে থাকায় সেদিন তারা প্রাণে বেঁচে যান।

এই আগস্টেই বাংলাদেশে ঘটে আরো নৃশংস ঘটনা। ১৭ আগস্ট, ২০০৫ সালের বেলা ১১টার দিকে ঢাকা সহ দেশের ৩০০টি স্থানে ৫০০ বোমা হামলা হয়। ৬৪ জেলার মধ্যে মুন্সীগঞ্জ জেলা বাদে অবশিষ্ট ৬৩টি জেলায় এই হামলা হয়। হাইকোর্ট, সুপ্রিমকোর্ট, জেলা আদালত, বিমানবন্দর, মার্কিন দূতাবাস, জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়, প্রেসক্লাব ও সরকারি-আধা-সরকারি স্থাপনায় বোমা হামলা হয়। আধ ঘণ্টার ব্যবধানে চালানো এ সিরিজ বোমা হামলায় দু’জন নিহত ও দুই শতাধিক মানুষ আহত হন।

২১ আগস্ট, ২০০৪ সালে ঢাকায় আওয়ামী লীগের এক জনসভায় গ্রেনেড হামলা হয়। যে হামলায় ২৪ জন নিহত হয় এবং তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা সহ প্রায় ৩০০ লোক আহত হয়- এই ঘটনাই একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলা হিসাবে পরিচিত।

২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ভয়বহতা এবং এর আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকাওে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর সমাবেশের ২১ আগস্টের সেই ভয়ংকর ঘটনা পুরো বিশ্বকেই নাড়া দিয়েছিলো যা তাদের পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় স্পষ্ট হয়েছিলো। তখন ভারত, চীন, যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপ- সবাই দফায় দফায় এ নিয়ে বিবৃতি দিয়েছে, কথা বলেছে।’ তিনি আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে ৯/১১ এর হামলার পর তখন এমনিতেই বিশ্ব সন্ত্রাসবাদ নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলো এবং যুক্তরাষ্ট্র ও সমমনা দেশগুলো এ বিষয়ে বৈশ্বিকভাবে কাজ করছিলো। এমন এক পরিস্থিতিতে ঢাকার সেই ভয়াবহ হামলা সন্ত্রাসবাদের ঝুঁকিকেই আরও স্পষ্ট করে দিয়েছিলো- যে কারণে গ্রেনেড হামলা নিয়ে পশ্চিমা বিশ্বে এবং আঞ্চলিক শক্তিগুলোর মধ্যে বেশ উদ্বেগ তৈরি হয়েছিলো।

২১ আগস্ট বিকেলে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশে হামলার খবর মুহূর্তেই সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে এবং ঐ দিন রাত থেকে পরবর্তী কয়েক দিনের মধ্যে শেখ হাসিনার সাথে টেলিফোনে কথা বলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ কয়েকজন বিশ^নেতা। এছাড়া বিভিন্ন দেশ, সংস্থা ও মানবাধিকার সংগঠন থেকে বিবৃতি দিতে থাকে।

ঘটনার দিন রাতেই শেখ হাসিনার সাথে টেলিফোনে কথা বলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। তিনি শেখ হাসিনার সাথে সার্বিক বিষয় নিয়ে অনেকক্ষণ আলোচনা করেন। পরের দিন টেলিফোনে কথা বলেন তখনকার তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী এরবাকেন, ভারতের কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী, লোকসভার বিরোধী দলীয় নেতা আদভানি এবং যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টিনা রোকো। তাঁরা সকলেই শেখ হাসিনার স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নেন এবং হামলার ঘটনায় নিন্দা জানান। ঐ দিনই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ গভীর দু:খ প্রকাশ করেন, যা দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী কলিন পাওয়েল শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে ফোন করে জানান। ২৫শে আগস্ট কমনওয়েলথ সেক্রেটারি জেনারেল ডন ম্যাককিনন শেখ হাসিনাকে ফোন করেন এবং তার স্বাস্থ্যের খোঁজ নেন। এভাবেই বিশ^ নেতারা সেই দিন গ্রেনেড হামলায় আহত শেখ হাসিনার কাছে টেলিফোনে কথা বলেন এবং আহত ও নিহতদের খোঁজখবর নেন।

২১ আগস্ট বিকালে হামলার ঘটনা বিশ্ব গণমাধ্যমে প্রচারের পরপরই বিভিন্ন দেশ থেকে বিবৃতি দেয়া শুরু হয়। ঘটনার কয়েক ঘন্টার মধ্যে প্রথম বিবৃতি দেন জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়শকা ফিশার। এরপর পরপরই পৃথক ভাবে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ভারতীয় হাইকমিশনের পক্ষ থেকে বিবৃতি আসে। প্রতিটি দেশ ও সংস্থার বিবৃতিতেই স্পষ্টভাবে হামলার সাথে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহবান জানানো হয়েছিলো। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র তার বিবৃতিতে বলেন, ‘এধরণের ঘৃণ্য রাজনৈতিক সন্ত্রাসের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।

বিরোধী দলের নেতৃত্বের উপর এমন হামলা সফল হলে এটি গণতন্ত্র ও বাংলাদেশের ভবিষ্যতকে ক্ষতিগ্রস্ত করতো।’ পরে ওয়াশিংটনে দেয়া এক বিবৃতিতে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার আহবান জানান। ইউরোপীয় কূটনীতিকদের যৌথ বিবৃতিটির মূল কথা ছিলো এমন, সরকারকে হামলার ঘটনা তদন্ত করে দায়ীদের বিচারের আওতায় আনা এবং একই সাথে শেখ হাসিনার নিরাপত্তা জোরদারের নিশ্চিত ব্যবস্থা করা। জাপান ও অস্ট্রেলিয় পৃথক বিবৃতি দিয়ে বলেন, এই ঘৃণ্য হামলার ঘটনার কোন যুক্তি থাকতে পারে না। এছাড়া বিবৃতিতে সব পক্ষকে ধৈর্য ধারণ করা এবং জড়িতদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়। ২১ আগস্ট হামলার ঘটনায় তখনকার জাতিসংঘ মহাসচিব কফি আনান ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান এবং ঘটনা তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করার কথা বলেন।

হামলার ঘটনার পর বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধান এবং রাষ্ট্রপ্রধানদের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রদূতগণ শেখ হাসিনার সাথে দেখা করেন এবং নিজ দেশের সরকার প্রধানদের বার্তা পৌছে দেন। প্রথমেই আলাদাভাবে সাক্ষাৎ করেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত হ্যারি কে টমাস ও ভারতীয় রাষ্ট্রদূত বিনা সিক্রী। তারা আলাদাভাবে শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাত করে তাকে সমবেদনা জানান ও পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন। পরবর্তীতে সাক্ষাৎ করেন ব্রিটিশ হাই কমিশনার আনোয়ার চৌধুরী। এছাড়া নেদারল্যান্ড, সুইডেন, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, জার্মানি, ইটালি ও শ্রীরংকার রাষ্ট্রদূতরাও শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ করে নিজ দেশের সরকার প্রধানের বার্তা পৌঁছে দেন। এছাড়াও পাকিস্তানের সিনেটর ইকবাল হায়দার শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ করেন। ঘটনার পাঁচদিন পর ২৬শে আগস্ট ঢাকায় কূটনৈতিক কোরের ডীন শাহতা জারাবের নেতৃত্বে ১৯ জন কূটনীতিক শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং পরে তারা ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের ওপর গুরুত্ব প্রদান করেন।

২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনার পর এভাবেই আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া আসতে থাকে। যার মাধ্যমে এই ঘটনার ভয়াবহতা এবং ঘটনা পরবর্তী ফলাফল যে অনেক বেশি আশংকাজনক ছিলো তা সহজেই অনুমেয়। আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ার ফলে সেই সময়ে বিরোধী দল যেমন সাহস পাচ্ছিলো, তেমনি সরকারও ঘটনার তদন্ত ও বিচারের জন্য চাপের মধ্যে ছিলো।


 আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ায় ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা 

-- মোঃ হেলাল উদ্দিন

 

 পত্রিকায় প্রকাশিত লেখার লিঙ্কঃ

 আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ায় ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা 

Tuesday, August 15, 2023

ষড়যন্ত্র চলছে জেনেও বঙ্গবন্ধু বাঙালিদের প্রতি বিশ্বাস রেখেছিলেন -- মোঃ হেলাল উদ্দিন

সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার প্রেক্ষপট বর্ণনা করতে গিয়ে তাঁর একান্ত সচিব ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দীন আহমদ বলেন, সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের গতি রুখতেই হত্যা করা হয়ে ছিলো জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর পরিবারকে। আর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সেই চক্রান্ত তারাই বাস্তবায়ন করেছে, যাদের বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করেছিলেন, পরম ভরসায় ঠাঁই দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত আগেই পেয়েছিলেন্, কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশে তাঁরই আস্থাভাজনরা ইতিহাসের সবরচেয়ে বিশ^াসঘাতকতার নমুনা তারাই তৈরি করবে এটা তিনি ভাবতেই পারেননি।


১৫ আগস্ট, ১৯৭৫ সালের ভোররাত অন্য সকল ভোর রাতের মতো শান্ত ছিলো না। কেননা শ্রাবণের সেই ভোর রাতে স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে ঘটে গিয়েছিলো ইতিহাসের নির্মম-নৃশংস হত্যাকান্ড, যে হত্যাকান্ড হলো সেই রাষ্ট্রের স্রষ্টা জাতির পিতার হত্যাকান্ড। ১৫ আগস্টের সেই রাতের ঘটনা সম্পর্কে ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, ভোর পাঁচটা বা পাঁচটা বেজে পাঁচ মিনিটে ফোন এলো, আব্দুল মালেক ভূইয়া কনফিডেন্সিয়াল অফিসার, তিনি বললেন স্যার তাড়াতাড়ি রেডিও শুনেন, সামথিং টেরিবল হ্যাজ হ্যাপেন।  আমি  তাকে বললাম কি হয়েছে মালেক সাহেব। তিনি বললেন বঙ্গবন্ধু আর নেই। আমি তাকে বললাম আপনি আমার সঙ্গে মসকরা করছেন? রেডিও ধরলাম, মেজর ডালিম তার জঘণ্য ঘোষণাগুলো দিচ্ছে। তখন ফোন করলাম বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে কেউ ফোন ধরলেন না।


বঙ্গবন্ধু যাদের বেশি বিশ্বাস করতেন, যারা সব সময় বঙ্গবন্ধুর অতি কাছে থাকতেন তারাই বঙ্গবন্ধুর সপরিবাবে হত্যার পর ৩২ নম্বরের বাড়িতে নিথর লাশগুলো রেখে মন্ত্রিসভা গঠনে যোগ দিলেন। বঙ্গবন্ধুর নিথর দেহ সিড়িতে পড়ে আছে আর সেই মুজিব সরকারের ২১ জন যোগ দেন মোশতাকের মন্ত্রিসভায়। অথচ এরা সবাই ছিলেন বঙ্গবন্ধুর আস্থাভাজন ব্যক্তি, যাদেও নিয়ে বঙ্গবন্ধু গড়তে চেয়েছিলেন সোনার বাংলা। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তার লাশ ফেলে রেখে যারা মন্ত্রিসভা গঠনে ব্যস্ত তাদের সম্পর্কে ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, টিভিতে দেখলাম, যে সমস্ত বেইমানরা বঙ্গবন্ধুর পায়ের কাছে পড়ে থাকতো, তার অনুগ্রহের জন্য কেলাইতো, তারা মোশতাকের পাশে দাঁড়ানোর জন্য ঠেলাঠেলি করছে।


এ থেকে অনুমান করা যায়, বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড নিছক সেনাবাহিনীর উচ্চাভিলাসী অফিসারদের শুধু নয়, এর পিছনে রয়েছে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র। বঙ্গবন্ধুকে ভারত সতর্ক করেছিলো, আমেরিকাও সতর্ক করেছিলো। তারা বঙ্গবন্ধুকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলেছিলো কিন্তু বঙ্গবন্ধু কোথাও যাবেন না, তিনি তার ভালোবাসার মানুষদের উপর দৃঢ় বিশ্বাস রেখেছিলো এবং ২৫ মার্চের সাহসিকতা দিয়ে ১৫ই আগসেটর রাতকেও মোকাবিলা করতে চেয়েছিলেন। এ সম্পর্কে ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড ছিলো আন্তর্জাতিক চক্রান্ত। অনেকেই বলে গোয়েন্দা ব্যর্থতা, তিনি বলেন গোয়েন্দা পাটির্সিপেশন। বঙ্গবন্ধু ষড়যন্ত্রের বিষয়টি অনুমান করতে পেরেই খন্দকার মোশতাককে পশ্চিম জার্মানিতে রাষ্ট্রদূত নিয়োগ দিয়েছিলেন, যাতে আপদ দূরে থাকে। কিন্তু ঐ অর্ডার চাপ দিয়ে বাতিল করা হয়েছিলো, কারা করেছিলো এই কাজ? তারা কি বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের ষড়যন্ত্রের সাথে যুক্ত নয়? জাতির পিতা এই সকল বিষয় বুঝতে পারার পরেও শুধু বাঙালিদের প্রতি অগাধ বিশ্বাস আর ভালোবাসার কারণে গুরুত্ব দেয়নি। তিনি বিশ্বাস করতেন যারা তাঁকে এতো ভালোবাসে তারা কখনও তা৭কে হত্যা করতে পারবে না। কিন্তু বাস্তবে জাতির পিতাকে হত্যা করতে বাঙালিদের হাত কাঁপেনি, অথচ তিনিই এনে দিয়েছিলে আমাদের স্বাধীনতা।


বঙ্গবন্ধু হত্যার পর আইন করে এই হত্যাকান্ডের বিচার পর্যন্ত রোধ করা হয়েছিলো। দীর্ঘ ২১ বছর পর শেখ হাসিনার সরকার এই ইনডেমনিটি আইন বাতিল করে বিচারের পথ সুগম করেন। বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে বহু বাধা পেরিয়ে ৩৪ বছর পর হত্যার বিচার সম্পন্ন করে ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি ৫ আসামির ফাঁসির রায় কার্যকর করার মাধ্যমে জাতিকে কিছুটা দায়মুক্ত করা হয়। বাকি আসামীদের বিচারের রায় বাস্তবায়নের মাধ্যমে জাতিকে পুরো কলঙ্কমুক্ত করে বঙ্গবন্ধুর আস্থা, বিশ্বাস আর ভালোবাসা মর্যাদা রক্ষা করা হবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

 


মোঃ হেলাল উদ্দিন
প্রভাষক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান
ফেলো, বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ গবেষণা ইনস্টিটিউট


 

দৈনিক এশিয়া বাণী'তে প্রকাশিত লেখার লিঙ্কঃ 

ষড়যন্ত্র চলছে জেনেও বঙ্গবন্ধু বাঙালিদের প্রতি বিশ্বাস রেখেছিলেন 

Saturday, August 12, 2023

ভূল -- মোঃ হেলাল উদ্দিন

একদিন হঠাৎ একটা ফোন
একটা সুন্দরী ললনার কন্ঠ
তারপর ভালোবাসা
একসাথে অনেক পথ চলা
হঠাৎ একদিন ভুল বুঝা
তারপর তার চলে যাওয়া।

আবার একদিন একটা ফোন
ভেঙ্গেছে তার ভুল
কিন্তু হয়েছে অনেক দেরী
সে আজ অন্যের ঘরণী।

আর কি তাকে ফিরে পেতে পারি?
 
 
ভূল 

Thursday, August 10, 2023

'শেখ মুজিব আমার পিতা' বই নিয়ে কিছু কথা -- মোঃ হেলাল উদ্দিন

'শেখ মুজিব আমার পিতা বইটি মূলত বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কতৃর্ক লিখিত একটি স্মৃতিকথামূলক আত্নজৈবনিক রচনা। বইটি চারটি প্রধান ভাগে বিভক্ত করে দশটি লেখা স্থান পেয়েছে। যেখানে আছে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি, মুক্তিযুদ্ধ ও পারিবারিক কথা, স্মরণ-শ্রদ্ধার্ঘ্য এবং ছেঁড়া ছেঁড়া কবি নামে একানব্বইয়ের ডায়েরি।

বইটির ভূমিকা লিখেছেন অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম এবং প্রস্তাবনা লিখেছেন কলকাতার পার্থ ঘোষ। এই লেখা দুইটিতে মূলত শেখ হাসিনার লেখাগুলোকে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। বইয়ের ভূমিকায় শেখ হাসিনাকে একজন জাত লেখক হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। কেননা, রাজনৈতিক ব্যক্তিরা তাদের ব্যস্ততার কারনে লেখার দিকে সময় দেন না বললেই চলে, সেখানে শেখ হাসিনা ১৯৮৩ সাল থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত নানান প্রতিকূল পরিবেশেও তার লেখায় বিরতি দেননি। তার পাঁচটি স্বরচিত বই এবং দুইটি যৌথ সম্পাদিত বই রয়েছে। এছাড়াও মাঝে মধ্যে তার লেখা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। প্রস্তাবনায় শেখ হাসিনার প্রতিটা লেখার অত্যন্ত সুন্দর করে একটা সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ করেছেন।

বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি অংশে 'শেখ মুজিব আমার পিতা', 'বঙ্গবন্ধু ও তার সেনাবাহিনী' এবং 'ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকান্ড' এই তিনটি প্রবন্ধ রয়েছে। প্রথমটিতে বঙ্গবন্ধুর শৈশব থেকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তার সকল বিষয়গুলো খুব সুন্দর করে তুলে ধরেছেন। বঙ্গবন্ধু যেই পরিবেশে যেই শিক্ষা নিয়ে শৈশব পার করে রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছেন এবং দেশ ও জনগণের জন্য জীবনের প্রতিটা মুহুর্তে যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন তার বর্ণনা দিয়েছেন। দ্বিতীয় প্রবন্ধে আমরা দেখি বঙ্গবন্ধুর দেশরক্ষার কৌশল হিসাবে সেনাবাহিনীর জন্য কার্যকর করা নানান পদক্ষেপের কথা, যার দ্বারা তিনি দেশরক্ষা করতে চেয়েছিলেন কিন্তু সেই সেনাবাহিনীই কিভাবে বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। তৃতীয় প্রবন্ধে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের একটা হৃদয় বিদারক বর্ণনা দিয়েছেন। যেই বর্ণনাগুলো আমাদের হৃদয়ে নাড়া দিয়ে যায়।

দ্বিতীয় ভাগে'স্মৃতির দখিন দুয়ার', 'স্মৃতি বড় মধুর, স্মৃতি বড় বেদনার' প্রবন্ধে লিখেছেন মুক্তিযুদ্ধ ও পারিবারিক জীবনের কথা। হাতের মুঠে জীবন নিয়ে কি রকম দুর্বিষহ জীবন পার করতে হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোতে। বেগম মুজিবের চরিত্রের নির্ভীকতা, তার নানান গুনের কথা, পরিবারের অন্যান্য সকলের কথা উঠে এসেছে এই লেখাগুলোতে। শহরের কোলাহল আর রাজনৈতিক ব্যস্ততার মধ্যেও যে তিনি গ্রামকে কতো পছন্দ করেন তা তার লেখায় পাওয়া যায়। তিনি লিখেছেন, 'আমার জীবনের শেষ দিনগুলো আমি টুঙ্গিপাড়ায় স্থায়ীভাবে কাটাতে চাই।'

তৃতীয় অংশ স্মরণ-শ্রদ্ধার্ঘ্য শিরোনামে তিনি তিনজন ব্যক্তিকে স্মরণ করেছেন। প্রথম জন ড. আবদুল মতিন চৌধুরী, যিনি ছিলেন শেখ হাসিনার শিক্ষক, যার প্রভাব ছিলো তার জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দ্বিতীয় জন শহীদ জননী বেগম জাহানারা ইমাম, যার সাথে ছিল শেখ হাসিনার জীবনের বেদনার মিল। একজন হারিয়েছেন মা বাবা সহ পরিবারের সবাইকে, আরেকজন হারিয়েছেন স্বামী, সন্তানদের, সবাই শহীদ হয়েছিল এই বাংলাদেশের জন্য। শেষ ব্যক্তি নূর হোসেন, যিনি আন্দোলনের প্রতীক। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য বুকের তাজা রক্ত দিয়েছিল এই নূর হোসেন। শেখ হাসিনা তার স্মরণে লিখেছন, 'তুমি প্রতিবাদের প্রতীক।.... তুমি আজ পোস্টার হয়ে রয়েছো প্রতিটি মুক্তিকামী হৃদয়ে।'

একানব্বইয়ের ডায়েরিতে কিছু কিছু স্মৃতি তুলে ধরেছেন ঐ সময়ের। বিশেষ করে ১৯৯১ এর সাইক্লোনে ক্ষতিগ্রস্তদের কথা তুলে ধরেছেন। সেই সময়ের পার্লামেন্টের একটা কথা তুলে ধরেছেন। বিরোধী দলের নেতা হয়ে সাধারণ মানুষের পাশে দাড়িয়ে তিনি যে সাহায্য করেছিলেন এবং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী যে নির্লিপ্ত আচরণ করেছিলেন তার বর্ণনা করেছেন।

বইটির নাম দেখলে মনে হতে পারে এটা শুধু বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা। কিন্তু বাস্তবে বইটি বঙ্গবন্ধুর জীবন এবং শেখ হাসিনার আত্মস্মৃতির কথা তুলে ধরা হয়েছে। অত্যন্ত সুন্দর ও সাবলীল ভাষায়, মাঝে মাঝে কাব্যিক ধারায়, কখনো হৃদয় বিদারক বর্ণনায় বইটি হয়ে উঠেছে বাস্তব দৃশ্যপট।


বইঃ শেখ মুজিব আমার পিতা

লেখকঃ শেখ হাসিনা

প্রকাশকঃ আগামী প্রকাশনী

মূল্যঃ ২৫০ টাকা।

Md. Helal Uddin

      09/06/2022

ভেসে যাওয়া স্বপ্নরা -- মোঃ হেলাল উদ্দিন

মাঝরাত

বাইরে অঝোর ধারায় বৃষ্টি

সবাই ঘুমের ঘোরে স্বপ্ন বুনছে।

আর আমি?

আমি জেগে আছি একা

কোথাও কেউ নেই, কিছু নেই

আছে শুধু টিনের চালে বৃষ্টির শব্দ

আর সাথে আমার ঘুমহীন দু'চোখ ভরা স্বপ্ন।

এমন বৃষ্টির রাতে যদি তুমি পাশে থাকতে!

আমি বেলকুনিতে বসে, হাত রেখে তোমার হাতে

বৃষ্টির ছোঁয়ার সাথে

তোমার ভালোবাসার সুখ নিতাম।

হ্যাঁ, ভালোবাসার সুখ!!

যে সুখের দেখা আজো পাইনি।

মাঝে মাঝেই ভাবি কেন এমন হয়

কেন ভালোবাসা আমার কাছে ধরা দেয় না

কেন দু'চোখের স্বপ্ন আমার দু'চোখেই থেকে যায়?

না-কি আমিই ভালোবাসতে জানি না

ভালোবাসা বুঝি না।

না কোন কিছুরই উত্তর মিলেনি, আজো মিলছে না।

তবুও বৃষ্টি পরছে, টিনের চালে ঝুমঝুম শব্দ হচ্ছে

আর আমার স্বপ্নরা, আমার ভাবনাগুলো

বৃষ্টির জলে ভেসে যাচ্ছে ঠিকানা বিহীন।

 

_______________
06/07/2016