Thursday, August 10, 2023

'শেখ মুজিব আমার পিতা' বই নিয়ে কিছু কথা -- মোঃ হেলাল উদ্দিন

'শেখ মুজিব আমার পিতা বইটি মূলত বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কতৃর্ক লিখিত একটি স্মৃতিকথামূলক আত্নজৈবনিক রচনা। বইটি চারটি প্রধান ভাগে বিভক্ত করে দশটি লেখা স্থান পেয়েছে। যেখানে আছে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি, মুক্তিযুদ্ধ ও পারিবারিক কথা, স্মরণ-শ্রদ্ধার্ঘ্য এবং ছেঁড়া ছেঁড়া কবি নামে একানব্বইয়ের ডায়েরি।

বইটির ভূমিকা লিখেছেন অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম এবং প্রস্তাবনা লিখেছেন কলকাতার পার্থ ঘোষ। এই লেখা দুইটিতে মূলত শেখ হাসিনার লেখাগুলোকে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। বইয়ের ভূমিকায় শেখ হাসিনাকে একজন জাত লেখক হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। কেননা, রাজনৈতিক ব্যক্তিরা তাদের ব্যস্ততার কারনে লেখার দিকে সময় দেন না বললেই চলে, সেখানে শেখ হাসিনা ১৯৮৩ সাল থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত নানান প্রতিকূল পরিবেশেও তার লেখায় বিরতি দেননি। তার পাঁচটি স্বরচিত বই এবং দুইটি যৌথ সম্পাদিত বই রয়েছে। এছাড়াও মাঝে মধ্যে তার লেখা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। প্রস্তাবনায় শেখ হাসিনার প্রতিটা লেখার অত্যন্ত সুন্দর করে একটা সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ করেছেন।

বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি অংশে 'শেখ মুজিব আমার পিতা', 'বঙ্গবন্ধু ও তার সেনাবাহিনী' এবং 'ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকান্ড' এই তিনটি প্রবন্ধ রয়েছে। প্রথমটিতে বঙ্গবন্ধুর শৈশব থেকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তার সকল বিষয়গুলো খুব সুন্দর করে তুলে ধরেছেন। বঙ্গবন্ধু যেই পরিবেশে যেই শিক্ষা নিয়ে শৈশব পার করে রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছেন এবং দেশ ও জনগণের জন্য জীবনের প্রতিটা মুহুর্তে যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন তার বর্ণনা দিয়েছেন। দ্বিতীয় প্রবন্ধে আমরা দেখি বঙ্গবন্ধুর দেশরক্ষার কৌশল হিসাবে সেনাবাহিনীর জন্য কার্যকর করা নানান পদক্ষেপের কথা, যার দ্বারা তিনি দেশরক্ষা করতে চেয়েছিলেন কিন্তু সেই সেনাবাহিনীই কিভাবে বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। তৃতীয় প্রবন্ধে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডের একটা হৃদয় বিদারক বর্ণনা দিয়েছেন। যেই বর্ণনাগুলো আমাদের হৃদয়ে নাড়া দিয়ে যায়।

দ্বিতীয় ভাগে'স্মৃতির দখিন দুয়ার', 'স্মৃতি বড় মধুর, স্মৃতি বড় বেদনার' প্রবন্ধে লিখেছেন মুক্তিযুদ্ধ ও পারিবারিক জীবনের কথা। হাতের মুঠে জীবন নিয়ে কি রকম দুর্বিষহ জীবন পার করতে হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোতে। বেগম মুজিবের চরিত্রের নির্ভীকতা, তার নানান গুনের কথা, পরিবারের অন্যান্য সকলের কথা উঠে এসেছে এই লেখাগুলোতে। শহরের কোলাহল আর রাজনৈতিক ব্যস্ততার মধ্যেও যে তিনি গ্রামকে কতো পছন্দ করেন তা তার লেখায় পাওয়া যায়। তিনি লিখেছেন, 'আমার জীবনের শেষ দিনগুলো আমি টুঙ্গিপাড়ায় স্থায়ীভাবে কাটাতে চাই।'

তৃতীয় অংশ স্মরণ-শ্রদ্ধার্ঘ্য শিরোনামে তিনি তিনজন ব্যক্তিকে স্মরণ করেছেন। প্রথম জন ড. আবদুল মতিন চৌধুরী, যিনি ছিলেন শেখ হাসিনার শিক্ষক, যার প্রভাব ছিলো তার জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দ্বিতীয় জন শহীদ জননী বেগম জাহানারা ইমাম, যার সাথে ছিল শেখ হাসিনার জীবনের বেদনার মিল। একজন হারিয়েছেন মা বাবা সহ পরিবারের সবাইকে, আরেকজন হারিয়েছেন স্বামী, সন্তানদের, সবাই শহীদ হয়েছিল এই বাংলাদেশের জন্য। শেষ ব্যক্তি নূর হোসেন, যিনি আন্দোলনের প্রতীক। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য বুকের তাজা রক্ত দিয়েছিল এই নূর হোসেন। শেখ হাসিনা তার স্মরণে লিখেছন, 'তুমি প্রতিবাদের প্রতীক।.... তুমি আজ পোস্টার হয়ে রয়েছো প্রতিটি মুক্তিকামী হৃদয়ে।'

একানব্বইয়ের ডায়েরিতে কিছু কিছু স্মৃতি তুলে ধরেছেন ঐ সময়ের। বিশেষ করে ১৯৯১ এর সাইক্লোনে ক্ষতিগ্রস্তদের কথা তুলে ধরেছেন। সেই সময়ের পার্লামেন্টের একটা কথা তুলে ধরেছেন। বিরোধী দলের নেতা হয়ে সাধারণ মানুষের পাশে দাড়িয়ে তিনি যে সাহায্য করেছিলেন এবং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী যে নির্লিপ্ত আচরণ করেছিলেন তার বর্ণনা করেছেন।

বইটির নাম দেখলে মনে হতে পারে এটা শুধু বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা। কিন্তু বাস্তবে বইটি বঙ্গবন্ধুর জীবন এবং শেখ হাসিনার আত্মস্মৃতির কথা তুলে ধরা হয়েছে। অত্যন্ত সুন্দর ও সাবলীল ভাষায়, মাঝে মাঝে কাব্যিক ধারায়, কখনো হৃদয় বিদারক বর্ণনায় বইটি হয়ে উঠেছে বাস্তব দৃশ্যপট।


বইঃ শেখ মুজিব আমার পিতা

লেখকঃ শেখ হাসিনা

প্রকাশকঃ আগামী প্রকাশনী

মূল্যঃ ২৫০ টাকা।

Md. Helal Uddin

      09/06/2022

1 comment:

  1. অনেক সুন্দর আলোচনা করেছেন।

    ReplyDelete