Sunday, March 30, 2025

ঈদ মাসের বেতন বোনাস এবং গার্মেন্টস মালিক -- মোঃ হেলাল উদ্দিন

বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের বড় একটা অংশ আসে গার্মেন্টস শিল্প থেকে, যেখানে হাজার হাজার শ্রমিক তাদের শ্রম দিয়ে থাকে। শ্রমিকদের শ্রমের ঘামের উপর দিয়ে মালিক আরো নতুন নতুন কারখানার মালিক হন, কিন্তু শ্রমিকদের ভাগ্য বদলায় না। তাদের শ্রমের বিনিময়ে পাওয়া বেতনের টাকা কারখানার আশেপাশে থাকা আর খাওয়াতেই শেষ হয়ে যায়, কিন্তু শ্রমিকের শ্রমের বিনিময়ে প্রাপ্ত মুনাফায় মালিকের মালিকানা বৃদ্ধি পায়।

মালিকানা বৃদ্ধি পাবে তাই তো মালিক টাকা বিনিয়োগ করে এ কথা সত্য, তবে মনে রাখতে হবে বিনিয়োগের টাকার সাথে শ্রমিক তার শ্রম বিনিয়োগ করে তাই মুনাফার অংশ তাদেরও প্রাপ্য। মুনাফার অংশ না দিক শ্রমের বিনিময় মূল্য তো সঠিকভাবে সঠিক সময়ে দিয়ে দিবে। গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন ভাতা সঠিক সময়ে দিতে সমস্যা কোথায়? অন্যান্য সময় এ নিয়ে তেমন কোন কথা না শুনলেও প্রতি ঈদের সময় এই সমস্যাটা প্রকট আকার ধারণ করে। কিন্তু কেন?

প্রতি ঈদের সময়ই শ্রমিকদের বেতন দেয়া, বোনাস দেয়া নিয়ে প্রকট সমস্যা দেখা দেয়। যেটাকে আমার কাছে মনে হয় অনেকটা ইচ্ছাকৃত। কেননা বছরের দুই ঈদ বাদে তো এমন সমস্যার খবর দেখতে পাইনা। তাহলে কি মালিকপক্ষ এটা ইচ্ছাকৃত করেন? আমার কাছে তো তাই মনে হয়। আমার ধারণা সরকার থেকে বিশেষ প্রণোদনা কিন্তু অন্য কোন উপায়ে টাকা হাতিয়ে নেয়ার জন্য এমন নাটক মঞ্চস্থ করা হয়। কেননা, প্রতি বছরই দেখা যায় গার্মেন্টস মালিকপক্ষ শ্রমিকদের বেতন ভাতা দিতে পারবে না কিংবা আংশিক দিবে বলে তারা ঠিকই আনন্দ ভ্রমণে, ওমরাহ্ পালন করতে কিংবা ঈদ শপিং করতে বিদেশ চলে যায়। তাদের এই টাকা আসে কোথা থেকে? কেউ কি জানতে চেয়েছেন।

যাইহোক, সামনে আসছে ঈদ। এই ঈদেও শ্রমিকদের চোখের জল দেখতে হচ্ছে, যা মোটেও কাম্য নয়। আশাকরি সরকার এই বিষয়ে কঠোর হবেন এবং ঈদের আগেই শ্রমিকদের বেতন বোনাস পাবার ব্যবস্থা করে সাধারণ শ্রমিকের মুখে হাসি ফুটাবেন।

Tuesday, March 25, 2025

মাধবীলতা ০৬ -- মোঃ হেলাল উদ্দিন

মাধবীলতা
কাল যে তোমার পরীক্ষা
জানি, তবুও ভীষণ মিস করো
ভীষণ মিস করো আমাকে
পড়ার মাঝে মন দিতে পারছো না
আমার কথা ভেবে ভেবে।।
 
মাধবীলতা
এমন করলে কি হবে বলো
সময়ের কাজতো সময়েই করতে হয় তাই-না
সময়তো আর বসে থাকেনা
সে ছুটে চলছে তার আপন গতিতে
তার সাথে তাল মিলিয়েই আমাদের চলতে হবে
চলতে হবে, ছুটতে হবে, সফলতা ধরা দিবে।।
 
মাধবীলতা
জানি, তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে
কষ্ট হচ্ছে আমায় ছাড়া দূরে একা থাকতে
আমার কি খুব ভালো লাগছে
তুমি পাশে না থাকলে কি করো বলো ভালো থাকি
না, ভালো থাকতে পারিনা
তবুও থাকতে হয়, একা থাকি
শুধু তোমার সফলতা দেখবো বলে
তোমার জীবনের স্বার্থকতা দেখবো বলে।।
 
মাধবীলতা
তুমি কেন বুঝনা, কেন বুঝতে চাওনা
একটি বার ভেবে দেখো
আমার ইচ্ছাগুলো কি তোমার থেকে ভিন্ন
না মোটেই না, তোমার আমার স্বপ্নগুলো একই
হয়তো তুমি বলো আর আমি
আমি মুখ বুঝে থাকি আর মনে মনে ছবি আঁকি
ছবি আঁকি তোমার আমার স্বপ্নের নীড়ের।।
 
মাধবীলতা
আমিও স্বপ্ন দেখতে জানি
জানি, কি করে স্বপ্ন পূরণ করতে হয়
আমার নিজের একটা স্বপ্নের পৃথিবী আছে
আছে মাধবীলতাকে অঙ্গে জড়িয়ে রাখার ইচ্ছা
এমনই এক রাজ্যের স্বপ্নের ছবি বুকের মাঝে
যেখানে তুমি আমি দু'জনে থাকবো সুখে
থাকবো মিশে দু'জনার বাহুডোরে
ভালোবেসে দু'জন দু'জনাকে চিরতরে।।
 
মাধবীলতা
তুমি সফল হও
তোমার স্বপ্ন পূরণ হোক
তোমার ইচ্ছেগুলোরা ডানা মেলে উড়ে বেড়াক
এইতো আমার চাওয়া
সত্যিই এইতো আমার একান্ত চাওয়া
দূরে থাকার দিনগুলো কমে যাক
কমে যাক খুব দ্রুত
কাছে থাকবো সারা জীবন তোমার সাথে
তোমার সাথে জড়িয়ে থাকবো
বৃক্ষের সাথে লতা যেমন জড়িয়ে থাকে
মাধবীলতা, এমন করেই থাকবো।।
 

মাধবীলতা ০৬ -- মোঃ হেলাল উদ্দিন

হতাম যদি আমি -- মোঃ হেলাল উদ্দিন

আমি যদি শিল্পী হতাম
আঁকতাম তোমার ছবি
লিখতাম তোমায় নিয়ে কবিতা
আমি হতাম যদি কবি।

বানাতাম তোমার মূর্তি
ভাস্কর হতাম যদি
সোনায় সোনায় ভরিয়ে দিতাম
আমি হতাম যদি ধনী।

আমি অতি সাধারণ
আমার আছে ভালোবাসার মন
দিতে পারবো ভালোবাসা অফুরন।

তাতে কি তুমি হবে সুখী
ভরবে কি তোমার মন
তাতে কি পূর্ণ হবে তোমার জীবন।
 
হতাম যদি আমি -- মোঃ হেলাল উদ্দিন 

বৈশাখী মেঘ -- মোঃ হেলাল উদ্দিন


বৈশাখী মেঘের কাছে আমি কি চাইব
কি দিতে পারবে সে আমাকে
সে কি ফিরিয়ে দিতে পারবে
আমার মনের মানুষকে।।
যে হারিয়ে গেছে কোন এক
কাল বৈশাখীর ঝড়ে।।
সে কি ফিরিয়ে দিতে পারবে
আমার স্মৃতিময় মধুর দিনগুলো
যেই দিনগুলো ছিল শুধুই আনন্দের।।
সেই সুখময় দিনগুলো
হারানো প্রিয়জনকেই
বৈশাখী মেঘের কাছে আমার চাওয়া।।
----------------------
©Md. Helal Uddin®
        27/04/2016

Monday, March 24, 2025

হুমায়ুন আজাদের নারী, নারীবাদের এক দলিল -- মোঃ হেলাল উদ্দিন


নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি মানুষের আকর্ষণ আদিকালের স্বভাব, জন্ম জন্মান্তরের স্বভাব। এই স্বভাবকে নিজের নিয়ন্ত্রণে যারা আনতে পারে দিনশেষে তারা হয় অন্যান্য ব্যাক্তিত্বের মালিক। তবে ভুলে গেলে চলবে না, এই অন্যান্য ব্যাক্তিত্বের সংখ্যা অত্যান্ত গৌন। আর যা সহজে পাওয়া যায় তাকে নিষিদ্ধ করার অর্থ হলো আমি চাই ওই বিষয়টির প্রতিই যেন সবার নজর যায়। নারী বইয়ের ক্ষেত্রেও এমন হয়েছে। হুমায়ূন আজাদ রচিত নারী বইটি প্রকাশ পায় ১৯৯২ সালে। প্রকাশের চার বছর পূর্ণ হওয়ার বেশ আগেই, ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দের ১৯ নভেম্বর নারী নিষিদ্ধ করে তখনকার গণতান্ত্রিক সরকার। এরপর ৭ মার্চ ২০০০ সালে উচ্চ বিচারালয় কর্তৃক নিষিদ্ধকরণ আদেশ অবৈধ ঘোষণা করা হয়।
 
এই বইটিতে আছে মোট ২১টি অধ্যায়। তৃতীয় সংস্করণে আছে মোট ৪০৮ পৃষ্ঠা এবং নারীবাদ ও নারীবাদের কালপঞ্জি, রচনাপঞ্জি, নির্ঘন্ট সহ মোট ২৪টি অধ্যায়।
 
বইটি লেখার দৃষ্টিভঙ্গি
বইটি নারীদের জন্য লিখিত সমাজের অবস্থার বিচারে নারীবাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে লেখা প্রথম বই। বইটি যেহেতু নারীবাদী দৃষ্টিভঙ্গিতে লেখা সে কারণে বইটি যে নারীদের জন্য হয়ে উঠেছে এমনটা না। বর্তমানে তো নারীবাদী শব্দটা নিজের নামের পাশে লাগানোটা এক ধরণের ফ্যাশনেবল হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভুলে গেলে চলবে না, আন্দোলন কখনো ফ্যাশনেবল হয় না। সকল মত ও বিশ্বাসের সাথে বিভিন্ন কুসংস্কারকে মিলিয়ে সকল মতগুলোকে এক বাক্যে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়া যে নৈতিকতার মধ্যে পড়ে না তা বর্তমানে দেখা যায় নারীবাদী আদর্শে। কিছুটা এমন যে, বিজ্ঞানমনস্ক যেমন বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানের জন্য কল্যানকর কিছু নয়, তেমনই প্রচলিত নারীবাদী প্রথাও নারীদের জন্য কল্যানকর নয়। বরং কুসংস্কারের মতোই ক্ষতিকর। তবে বইটি যেহেতু প্রবন্ধগ্রন্থ, তাই এখানে থাকা প্রতিটি বিষয়ের সাথে যেমন দ্বিমত হওয়া সম্ভব নয়, তেমনই একমত হওয়াও সম্ভব নয়।
তবে বইটির পড়লে অন্তত কিছু বিষয় শেখা যাবে, কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকা যাবে। অকাট ভাবে সব বিশ্বাস করে নিয়ে সমাজে তার প্রয়োগও ক্ষতিকর হবে।
 
বই সম্পর্কিত পর্যালোচনা
বইয়ের মূল প্রবন্ধালোচনার পূর্বে লেখক হুমায়ুন আজাদ তার বইয়ের সংস্করণ ভুমিকাতে বই নিয়ে এবং বই সম্পর্কিত অভিজ্ঞতার আলোকে নানা বিষয় তুলে আলোচনা করেছেন। তবে তার ভাষায় বয়ান দিয়েছেন বইটি প্রচলিত সমাজের নানা প্রথাকে ভেঙে দেওয়ার জন্য যথেচ্ছ। লেখকের লেখার প্রতি বিশ্বাস ও নিজস্ব বিশ্বাসের ভিত্তিতে এটা বলাই যায়। তবে তার বইটি কতটা প্রথাবিরোধী হয়ে আলোময় হবে তার বিচার তো করবে পাঠকবৃন্দ৷ তবে তার নিজস্ব বিশ্বাসের ভিত্তিতে দুইটি বিষয় স্পষ্ট হয়-
১) লেখকের আত্মবিশ্বাস।
২) অন্যান্য সকল মত ও বিশ্বাসকে গলা চেপে ধরা। একমাত্র নিজস্ব মতকেই সঠিক এবং তাৎপর্যপূর্ণ বিশ্বাস করে অটল থেকে অন্যান্য বিশ্বাসকে অস্বীকার করে ফেলা।
প্রথমটি যৌক্তিক হলে আমার মতে দ্বিতীয়টি অমূলক। কেননা, মানুষ মাত্রই আমরা মৌলিক। সবার চাহিদা এক নয়। এখন একজনের স্বাধীনতার সাথে অন্যজনের স্বাধীনতা মিল হবে না এটাই স্বাভাবিক। সেখানে লেখক যদি তার নিজস্ব আলোচনাকেই একমাত্র বৈধ ও কার্যকরী মনে করেন তবে তা গ্রহণযোগ্য বলে গণ্য হবে না। হওয়ার মতোও নয়। অপরদিকে, তিনি যে পুরুষতান্ত্রিকতার বিরোধীতা করে কথা বলেছেন, তিনি নিজেও তো একজন পুরুষ! একজন নারীর স্বাধীনতা তো যদি তার মতের সাথে না থাকে তার মানে কি তার মতটি পুরুষতান্ত্রিক পরিচিতি বাহক নয়?
লেখক অবতারণা অংশে লিখেছেন, প্রতিক্রিয়াশীলতার প্রথম শিকার নারী। প্রতিক্রিয়াশীলেরা সমাজ দখল করে প্রথমেই নারীকে সমাজ থেকে বের করে দেয়। অর্থাৎ তার সব অধিকার বাতিল করে ঘরে ঢুকিয়ে তাকে করে তুলে পুরুষের দাসীও ভোগবস্তু।
লেখক এখানে নিজের চিন্তাকে মৌলবাদীতার পরিচয়ে দীক্ষা দিয়েছেন বলে আমার বিশ্বাস। কেননা তিনি যে দৃষ্টিকোণ থেকে বলেছেন, তা আধৌ নারীদের জন্য সমান ভাবে স্বস্থিদায়ক?
একজন নারী ঘরে কাজ করে মানে কি তার কাজের মূল্য নেই?
শুধুমাত্র অর্থনৈতিক প্রাপ্তিগুলোই সকল অধিকারের মূল? যদি এমনটা হয়ে থাকে তবে লেখকের দাবী সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। কেননা, নারীদের স্বভাবসূলব অন্যতম বৈশিষ্ট্য তারা ঘরে স্বস্থিবোধ করেন এবং নিজস্ব স্পেসে থাকতে চায়।
একজন ঘরে কাজ করলে অপরজন বাহিরে কাজ করলে কি এটা অর্থ দাঁড়ায় যে, যে ব্যাক্তি ঘরে কাজ করে সে মানুষ নয়। বরং যে বাহিরে কাজ করে সেই একমাত্র মানুষ?
পঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় সমাজের ক্ষমতার উৎস ওই অর্থের উপরই নির্ভর করে। যে ক্ষমতা অর্থের ভিত্তিতে পাওয়া যায়, তাই কি শুধুমাত্র নারীদের মুক্তির মানদণ্ড হতে পারে? নারীবাদী দৃষ্টিকোণ এখানেই লেখকের চিন্তার মধ্য দিয়ে মৌলবাদী চিন্তাধারা প্রকাশ করেছে। লেখকের এমন কথাগুলো নারীর অনুভুতি এবং স্বস্থিগত স্পেসকে রুদ্ধ করে দিয়েছে।
বইটি লেখার উদ্দেশ্যতে লেখক বলেছেন, নারীপুরুষের সার্বিক সাম্য। লেখকের এমন উদ্দেশ্য ও ব্যবহৃত শব্দের সাথে আমি সম্পুর্ন একমত।
সাধারণত আমাদের সমাজে ব্যবহৃত হয়, পুরুষের মতো নারীকেও সমান অধিকার দিতে হবে। এখানে তুলনাগত দিকটাই ভুল। নারীকে পুরুষের মতো হতে হবেই এমন চিন্তাধারা ভুল। পুরুষ ও নারীর মধ্যে শুধুমাত্র শারিরীক বৈশিষ্ট্য'র ভিন্নতাই নেই। বরং মানসিক ও অনুভুতিমূলক বৈপরীত্যও বিরাজ করে। তাহলে একমাত্র মানুষ হওয়ার মাপকাঠিতে পুরুষ ই বিবেচিত হবে? এ ব্যাপারে ড. মুহাম্মদ আকরাম নদভীর "আল মুহাদ্দিসাত গ্রন্থের একটি অংশ তুলে ধরছি "যদি পুরুষ পারে, তবে নারী কেন পারবে না' ধারণাটি আরও একটি কারণে এই বইয়ের পাঠকদের বিভ্রান্ত করতে পারে। কারণ, ধারণাটি দাঁড়িয়ে আছে কিছু অনিরাপদ অনুমানের ওপর। যেমন : মনে করা হয়, নারী ও পুরুষের মধ্যকার প্রাকৃতিক পার্থক্য যদি আইন ও সামাজিক রীতিনীতি দ্বারা আরও বেশি করে বাড়িয়ে তোলা হয়, তবে তা হবে নারীর প্রতি একধরনের অবিচার। এমনকি অনেকে এই যুক্তিও দেখান, নারী-পুরুষের প্রাকৃতিক পার্থক্যগুলো সামাজিক, আইনি কিংবা জৈব প্রকৌশলের (Bioengineering) মাধ্যমে কমিয়ে এনে নারীর প্রতি অবিচার রোধ করা উচিত। তারা মনে করে—এই প্রকৌশল আমরা প্রয়োগ করতে পারি। কারণ, এসব পার্থক্যের বিরাট কোনো মূল্য নেই। বাস্তব জীবনের সঙ্গে এগুলো সম্পর্কিতও নয়।"
 
নারী প্রবন্ধমূলক বই। এতে লেখক আলোচনা করেছেন নারীকেন্দ্রিক বিষয়গুলোর উপস্থিতি। বিভিন্ন অঞ্চলে হওয়া নারীদের নিয়ে হওয়া কুসংস্কার গুলো। বার বার পুরুষের বানানো আইন হয়, নারীর ক্ষেত্রে কঠোরভাবে এবং পুরুষের ক্ষেত্রে শিথিলতায় যুক্ত।
নারীর মন ও মানসিক স্বস্থি আধৌ কোথায় তা না বোঝার যে অক্ষমতা সেগুলোকেও লেখক তুলে এনেছেন। নানা ভাবে নিজের ভাষায় মত প্রকাশ করেছেন, বিভিন্ন মানুষের মতগুলোকেও তুলে এনেছেন তিনি এবং তার করেছেন বিশ্লেষণ। তবে বিশ্লেষণ করেছেন স্পষ্ট ভাষায়। সেগুলোকে কিছুটা লেখক নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখলেও তার বেশিরভাগই সত্য। শুধু সত্যই নয়, সেগুলো সমাজে আজও প্রতিষ্ঠিত। তবুও লেখকের সমস্ত আলোচনার ভিত্তিতে লেখাকে দুইভাগে বিভক্ত করা যায়-
 
১) সমালোচনাঃ- এ অংশে লেখক বিভিন্ন ব্যাক্তি, ধর্ম ও সমাজে হওয়া নানা বিশ্বাস ও কুসংস্কারের বিরোধীতা করে সমালোচনা করেছেন। তবে সমালোচনায় অপূর্ণতা ছিলো এই ভেবে যে, লেখক সেগুলো পূর্ণাঙ্গ ভাবে তুলে ধরেননি। কেবল যে কথাগুলোকে তিনি সমালোচনার জন্য নিতে পারেন এবং তার সমালোচনার আলোচনার সাথে সম্পর্কিত সে অংশই।
প্রথম অংশে আমরা দেখতে পাই, লেখক শুরুই করেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নারীবিশ্বাস ও বর্ণনার সমালোচনা দ্বারা। তবে এখানে লেখক, সমস্ত পুরুষের এক মহৎ প্রতিনিধি বলেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে। লেখক এখানে কোন যুক্তিতে সমস্ত পুরুষের প্রতিনিধিরুপে ঠাকুরকে সাভ্যস্থ করেছেন ধ্রুবভাবে তা ব্যাখ্যা করেননাই। বিষয়টি আমার কাছে যৌক্তিকতার বিচারে সম্পুর্ন অযৌক্তিক শাব্দিক সৃষ্টি বলে মনে হয়েছে।
তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সহ সিগমুন্ড ফ্রুয়েডদের তিনি সমালোচনা করেছেন। সমালোচনায় এনেছেন বিভিন্ন ধর্মীয় গ্রন্থের কথাগুলো। তবে লেখক এখানে যে বিষয়টি ভুল করেছেন তা হলো, নিজের আলোচনার প্রাসঙ্গিকতার সাথে যে কথা গিয়েছে স্রেফ ততটুকুই নিয়েছেন। তবে একবারও বুঝতে চেষ্টা করেন নাই, কিভাবে ও কোন পরিস্থিতিতে কিসের ভিত্তিতে কথাগুলো বলেছেন। ফলে লেখক প্রাণহীন সঞ্চারীরুপে কথাগুলো বিচার করেছেন। লেখক নারীকে প্রশংসাসূচক শব্দগুলোকে কামনা বাসনায় পূর্ণ দাবী করেছেন, যেন শব্দগুলো শুনলেই যৌন উত্তেজনা তৈরি হয় পুরুষের মনে। যদি তা শুনলে পুরুষের মধ্যে তা জাগে না।
তবে লেখক তার নিজের ভাষায় যা বলেছেন তাতে অনেকটাই বাস্তবসম্মত। আজও সমাজে নারীলোক, বেডি, মেয়েমানুষ বললে অনেকে নাকছিটকায়। তাদের ভাবটা এমন যেন, নারী শব্দটাও কদাচিৎ!
লেখক বিভিন্ন ধর্মের সাথে ইসলাম ধর্মীয় গ্রন্থের সুরা নিসার ৩৪ নম্বর আয়াতকে রেফারেন্স টেনে সেখানে অনুবাদে স্রেফ ভাষান্তর নিজ ভাষায় প্রকাশ করেছেন। তবে এই আয়াতকে তিনি ব্যাখ্যা করেছেন নিজের মতো করে যদিও তার উপস্থিতি শুন্য। অথচ উচিৎ ছিলো প্রশ্ন করা "পুরুষরা কি "নারীর দায়িত্বে"?
“ধার্মিক নারীদের” বৈশিষ্ট্য কী?
নুশুজ কী এবং এর পরিণতি কী?
একজন পুরুষ কি তার স্ত্রীকে আঘাত করতে পারে?"
যৌনতা একটি প্রানীদের মৌলিক /বেসিক নীড। এটার জন্য স্ত্রীজাত ও পুরুষজাতকে তৈরি করা হয়েছে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে। ফলে মিলন দন্ড কিংবা যোনী-স্তন-জরায়ু থাকা মানে এই নয়, সে অপক্ষমতায় আক্রান্ত। লেখক এখানে প্রানীর দৈহিক বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী মনস্তাত্ত্বিক গঠনকে চিন্তা না করেই, স্রেফ একজনের উপরে অন্যজনের উঠাকেই সাভ্যস্থ করেছেন নারীর অধিনতার। বিষয়টির সাথে রাজনৈতিক আক্ষা দিয়েছেন যদিও তা যথেষ্ট যৌক্তিক আলোচনা সাপেক্ষে। তবে তার বিপরীতের বিশ্লেষণ কিংবা যুক্তিগুলোকে আপোষে পাশ কাটিয়ে গিয়েছেন।
মূল কথা, লেখক সমালোচনা করেছেন যাদের তার ব্যাপারে লেখকের অজ্ঞতার পরিমান ই বেশি ছিলো। কোন সময়ে, কিসের ভিত্তিতে, কি বুঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে তা লেখক প্রকাশ করেননাই, এবং নিজে বুঝতে পেরেছেন নেতিবাচক ভাবে।
ফলে সমালোচনার বেশিরভাগটাই অপূর্ণ হলেও তার উত্থাপিত বিষয়গুলোকে অস্বীকার করার উপায়ও নেই।
লেখক বলেছেন, "পুরুষতন্ত্র প্রচার করে যে পুরুষের প্রভুত্ব ও নারীর অধীনতা প্রাকৃতিক বা স্বাভাবিক। কোনো কিছুকে প্রাকৃতিক/স্বাভাবিক বলার অর্থ হচ্ছে তা মানুষের তৈরি নয়, তা কোনো শাশ্বত বিধানের ফল । তাই তা প্রশ্নের ওপরে, তা অসংশোধনীয়। কিন্তু মানুষের জীবনে কোনো কিছুই শাশ্বত নয় : বিধাতা, ধর্ম, রাজা, প্রজা, ধনী, দরিদ্র সবই মানুষের তৈরি। সুবিধাভোগীরা চিরকালই দোহাই দেয় ঈশ্বরের, প্রকৃতির, স্বভাবের; কেননা তাতে রক্ষা পায় তাদের স্বার্থ।"
এখানে লেখকের সাথে দ্বিমত যেমন তেমনই একমতও আমি। কেননা লেখক, দাবী করেছেন মানুষের জীবনে কোনো কিছুই শ্বাশত নয়। তাহলে আমরা শ্বাশত বিষয়গুলোর উপস্থিতি কেন পাই? কেন আমাদের সৃষ্টিজগতেই শ্বাশত্যের হাজারো রহস্যময় অস্তিত্বের দেখা পাই? একই সাথে লেখক বলেছেন স্বার্থবাদীদের কথা। যুগে যুগে, প্রতিটি সময়েই আমরা এদের দেখতে পাই। স্রেফ এদের কারণেই ওই বিশ্বাসের প্রকৃত উৎসকে কুসংস্কার ভাবাটা অন্যায় ও বোকামী।
 
২) আলোচনাঃ- এ অংশে লেখক যারা যুগে যুগে নারীদের অধিকারের জন্য কাজ করেছেন তাদের কথাই টেনেছেন। তবে তার মতের একাত্ম গুলোকেই তিনি প্রাধান্য দিয়েছেন বেশি। লেখক নানা ধরণের কুসংস্কার গুলো তুলে ধরেছেন। একজন মানুষ হুমায়ুন আজাদকে অপছন্দ করতেই পারে, ঘৃণাও করতে পারে। তবে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন অঞ্চলে চর্চা হওয়া কুসংস্কারগুলোর প্রতি নিন্দা জাগবেই তা পড়লে।
আমি মনে করি, এটাও লেখকের লেখার স্বার্থকতা। বইটিতে ব্যবহৃত হয়েছে নানা কুসংস্কারের উদাহরণ সেগুলো সব তো আর তুলে ধরা সম্ভব না। সুদানের একটা অন্ধত্বে নিমজ্জিত কুসংস্কারের কথাই বলা যাক। নারীদের খৎনার প্রচলনের উদাহরণ দিয়েছেন লেখক। যোনীতে ঋতুস্রাব ও মুত্ররন্ধ্র অল্প খোলা রেখে যোনী পাতা সহ পুরোটাই সেলাই করা হতো! একবার ভাবুন কতটা নিষ্ঠুরতা ও কথিত আধিপত্যের জন্য অমানুষিক কাজ হলে এমনটা ঘটে!
বিবাহের পরে পুরুষাঙ্গ প্রবেশের জন্য হালকা খুলে দেওয়া হয়, সন্তান প্রসব কালে আরও একটু খুলে দেওয়া হয়।
এরপর স্বামী মারা গেলে বা বিবাহ বিচ্ছেদ হলে আবারও সেলাই করে দেওয়া হতো! যোনীর উপর, স্তনের উপর, জরায়ুর উপর, নারীর পায়ুপথের উপর পুরুষের এমন নোংরা আধিপত্যগুলোর কঠোর সমালোচনার সাথে সেগুলোর বিরুদ্ধে থাকা মানুষগুলোর কথাও তুলে ধরেছেন লেখক।
এখানে লেখক নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ দেখাতে ব্যার্থ হয়েছেন।
 
 Baatighar Dhaka - নারী হুমায়ুন আজাদ মূল্য ৳ ৪০০ অনলাইনে অর্ডার করুন :  baatighar.com/shop/product/5400 বাতিঘরের যে কোন শাখায় যোগাযোগ করতে ইনবক্স  করুন : linktr.ee ...
 
বইঃ নারী
লেখকঃ হুমায়ুন আজাদ
প্রকাশকঃ আগামী প্রকাশন
মূল্যঃ ৪০০ টাকা মাত্র

Sunday, March 23, 2025

রমাযানের শেষ দশকের আমলঃ লাইলাতুল কদর -- মোঃ হেলাল উদ্দিন

মহান আল্লাহর বাণীঃ ‘‘নিশ্চয়ই আমি নাযিল করেছি এ কুরআন মহিমান্বিত রাত্রিতে। আর আপনি কি জানেন মহিমান্বিত রাত্রি কী? মহিমান্বিত রাত্রি হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। সেই রাত্রে প্রত্যেক কাজের জন্য ফেরেশতাগণ এবং রূহ তাদের প্রতিপালকের আদেশক্রমে অবতীর্ণ হয়। সেই রাত্রি শান্তিই শান্তি, ফজর হওয়া পর্যন্ত।’’ (আল-কদরঃ ১-৫)

এখানে মহিমান্বিত রাত্রি বলতে লাইলাতুল কদরের কথা বলা হয়েছে, যা পবিত্র রমাযানের শেষ দশক তথা নাজাতের দশ রাতের কোন এক রাত্রিতে রয়েছে। তাই রমাযানের শেষ দশকের আমলে একটা অন্যতম আমল হলো লাইলাতুল কদরের রাত্রিতে বেশি বেশি ইবাদাত করা। লাইলাতুল কদরের রাত্রি রমযানের কোন তারিখে এবং এই রাত্রিতে ইবাদাতের ফযিলত কি এই সম্পর্কে সহহী বুখারী শরীফের কতিপয় হাদিস নিয়ে আলোচনা করা হলো।

উবাদা ইবনুস সামিত (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে লাইলাতুল কদরের (নির্দিষ্ট তারিখ) অবহিত করার জন্য বের হয়েছিলেন। তখন দু’জন মুসলিম ঝগড়া করছিল। তা দেখে তিনি বললেনঃ আমি তোমাদেরকে লাইলাতুল কদরের সংবাদ দিবার জন্য বের হয়েছিলাম, তখন অমুক অমুক ঝগড়া করছিল, ফলে তার (নির্দিষ্ট তারিখের) পরিচয় হারিয়ে যায়। সম্ভবতঃ এর মধ্যে তোমাদের জন্য কল্যাণ নিহিত রয়েছে। তোমরা নবম, সপ্তম ও পঞ্চম রাতে তা তালাশ কর। (৪৯) (ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৮৯৩)

‘আয়িশাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন রমাযানের শেষ দশক আসত তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর লুঙ্গি কষে নিতেন (বেশি বেশি ইবাদতের প্রস্তুতি নিতেন) এবং রাত্র জেগে থাকতেন ও পরিবার-পরিজনকে জাগিয়ে দিতেন। (মুসলিম ১৪/৩, হাঃ ১১৭৪)  (ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৮৯৪)

ইবনু ‘উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর কতিপয় সাহাবীকে স্বপ্নের মাধ্যমে রমাযানের শেষের সাত রাত্রে লাইলাতুল ক্বদর দেখানো হয়। (এ শুনে) আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ আমাকেও তোমাদের স্বপ্নের অনুরূপ দেখানো হয়েছে। (তোমাদের দেখা ও আমার দেখা) শেষ সাত দিনের ক্ষেত্রে মিলে গেছে। অতএব যে ব্যক্তি এর সন্ধান প্রত্যাশী, সে যেন শেষ সাত রাতে সন্ধান করে। (১১৫৮, মুসলিম ১৩/৪০, হাঃ ১১৬৫, আহমাদ ৪৫৪৭) (ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৮৮৫)

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তা শেষ দশকে, তা অতিবাহিত নবম রাতে অথবা অবশিষ্ট সপ্তম রাতে অর্থাৎ লাইলাতুল কদর [ক্বদর]। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) হতে অন্য সূত্রে বর্ণিত যে, তোমরা ২৪তম রাতে তালাশ কর। (২০২১) (ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৮৯২)

‘আয়িশাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমাযানের শেষ দশকে ই‘তিকাফ করতেন এবং বলতেনঃ তোমরা রমাযানের শেষ দশকে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান কর। (২০১৭) (ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৮৯০)

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি রমাযানে ঈমানের সাথে ও সওয়াব লাভের আশায় সওম পালন করে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ করে দেয়া হয় এবং যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে, সওয়াব লাভের আশায় লাইলাতুল কদরে রাত জেগে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ করে দেয়া হয়। সুলায়মান ইবনু কাসীর (রহ.) যুহরী (রহ.) হতে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন। (৩৫) (ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১৮৮৪)

পরিশেষে বলা যায়, আল্লাহ তা‘আলা কুরআনুল কারীমের সূরা ক্বদরে ঘোষণা করেছেন- লাইলাতুল ক্বদর হাজার মাসের (ইবাদাতের) চেয়েও উত্তম। সহীহ শুদ্ধ হাদীস থেকে জানা যায় যে, লাইলাতুল ক্বদর রমাযানের শেষ দশ দিনের যে কোন বিজোড় রাত্রিতে হয়ে থাকে। বিভিন্ন সহীহ হাদীসে ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯ তারিখে লাইলাতুল ক্বদর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা উল্লেখিত আছে। হাদীসে এ কথাও উল্লেখিত আছে, যে কোন একটি নির্দিষ্ট বিজোড় রাত্রিতেই তা হয় না। (অর্থাৎ কোন বছর ২৫ তারিখে হল, আবার কোন বছর ২১ তারিখে হল এভাবে। আমাদের দেশে সরকারী আর বেসরকারীভাবে জাঁকজমকের সঙ্গে ২৭ তারিখের রাত্রিকে লাইলাতুল ক্বদরের রাত হিসেবে পালন করা হয়। এভাবে মাত্র একটি রাত্রিকে লাইলাতুল ক্বদর সাব্যস্ত করার কোনই হাদীস নাই। লাইলাতুল ক্বদরের সওয়াব পেতে চাইলে ৫টি বিজোড় রাত্রেই তালাশ করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে লাইলাতুল ক্বদরের সওয়াব পেতে সঠিক রাত্রিতে ইবাদাত করার সুযোগ দান করুন এবং আমাদের রমযান ও রমযান মাসের সকল ইবাদাত কবুল করুন। আমীন।

রমাযানের শেষ দশকের আমলঃ লাইলাতু কদর -- মোঃ হেলাল উদ্দিন

রমাযানের শেষ দশকের আমলঃ লাইলাতুল কদর -- মোঃ হেলাল উদ্দিন

Sunday, March 2, 2025

মাধবীলতা -- মোঃ হেলাল উদ্দিন

 

 

নতুন কবিতার বই

 


 

মাধবীলতা

মোঃ হেলাল উদ্দিন

Tuesday, January 14, 2025

উনিশ শতকের প্রথমার্ধে বাংলা অঞ্চলের নবজাগরণ ও প্রভাব -- মোঃ হেলাল উদ্দিন

 

 Journal of Nawabganj Govt. College Volume 1, Issue 1, September 2023
ISSN 3006 -1741 
Pp.39-45 

'উনিশ শতকের প্রথমার্ধে বাংলা অঞ্চলের নবজাগরণ ও প্রভাব' প্রবন্ধটি পড়তে

Click Here 

Monday, January 13, 2025

উত্তরের অপেক্ষায় -- মোঃ হেলাল উদ্দিন

গুণ'দা, তোমার কথা খুব মনে পড়ছে
মনে পড়ছে তোমার কবিতার সেই কথা
বাইরে থেকে দরোজা খুলতে খুলতে আমি এখন ক্লান্ত ।
গুণ'দা, সত্যি আজ আমি অনেক ক্লান্ত অনেক শ্রান্ত
আজো আমারই বাইরে থেকে দরোজা খুলতে হয়
এঁটে বাসন না হয় আমিই ধুলাম সমস্যা নেই
কাপড় চোপড়ও নিজেই ধুতে পারি কষ্ট নেই
কিন্তু কষ্ট লাগে অপেক্ষা করতে
সত্যিই অনেক কষ্ট হয় তোমার অপেক্ষায় থাকতে
সারা দিনের পরিশ্রম শেষে বাসায় ফিরে
নিজ হাতে দরোজাটা খুলতে অনেক কষ্ট হয়
মনটা অনেক খারাপ হয়ে যায়
একা একা শুয়ে থাকতে আর খেতে বসতে।।
গুণ'দা, কাম-বাসনার সঙ্গী না হয় পেলাম
কিন্তু একাকীত্ব কি দূর হলো
দরোজা খুলতেই কি একটা হাসি মাখা মুখ পাব না
যে দরদ দিয়ে বলবে আজ অনেক গরম পরেছে
বা আজ কি কাজের খুব বেশি চাপ ছিল
এমন কথা কি কখনো শুনতে পাব না।।
গুণ'দা, আমি আর পারছি না
এভাবে আর চলতে পারে না।। 

উত্তরের অপেক্ষায় 

-- মোঃ হেলাল উদ্দিন



অপ্রাপ্তি -- মোঃ হেলাল উদ্দিন

অপ্রাপ্তি
ছোট একটা কথা
কিন্তু কত শত কষ্ট লুকানো
এই ছোট শব্দের মাঝে
হয়ত আমাদের তা অজানা।
কোন অপ্রাপ্তির মাঝে কতটা কষ্ট
কতটা না পাওয়ার বেদনা
হয়তো আমরা দেখিনা,
আমরা শুধুই দেখি একটা অপূর্ণতা।
কিন্তু না, সব সময় একটা অপ্রাপ্তি
শুধুই অপ্রাপ্তি না।
এটা হতে পারে সারা জীবনের কান্না
সারা জীবনের বেদনা।
--------------------------
আচ্ছা, সব অপ্রাপ্তি কি ভাগ্যের লেখা
না কি কোন কোন অপ্রাপ্তি
আমাদের নিজেরই সৃষ্টি
না কি অন্য কারো তৈরি করা।
জানি না, বুঝতেও পারছিনা,
না কি সবই জানি, বুঝি কিন্তু
কিছুই করতে পারি না।
কিছুই করার থাকে না।
অপ্রাপ্তি, অপূর্ণতা
থাক না হয় আর এ কথা।
 

 অপ্রাপ্তি -- মোঃ হেলাল উদ্দিন

ভালোবাসার গল্প -- মোঃ হেলাল উদ্দিন

বৃষ্টিভেজা এক দুপুরবেলা

তোমার আমার প্রথম দেখা

এরপর ভালো লাগা ভালোবাসা

দুইটি মনের মিলন হওয়া

তাইতো স্বপ্ন দেখে দু'টি মন

কবে হবে মধুর মিলন

পাশাপাশি থাকবে সারাক্ষণ

এই ভেবে কাটে ক্ষণ

জানি একদিন হবেই

দু'জনার স্বপ্ন পূরণ।।

 

ভালোবাসার গল্প 

-- মোঃ হেলাল উদ্দিন

বাঙালি মুসলমানের আত্মপরিচয়ের সংকটঃ ১৯৩৭-৪৭ -- মোঃ হেলাল উদ্দিন

 

বাঙালি মুসলমানের আত্মপরিচয়ের সংকটঃ ১৯৩৭-৪৭

ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনৈতিক উন্নয়নের ইতিহাসে ১৯৩৭ থেকে ১৯৪৭ সাল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ের শেষের দিকে ব্রিটিশরা ভারতবর্ষ থেকে তাদের শাসন গুটিয়ে নেয় এবং ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে ব্রিটিশ শাসনের অবসান হয়। এই সময়ের গুরুত্ব আরো যে কারনে বেশি তা হলো- মুসলিম কৃষক শ্রমিকের জাগরণ, জাতীয়তাবাদী আন্দোলন এবং বাঙালি মুসলমানের ভিন্ন আত্মপরিচয়ের ব্যবহার, যা তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য অত্যন্ত ফলপ্রসূভাবে কাজ করেছিলো।

এই সময়ে বাঙালি মুসলিম আত্মপরিচয়ের বিষয়টা সামনে উঠে আসার পিছনে আরো কতিপয় ঘটনা প্রবাহ রয়েছ। ১৯০৬ সালে পত্তন হওয়া মুসলিম লীগ, ১৯১৬ সালের লক্ষ্মৌ চুক্তি, ১৯২৩ সালের বেঙ্গল প্যাক্ট, ১৯২৭ সালের সাইমন কমিশনের রিপোর্ট, তৎপর নেহেরু রিপোর্ট, জিন্নাহর ১৪ দফা প্রস্তাব, ১৯২৮ সালে কলকাতা কংগ্রেস থেকে ওয়ার্কআউট, ১৯২৯ সর্বভারতীয় মুসলিম কনফারেন্সে প্রথম নির্বাচন বলবৎ, ১৯৩০-৩৩ এ রাউন্ড টেবিল কনফারেন্সে যোগদান, মুসলিম মানসিকতা ও তাদের রাজনৈতিক চিন্তাধারার গতি ও পথ পরিবর্তনের ইতিহাস সম্পর্কে একটা আভাস পাওয়া যায়।(১)

১৯৩৭-৪৭ সাল পর্যন্ত সময়ে নিখিল ভারত মুসলিম লীগের নেতৃত্বে ছিলো অবাঙালি মুসলমানদের হাতে। যার কারনে এই সময়ের দুইজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও আবুল হাসিম পাকিস্তান আন্দোলনে সক্রিয় থাকা, কিংবা শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের মন্ত্রীসভা থাকার পরেও বাঙালি মুসলমানরা এক ধরনের আত্মপরিচয়ের সংকটের মধ্যে পরে। এই মুসলমানের আত্মপরিচয়ের সংকট এবং আত্মপরিচয় সম্পর্কে আজকের আলোচনা।

প্রথমে বাঙালির একটা পরিচয় জানার চেষ্টা করি। বাঙালি জাতি দক্ষিণ এশিয়ার একটি ইন্দো-আর্য জাতিগোষ্ঠীর নাম। যারা বাংলাদেশ, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, আসাম, মনিপুরের কিছু অংশ জুড়ে রয়েছে। এরা বাংলা ভাষায় কথা বলে। তাদের সাহিত্য ও সংস্কৃতিচর্চাও বাংলা ভাষাতেই করে থাকে। ধর্মীয় অনুষঙ্গ এবং অনুশীলনের দিক থেকে বাঙালিদের প্রায় ৬৭ শতাংশ জনগোষ্ঠী ইসলাম ধর্মের অনুসারী। তবে বাঙালিদের ধর্মীয় বৈচিত্র্য অনেক বেশি। এখানে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ অনেক ধর্মের লোকের অবস্থান রয়েছে। তবে তারা হলো সংখ্যালঘু। বঙ্গ সভ্যতার ইতিহাস হাজার বছরের পুরানো এবং ভারতবর্ষে বাঙালিদের শাসনের ইতিহাস ও ঐতিহ্য প্রায় হাজার বছরের, যার মধ্যে বাঙালি হিন্দু শাসন এবং অবাঙালি মুসলিম শাসন উভয়ই রয়েছে। শিক্ষা, শিল্প-সাহিত্য, কৃষ্টি-কালচার, জীবন প্রণালী, শাসন ব্যবস্থা প্রভৃতি ক্ষেত্রে বাঙালির একটা ভিন্ন পরিচয় স্বমহিমায় দীর্ঘ সময় ধরে রয়েছে।

মুসলিম আত্মপরিচয়ের কথা তুললে বলা যায় ইসলাম হলো মুসলমানের মূল পরিচয়। তবে আত্মপরিচয় হলো ব্যক্তির নিজস্ব পরিচয়। ব্যক্তির একাধিক আত্মপরিচয় থাকতে পারে। প্রথমে সে মানুষ, এরপরে আসে ধর্মীয় পরিচয়-হিন্দু, মুসলমান বা অন্য ধর্মাবলম্বী, এর সাথে যোগ হয় জাতিগত পরিচয়- বাঙালি, অবাঙালি ইত্যাদি পরিচয়। ভারতবর্ষের বিশেষ করে এই উত্তর অংশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী মুসলমান এবং বাঙালি মুসলমান, কিন্তু মুসলমানদের ধর্মীয় বিশ্বাস ইসলাম এই অঞ্চলে এসেছিল অবাঙালি মুসলমানদের হাত ধরেই। আর এ কারনেই মুসলমানদের মধ্যে তাদের আত্মপরিচয়ের একটা সংকট দেখা দিয়েছিলো। কেননা বাঙালি মুসলমানদের নিয়ন্ত্রণ করতেছিলো অবাঙালি মুসলমানরা। যখন বাঙালি মুসলমানরা শিক্ষা-দীক্ষা, অর্থনীতি এবং রাজনৈতিকভাবে শক্ত অবস্থানে পৌছে যায় তখন বাঙালি মুসলমানের আত্মপরিচয়ের বিষয়টা সবার সামনে চলে আসে। যা ব্রিটিশ শাসনের আগে তেমন ছিলো না, কিন্তু ব্রিটিশ শাসনের একেবারে শেষ দিকে এসে তা প্রবল রুপ ধারণ করে।

আলোচনার মূল সময়কাল ১৯৩৭-৪৭ সাল হলেও একটু পিছনে ফিরলে দেখতে পাই ১৮৭২ সালে ব্রিটিশরা যখন ভারতবর্ষে প্রথম আদমশুমারি বা জনগণনা শুরু করে তখন ভারতবাসীর যে দীর্ঘ দিনের ধারনা হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠতা তাতে অবাক করার মতো ভিন্ন তথ্য দেখা যায়। তৎকালীন বাংলার রাজনীতি, শিক্ষা-দীক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য ছিলো কলকাতা কেন্দ্রিক এবং এখানে হিন্দুদের প্রাধান্য ছিলো। মুসলমানরা ইংরেজপূর্ব শাসনকেন্দ্র মুর্শিদাবাদ ও উত্তরবঙ্গে কিছুটা প্রভাবশালী ছিলো। কিন্তু জনসংখ্যা পরিসংখ্যানের অবাক করা তথ্য বের হলে ইংরেজ কর্মকর্তা জেমস ওয়াইজ লিখেছেন, "১৮৭২ সালের সেনশাসে সবথেকে বেশি ইন্টেরেস্টিং আবিস্কার ছিলো মুসলমানদের পুরানো রাজধানীর বদলে নিম্ন বঙ্গের পাললিক ভূমিতে বিশাল মুসলিম জনসংখ্যা।" এই তথ্য মুসলমানদের আত্মপরিচয় ও তাদের জাতীয়তাবাদ নিয়ে নতুন করে গুরুত্বের সঙ্গে ভাবায়।

দক্ষিণ ও পূর্ববঙ্গে এতো মুসলমান কোথা থেকে আসলো এই নিয়ে বির্তকের সৃষ্টি হয়। বাংলায় মুসলমানদের শাসনকেন্দ্রের বাইরে কিভাবে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করলো তা ব্যাখ্যা করতে বিভারলি (সেনশাসের মূল গণনাকারী) বলেন, "মুঘল রক্ত নয়, বরং নিম্নবর্ণের অধিবাসীরা হিন্দু ধর্মের কঠোর বর্ণপ্রথা থেকে ইসলাম ধর্মে কনভার্ট করেছে।"(২) অর্থাৎ তিনি মুসলমানদের মাইগ্রেশন তত্ত্বকে বাদ দিয়ে সামাজিক মুক্তি তত্ত্ব প্রস্তাব করেন। কিন্তু মুসলমানরা এই তত্ত্বকে চ্যালেঞ্জ করে বলেন, মুসলমানরা নিম্নজাত থেকে ধর্মান্তরিত হয়নি বরং তারা এখানে এসে বসতি স্থাপন করেছে এবং তাদের বহুবিবাহ, উচ্চ জন্মহার প্রভৃতির কারনে তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। মুসলমানদের এই আত্মপরিচয়ের বির্তককে ব্রিটিশরা তাদের স্বার্থে এবং তাদের 'ভাগ কর, শাসন কর' নীতিতে আরো চাঙ্গা করে রেখেছিল।

এদিকে উনিশ শতকে যখন বাঙালিদের বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলন শুরু হয় তখন বাঙালি মুসলমানরা তাদের আত্মপরিচয় দিতে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পরে তাদের সামাজিক, রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক প্রতিকূল অবস্থার কারনে। এ সময়ে বাঙালি হিন্দু ও বাঙালি মুসলমানদের এক ধরনের দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়, তৈরি হয় সাম্প্রদায়িক মনোভাব। এই সমস্যার মূলে ছিলো ধর্ম, যা আবার ভাষাকেও প্রভাবিত করেছিলো। এই ভাষা ভিত্তিক আত্মপরিচয় শুধু হিন্দু-মুসলমানদের মধ্যেই সংকট তৈরি করেনি, বরং তা মুসলমানদের মধ্যেও সংকটের সৃষ্টি করে। কেননা, "ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চলের মুসলমানদের ভাষা, সাহিত্য, শিল্প, ইতিহাস, ঐতিহ্য এক ও অভিন্ন ছিলো না। বিশেষ করে বাঙালি মুসলমানদের সাথে অবাঙালি মুসলমানদের এসব বিষয়ে ভিন্নতা সুস্পষ্ট।"(৩) তাই বাঙালি মুসলমানরা তাদের স্বতন্ত্রতার বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন ছিলো।

১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ হলে মুসলমানদের রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে ১৯০৬ সালে গঠিত হয় মুসলিম লীগ। সেই সময়ের কনফারেন্সে বাঙালি মুসলমানদের শিক্ষার মাধ্যম কি হওয়া উচিত? উর্দু, ফার্সী না বাংলা এমন বির্তক দেখা দিলে পূর্ব বাংলা ও আসামের প্রতিনিধি মৌলভী আব্দুল করিম বাংলার সমার্থনে যুক্তি দেন এই ভাবে, "পূর্ব বাংলার মুসলমানরা তাদের মাতৃভাষা বাংলা ছাড়া আদৌ নিজেদের ভাবতে পারেনা। উর্দু ও ফারসি ভাষা ছাড়াও তারা চলতে পারে। আমি মনে করি, তাদের নিজস্ব অস্তিত্ব সংরক্ষণের প্রয়োজনেই এ নীতি অবলম্বন আবশ্যক।"(৪) ১৯১১ সালে হিন্দুদের তথা অখন্ড বাংলা দাবীকারীদের আন্দোলনের মূল কারণ ছিল হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যকার ভয় যে, ক্ষমতা মুসলমানদের হস্তগত হয়ে যাবে। যদি হিন্দু নেতারা এই সময়ে একটু বাস্তববাদী চিন্তা করতো তাহলে হয়তো পরবর্তী ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাস অন্য রকম হতে পারতো।

বিংশ শতাব্দীতে এসে বাংলার মুসলমানদের ক্ষেত্রে অনেক পরিবর্তন সাধিত হয়। এ সময়ে মুসলমানরা শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণি তৈরিতে সক্ষম হয়, সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে তাদের একটা প্রভাব প্রতিষ্ঠিত হয়। যার ফলে এতোদিনকার অবাঙালিদের মুসলিম রাজনীতিতে নিয়ন্ত্রণ ছিল তা বাঙালি মুসলিম মধ্যবিত্ত ও কৃষক শ্রমিকদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। এ কে ফজলুল হক এই শ্রেণির নেতৃত্বে আসেন। বলা হয়ে থাকে, "বাংলার রাজনৈতিক অঙ্গনে ফজলুল হক ছিলেন অর্ধ শতাব্দীর সূর্য ও বহু উত্থান-পতনের মহানায়ক।"(৫)

১৯৩৪ সালের শেষের দিকে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ লন্ডন থেকে স্থায়ীভাবে ভারতে চলে এসে মুসলিম লীগের স্থায়ী সভাপতি নির্বাচিত হয়ে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশ সফরের মাধ্যমে দল গঠনে মনযোগী হয়ে পরেন। তবে ১৯৩৭ সালে দলের কাউন্সিলে জিন্নাহ দলীয় যোগাযোগের জন্য উর্দু ভাষা নির্ধারণ করার প্রস্তাব দিলে ফজলুল হক তার একশত ডেলিগেট নিয়ে এর বিরোধিতা করলে ঐ প্রস্তাব বাতিল হয়ে যায়। এভাবেও বাঙালি মুসলমানদের আত্মপরিচয় অবাঙালি মুসলমানদের কারনে সংকটের মুখে পরে যায়।

মুসলিম লীগ রাজনীতিতে জিন্নাহর সাথে শেরে বাংলার নানান ইস্যুতে বিভিন্ন সময়ে মত বিরোধ তৈরি হতো। এ সময়ে দলের অন্য নেতারা তাকে সমার্থন না করার কারনে এবং জিন্নাহর কর্তৃত্ববাদী আচরণের জন্য দলের জেনারেল সেক্রেটারি লিয়াকত আলী খানকে চিঠি লিখে ফজলুল হক বলেন, "ভারতের মুসলমানদের মধ্যে বাঙালি মুসলমানদের সংখ্যা এক-তৃতীয়াংশের অধিক। অথচ সেই অনুযায়ী বাংলার প্রতি বাইরের নেতৃত্ব গুরুত্বারোপ করেনা,,,,। আমি বাংলার ৩৩ মিলিয়ন মুসলমানের ভাগ্যের ওপর বাইরের কোন নেতৃত্বকে কর্তৃত্ব করতে দেবনা।"(৬)

১৯৩৭ সালের নির্বাচন বাঙালি মুসলমান এবং বাংলার রাজনীতিতে একটা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। কেননা এই নির্বাচনের মাধ্যমে বাঙালি মুসলমানরা সরকার গঠন করে। যদিও এই নির্বাচনে কোন দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। নির্বাচনে কংগ্রেস ৬০ টি আসন, মুসলিম লীগ ৩৮ টি, প্রজা পার্টি ৩৯ টি এবং স্বতন্ত্র ৩৭ টি আসন থেকে ২১ টি মুসলিম লীগে ও ১৬ টি প্রজা পার্টিতে অংশ নেয়। সর্বাধিক আসন পাওয়া কংগ্রেসকে মন্ত্রীসভা গঠনের আমন্ত্রণ জানালে শরৎ বসু সাম্প্রদায়িক দল মুসলিম লীগের সাথে কোয়ালিশন করতে অপরাগতা প্রকাশ করে। তাই প্রজা পার্টি ও কংগ্রেসের মন্ত্রীসভা গঠনের চেষ্টাও ব্যর্থ হলে শেরে বাংলা সাম্প্রদায়িক দল মুসলিম লীগের সাথে কোয়ালিশন মন্ত্রীসভা গঠন করে। এতে হিন্দু মুসলমানদের মধ্যে একটা দূরত্বের সৃষ্টি হয়। আবার মন্ত্রীসভা গঠনের অল্পদিনের মধ্যেই ফজলুল হক মুসলিম লীগে যোগদান করে তার সভাপতি নির্বাচিত হন। সোহরাওয়ার্দী নির্বাচিত হয় দলের সাধারণ সম্পাদক। দুই বিপরীতমুখী চরিত্রের দুই নেতার সমন্বয়ে মুসলিম লীগ বাংলার রাজনীতিতে ভিন্নমাত্রা দিতে সক্ষম হয়। এছাড়াও মন্ত্রীসভা কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে, যার মধ্যে রয়েছে- ১৯৩৮ সালের 'ঋন সালিশি বোর্ড' স্থাপন, ১৯৩৯ সালের 'প্রজাস্বত্ব আইন', 'কলকাতা মিউনিসিপ্যাল আইন' সংশোধন, ১৯৪০ সালের 'মহাজনি আইন' পাশ হয়। প্রাথমিক শিক্ষা আইন অনুসারে স্কুল বোর্ড গঠন ও মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড গঠন বিল আনায়ন করা হয়।

নির্বাচনের আগের ও পরের আচরণ জিন্নাহর কাছে বিশ্বাস ভঙ্গ মনে হয়। ফলে হিন্দু-মুসলমানের ঐক্যে বিশ্বাসী জিন্নাহ আস্থা হারায় এবং ১৯৪০ সালে তার 'দ্বি-জাতি' তত্ত্ব ঘোষণা করেন। ফলে হিন্দু মুসলমানের মধ্যকার দূরত্ব আরো বৃদ্ধি পায়। আবার বাঙালি ও অবাঙালি মুসলমানদের মধ্যকার সম্পর্কও সংকটে পরে, বিশেষ করে বাঙালি মুসলমানদের আত্মপরিচয় বেশি সংকটে পরে যায়। কেননা বাংলাভাষী মুসলমানদেরকে অবাঙালিরা সব সময় নিয়ন্ত্রণ করতে চাইতো এবং তাদের আত্মপরিচয় বাঙালি মুসলমান নয়, শুধু মুসলমান এটা দেয়ার চেষ্টা করতো। উপমহাদেশের মুসলমানদের স্বার্থে জিন্নাহ 'দ্বিজাতি তত্ত্ব' ঘোষণা করলে বাঙালি মুসলমানরা তাদের স্বতন্ত্র আবাসভূমির চিন্তা করে এবং এই চিন্তার আলোকেই ১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ লাহোরে মুসলিম লীগের বার্ষিক কাউন্সিলে বাংলার মূখ্যমন্ত্রী এ. কে ফজলুল হক উপমহাদেশের মুসলমানদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট 'লাহোর প্রস্তাব' উত্থাপন করেন। যা মুসলমানদের মাঝে এক নতুন প্রেরণার সৃষ্টি করে, স্বতন্ত্র আবাসভূমির আশায় তারা আশান্বিত হয়ে উঠে। ফলে, মুসলিম লীগ ও কংগ্রেসের রাজনীতি পৃথক পৃথক রাষ্ট্র গঠনের আন্দোলনে পরিণত হয়।(৭) তবে বাঙালি মুসলমানদের স্বতন্ত্র রাষ্ট্রচিন্তা জিন্নাহর দ্বিজাতি তত্ত্বের রাষ্ট্রচিন্তা থেকে ভিন্ন ছিলো। বাঙালি মুসলমানরা শুধু পাকিস্তান রাষ্ট্র নয়, তাদের জন্য অখন্ড বাংলা রাষ্ট্রের চিন্তা করতেন।

১৯৩৭ সালের নির্বাচন বাঙালি মুসলমান এবং বাংলার রাজনীতিতে একটা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। কেননা এই নির্বাচনের মাধ্যমে বাঙালি মুসলমানরা সরকার গঠন করে। যদিও এই নির্বাচনে কোন দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। নির্বাচনে কংগ্রেস ৬০ টি আসন, মুসলিম লীগ ৩৮ টি, প্রজা পার্টি ৩৯ টি এবং স্বতন্ত্র ৩৭ টি আসন থেকে ২১ টি মুসলিম লীগে ও ১৬ টি প্রজা পার্টিতে অংশ নেয়। সর্বাধিক আসন পাওয়া কংগ্রেসকে মন্ত্রীসভা গঠনের আমন্ত্রণ জানালে শরৎ বসু সাম্প্রদায়িক দল মুসলিম লীগের সাথে কোয়ালিশন করতে অপরাগতা প্রকাশ করে। তাই প্রজা পার্টি ও কংগ্রেসের মন্ত্রীসভা গঠনের চেষ্টাও ব্যর্থ হলে শেরে বাংলা সাম্প্রদায়িক দল মুসলিম লীগের সাথে কোয়ালিশন মন্ত্রীসভা গঠন করে। এতে হিন্দু মুসলমানদের মধ্যে একটা দূরত্বের সৃষ্টি হয়। আবার মন্ত্রীসভা গঠনের অল্পদিনের মধ্যেই ফজলুল হক মুসলিম লীগে যোগদান করে তার সভাপতি নির্বাচিত হন। সোহরাওয়ার্দী নির্বাচিত হয় দলের সাধারণ সম্পাদক। দুই বিপরীতমুখী চরিত্রের দুই নেতার সমন্বয়ে মুসলিম লীগ বাংলার রাজনীতিতে ভিন্নমাত্রা দিতে সক্ষম হয়। এছাড়াও মন্ত্রীসভা কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে, যার মধ্যে রয়েছে- ১৯৩৮ সালের 'ঋন সালিশি বোর্ড' স্থাপন, ১৯৩৯ সালের 'প্রজাস্বত্ব আইন', 'কলকাতা মিউনিসিপ্যাল আইন' সংশোধন, ১৯৪০ সালের 'মহাজনি আইন' পাশ হয়। প্রাথমিক শিক্ষা আইন অনুসারে স্কুল বোর্ড গঠন ও মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড গঠন বিল আনায়ন করা হয়।

নির্বাচনের আগের ও পরের আচরণ জিন্নাহর কাছে বিশ্বাস ভঙ্গ মনে হয়। ফলে হিন্দু-মুসলমানের ঐক্যে বিশ্বাসী জিন্নাহ আস্থা হারায় এবং ১৯৪০ সালে তার 'দ্বি-জাতি' তত্ত্ব ঘোষণা করেন। ফলে হিন্দু মুসলমানের মধ্যকার দূরত্ব আরো বৃদ্ধি পায়। আবার বাঙালি ও অবাঙালি মুসলমানদের মধ্যকার সম্পর্কও সংকটে পরে, বিশেষ করে বাঙালি মুসলমানদের আত্মপরিচয় বেশি সংকটে পরে যায়। কেননা বাংলাভাষী মুসলমানদেরকে অবাঙালিরা সব সময় নিয়ন্ত্রণ করতে চাইতো এবং তাদের আত্মপরিচয় বাঙালি মুসলমান নয়, শুধু মুসলমান এটা দেয়ার চেষ্টা করতো। উপমহাদেশের মুসলমানদের স্বার্থে জিন্নাহ 'দ্বিজাতি তত্ত্ব' ঘোষণা করলে বাঙালি মুসলমানরা তাদের স্বতন্ত্র আবাসভূমির চিন্তা করে এবং এই চিন্তার আলোকেই ১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ লাহোরে মুসলিম লীগের বার্ষিক কাউন্সিলে বাংলার মূখ্যমন্ত্রী এ. কে ফজলুল হক উপমহাদেশের মুসলমানদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট 'লাহোর প্রস্তাব' উত্থাপন করেন। যা মুসলমানদের মাঝে এক নতুন প্রেরণার সৃষ্টি করে, স্বতন্ত্র আবাসভূমির আশায় তারা আশান্বিত হয়ে উঠে। ফলে, মুসলিম লীগ ও কংগ্রেসের রাজনীতি পৃথক পৃথক রাষ্ট্র গঠনের আন্দোলনে পরিণত হয়।(৮) তবে বাঙালি মুসলমানদের স্বতন্ত্র রাষ্ট্রচিন্তা জিন্নাহর দ্বিজাতি তত্ত্বের রাষ্ট্রচিন্তা থেকে ভিন্ন ছিলো। বাঙালি মুসলমানরা শুধু পাকিস্তান রাষ্ট্র নয়, তাদের জন্য অখন্ড বাংলা রাষ্ট্রের চিন্তা করতেন।

 

তথ্যসূত্রঃ

১। বাংলাদেশের ইতিহাস, নওরোজ প্রকাশ, পৃষ্ঠা- ৪২৫

২। শেকড়ের সন্ধানেঃ বাঙালি মুসলমানদের আত্মপরিচয়, মাহমুদ

৩। দ্বিজাতিতত্ত্ব, লাহোর প্রস্তাব ও বাঙালির রাষ্ট্রচিন্তা, হারুন-অর-রশিদ

৪। বাঙালির রাষ্ট্রচিন্তা ও স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়, হারুন-অর-রশিদ

৫। বাংলাদেশের ইতিহাস, নওরোজ প্রকাশ, পৃষ্ঠা- ৪২৭

৬। মুসলিম লীগ/পাকিস্তান আন্দোলনে বাঙালি অবাঙালি দ্বন্দ্ব, হারুন-অর-রশিদ

৭। বাংলাদেশ রাজনীতি সরকার ও শাসনতান্ত্রিক উন্নয়ন, হারুন-অর-রশিদ

৮। স্বাধীন অখন্ড বাংলা প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ ১৯৪৭ ও বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা, হারুন-অর-রশিদ

 

বাঙালি মুসলমানের আত্মপরিচয়ের সংকটঃ ১৯৩৭-৪৭ 

-- মোঃ হেলাল উদ্দিন




লেখাটি দ্বিমাসিক ইতিহাসের খসড়া পত্রিকায় প্রকাশিত।

ইতিহাসের খসড়া
বর্ষ- ৯ম, সংখ্যা- ৫
মার্চ-এপ্রিল ২০২৩
বৈশাখ ১৪৩০ বাংলা

রক্তক্ষরণ -- মোঃ হেলাল উদ্দিন

শরীরের রক্তক্ষরণ সবাই দেখিতে পায়
কিন্তু হৃদয়ের রক্তক্ষরণের খবর কে নেয় হায়
এইতো জগতের নিয়ম
যাহা দেখা যায়, যাহা পাওয়া যায়
তাহার খবর সবাই নিতে চায়
কিন্তু যাহা দেখা যায় না, যাহা নেয়া যায় না
তাহার খবর কেউ নিতে চায় না।।
আমার সবাই আনন্দ চাই, হাসি চাই
আনন্দের কাছাকাছি থাকতে চাই
কিন্তু ক'জনে তা পারে হায়
সবার মুখের হাসিতো আর এক নয়
কেউ হাসির আড়ালে হাজারো দুঃখ লুকায়
সুখে থাকার, আনন্দের অভিনয় করে যায়
কেউ কেউ সুখেই হেসে লুটিপুটি খায়
আমরা কি কখনো তার আসল জানতে চাই
চাই না, জানতে চাই না, দেখতে চাই না
কখনো একটু বুঝতেও চাই না
কাহার ভিতরে কি লুকানো আছে
কেন কেউ চুপটি মেরে থাকে সবার থেকে
কেন কেউ বিনা কারনেও হাসে
কেন কেউ হাসির মাঝে দুঃখ লুকিয়ে রাখে।।
বাহিরের জগত সবাই দেখে, খবর রাখে
হৃদয়ের জগত কেউ দেখে না, দেখতে চায় না
এই জগতের নিয়ম হায়,
সুখের খবর সবাই রাখে, দুঃখের খবর নয়।।

 

  রক্তক্ষরণ 

-- মোঃ হেলাল উদ্দিন