Saturday, August 6, 2022

৩৩তম বিসিএস এর আট বছর পূর্তি এবং শিক্ষা ক্যাডার

আজ ৬ আগস্ট ২০২২, ৩৩তম বিসিএস এর ৮ বছর পূর্তি হলো। ৩৩তম বিসিএস এর মাধ্যমে নিয়োগ পেয়ে এই ৮ বছর প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসাবে যারা নিয়োজিত থেকে রাষ্ট্রকে সেবা দিয়েছেন এবং সামনের দিনগুলোতেও সেবা দিবেন তাদের সকলকে অভিনন্দন ও শুভ কামনা।

৩৩তম বিসিএস এর যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০১২ সালে। ২০১৪ সালের ৭ আগস্ট কর্মস্থলে যোগদানের মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়ার সমাপ্তি ঘটে এবং শুরু হয় তরুণ ক্যাডার কর্মকর্তাদের স্বপ্নের চাকুরিতে নতুন পদযাত্রা। একই পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়ার পরেও বিভিন্ন ক্যাডারের মধ্যে যোগদান প্রক্রিয়ার সময় থেকেই এক ধরনের বৈষম্য চোখে ধরা পড়ে। বিশেষ করে শিক্ষা ক্যাডারের যোগদান প্রক্রিয়া দেখে মনে হয়েছি আসলেই শিক্ষা ক্যাডার কি একটা ক্যাডার? নাকি এটা বাংলা সিনেমায় দেখা সেই মাস্টার মশাই। ৯৩০ জন তরুণ ক্যাডার কর্মকর্তার যোগদান হয়েছিল ঐ দিন দেশের বিভিন্ন সরকারি কলেজে। কিন্তু অন্যান্য ক্যাডারে যোগদানের সময় তারা যেমন আয়োজন দেখেছে শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের তার সৌভাগ্য হয়নি। যদিও ৩৩বিসিএস কে পরবর্তিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একটা সংবর্ধনার ব্যবস্থা করেছিলো কিন্তু এরপরে অনেকগুলো ব্যাচ যোগদান করলেও তাদের সেই সৌভাগ্যটাও হয়নি। এভাবেই চাকুরিতে যোগদানের দিন থেকে যেই বৈষম্যের শুরু তা চলমান আছে, হয়তো চাকুরির শেষ দিন পর্যন্তা চলমান থাকবে।

আন্তঃক্যাডার বৈষম্যের শুরু চাকুরিতে প্রবেশের মাধ্যমে আর ধাপে ধাপে তা বাড়তে থাকে। চাকুরির নিয়োগ বিধি অনুযায়ী বিভাগীয় পরীক্ষায় পাশ, চাকুরি স্থায়ী হওয়া, সিনিয়র স্কেল তথা পদোন্নতি পরীক্ষায় পাশ এবং চাকুরির বয়স পাঁচ বছর পূর্ণ হলে তারা পদোন্নতির যোগ্য হবেন এবং পদোন্নতি পাবেন। শিক্ষা ক্যাডার বাদে অন্য সকল ক্যাডারে এই নীতি সুন্দরভাবে অনুসরণ করা হলেও শিক্ষা ক্যাডারের বেলায় তা কখনোই প্রযোজ্য হয়নি। ৩৩তম বিসিএস এর অন্যান্য ক্যাডার কর্মকর্তারা যেখানে পাঁচ কিংবা ছয় বছরে পদোন্নতি পেয়ে ষষ্ঠ গ্রেডে কর্মরত সেখানে শিক্ষা ক্যাডার এখনো নবম গ্রেডে বর্তমান রয়েছে। এই পদোন্নতির বৈষম্য তা শুধু আর্থিক ব্যবধানকেই বাড়িয়ে দেয়না, সামাজিক বৈষম্যও বাড়িয়ে দেয়। তাই অন্যান্য ক্যাডার কর্মকর্তারা যে সকল বাড়তি সুযোগ পায় তা না দিতে পারুক অন্তত পদোন্নতির সুযোগটা দেয়া খুবই জরুরী। আজ আট বছরে এসে পদোন্নতি পেলে আর্থিক কোন সুবিধা বাড়বে না আর সরকারের আর্থিক কোন ক্ষতিও হবে না, শুধু কর্মকর্তাদের পদবীটাই পরিবর্তন হবে, তারপরেও পদোন্নতি না পাওয়ার মতো বৈষম্য আর কি হতে পারে?

বিভিন্ন ক্যাডারের কাজের ধরন অনুযায়ী বিশেষ কিছু সুবিধা দিতে হয়, এ নিয়ে কিছু বলার নেই। কিন্তু কমন কিছু সুযোগ সুবিধা তো সকলকে দিতে হবে, না হলে কর্মকর্তারা কাজের উৎসাহ হারিয়ে ফেলবে এটাই তো স্বাভাবিক। বিশেষ করে শিক্ষা ক্যাডারে যে ধরনের বৈষম্য বিদ্যমান তাতে এক সময়ে মেধাবীদেরকে তো শিক্ষা ক্যাডারে পাওয়া যাবে না, তথাপি তারা আসবেও তার সুযোগ পেলেই এটা ছেড়ে চলে যাবে।

বলা হয় শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। তাই মেরুদণ্ডকে সোজা না রাখতে পারলে জাতি হিসাবে তো ঠিকে থাকা যাবেনা। শিক্ষাখাতকে অবহেলা করে কোন জাতিই উন্নতি সাধন করতে পারেনি আর সামনেও পারবে না। তাই চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের এই সময়কে বিবেচনায় রেখে হলেও শিক্ষাকে এবং শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে যথাযথ প্রাপ্যটুকো দিন। আন্তঃক্যাডার বৈষম্য দূর করে ক্যাডারের মাঝে সমতা বিধান করুন, মেধাবীদেরকে শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়ে আসুন সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে সহায়তা করুন।

প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন আন্তঃক্যাডার বৈষম্য দূরীকরণ, তার বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবী। অন্যান্য ক্যাডারের সাথে শিক্ষা ক্যাডারের পদোন্নতি, আবাসন, যাতায়াত, বেতন গ্রেড, নিয়ন্ত্রণের মতো হাজারো বৈষম্য বিদ্যমান। এখানে পদোন্নতি নিয়ে কিছু কথা বলা হলো মাত্র। আশা করবো পদোন্নতির বৈষম্য দূরীকরণের মাধ্যমে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য দূরকরার উদ্যোগ শুরু হবে। ৩৩তম বিসিএস এর সকল কর্মকর্তাদের আবারো অভিনন্দন।








Md. Helal Uddin 
      06/08/2022

No comments:

Post a Comment