Wednesday, October 29, 2025

বাংলাদেশ একটি আমলাতান্ত্রিক রাষ্ট্র: বর্তমান বাস্তবতার আলোকে বিশ্লেষণ -- মোঃ হেলাল উদ্দিন

সারসংক্ষেপ (Abstract)

এই গবেষণায় বাংলাদেশের প্রশাসনিক কাঠামো বিশ্লেষণ করে দেখা হয়েছে যে রাষ্ট্র পরিচালনায় আমলাতন্ত্রের ভূমিকা কতটা প্রভাবশালী এবং সেটি গণতান্ত্রিক নীতির সঙ্গে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ। গবেষণার তথ্য বিভিন্ন সংবাদ প্রতিবেদন, নীতিপত্র, এবং সরকারি প্রশাসন সম্পর্কিত গবেষণার ওপর ভিত্তি করে সংগৃহীত। বিশ্লেষণে দেখা যায়, বাংলাদেশের প্রশাসন এখনও কেন্দ্রীয়, আমলাতান্ত্রিক এবং রাজনৈতিক প্রভাবাধীন। দুর্নীতি, জবাবদিহিতার অভাব, সিদ্ধান্ত গ্রহণে জটিলতা এবং প্রশাসনিক অদক্ষতা রাষ্ট্রের জনকল্যাণমূলক চরিত্রকে দুর্বল করেছে। প্রবন্ধে এই সমস্যাগুলোর পেছনের কারণ, বর্তমান অবস্থা এবং সংস্কারের সম্ভাব্য দিকগুলো বিশদভাবে আলোচিত হয়েছে।


ভূমিকা (Introduction)

প্রশাসন রাষ্ট্র পরিচালনার কেন্দ্রবিন্দু। রাষ্ট্রের উন্নয়ন, নীতি বাস্তবায়ন, ও জনগণের সেবা প্রদানে প্রশাসনের কার্যকারিতা অপরিহার্য। কিন্তু যখন প্রশাসন জনগণের সেবক না হয়ে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়, তখন রাষ্ট্র হয়ে পড়ে আমলাতান্ত্রিক। বাংলাদেশে স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পরও প্রশাসনিক কাঠামোতে উপনিবেশিক ঐতিহ্যের ছাপ স্পষ্ট। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরিভাষায় একে বলা যায় “বিউরোক্রেসি-ডমিনেটেড স্টেট” — যেখানে নীতি নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন উভয় ক্ষেত্রেই আমলাদের প্রভাব নির্ণায়ক।

এই প্রবন্ধে বাংলাদেশে আমলাতন্ত্রের উৎপত্তি, বিকাশ, বর্তমান রূপ এবং এর প্রভাব গবেষণামূলকভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। একইসঙ্গে প্রশাসনিক সংস্কারের সম্ভাব্য পথনির্দেশও আলোচিত হয়েছে।


গবেষণার উদ্দেশ্য (Objectives of the Study)

১. বাংলাদেশের প্রশাসনিক কাঠামোর ঐতিহাসিক ও তাত্ত্বিক ভিত্তি নির্ধারণ করা।

২. বর্তমান সময়ের আমলাতান্ত্রিক বৈশিষ্ট্য ও সমস্যাগুলো সনাক্ত করা।

৩. আমলাতন্ত্রের প্রভাব বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও সুশাসনের ওপর বিশ্লেষণ করা।

৪. প্রশাসনিক সংস্কারের জন্য বাস্তবসম্মত সুপারিশ প্রদান করা।


গবেষণার পদ্ধতি (Methodology)

এই গবেষণায় গুণগত পদ্ধতি (Qualitative Method) অনুসরণ করা হয়েছে। তথ্য সংগৃহীত হয়েছে —

বিভিন্ন জাতীয় সংবাদমাধ্যম (যেমন The Daily Star, বাংলাট্রিবিউন, যুগান্তর, কালের কণ্ঠ)

সরকারি প্রশাসন কমিশনের প্রতিবেদন

আন্তর্জাতিক গবেষণা নিবন্ধ (যেমন ResearchGate, Atlantic Council, Transparency International Bangladesh)

প্রাসঙ্গিক একাডেমিক গ্রন্থ যেমন “Modern Bureaucracy and South Asian Governance”

তথ্য বিশ্লেষণে তুলনামূলক ও বর্ণনামূলক পদ্ধতি (Descriptive and Analytical Method) ব্যবহার করা হয়েছে।


তাত্ত্বিক কাঠামো (Theoretical Framework)

ম্যাক্স ওয়েবারের আমলাতন্ত্র তত্ত্ব এই গবেষণার মূল তাত্ত্বিক ভিত্তি। ওয়েবারের মতে, আদর্শ আমলাতন্ত্রে থাকে —

১. স্পষ্ট নিয়ম ও নীতি,

২. নির্দিষ্ট দায়িত্ববণ্টন,

৩. কর্তৃত্বের স্তরবিন্যাস,

৪. যোগ্যতাভিত্তিক নিয়োগ,

৫. ব্যক্তিহীনতা বা Impersonality।

কিন্তু উন্নয়নশীল দেশগুলোতে যেমন বাংলাদেশে, ওয়েবারের এই আদর্শ মডেল রাজনৈতিক প্রভাব, দুর্নীতি, পৃষ্ঠপোষকতা ও ব্যক্তিস্বার্থের কারণে বিকৃত রূপ ধারণ করেছে। এই বিকৃত রূপটিকেই বলা হচ্ছে “আমলাতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা”।


বাংলাদেশে আমলাতন্ত্রের ঐতিহাসিক বিকাশ

১. ব্রিটিশ শাসনকাল (১৭৫৭–১৯৪৭): প্রশাসনের মূল লক্ষ্য ছিল রাজস্ব আদায় ও শাসকের কর্তৃত্ব বজায় রাখা। সাধারণ মানুষ ছিল শাসিত জনগোষ্ঠী, প্রশাসন ছিল তাদের নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার।

২. পাকিস্তান আমল (১৯৪৭–১৯৭১): পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী প্রশাসনের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছিল। এ সময় প্রশাসন গণমানুষের সেবার বদলে ক্ষমতাশীল শ্রেণির প্রতিনিধি হয়ে ওঠে।

৩. স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশ (১৯৭১–বর্তমান): স্বাধীনতার পর প্রশাসনিক কাঠামো অপরিবর্তিত থাকে। রাজনৈতিক দলীয় প্রভাব, পদোন্নতিতে পক্ষপাত, এবং কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ প্রশাসনকে আরও শক্তিশালী করে তোলে।


বর্তমান বাস্তবতা ও প্রশাসনিক বৈশিষ্ট্য

১. কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ

বাংলাদেশে অধিকাংশ নীতি ও সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় পর্যায়ে গৃহীত হয়। উপজেলা বা জেলা প্রশাসন প্রকৃত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা রাখে না। এটি আমলাতন্ত্রের অন্যতম চিহ্ন।

২. আমলাদের একচ্ছত্র প্রভাব

জনপ্রতিনিধি ও নির্বাচিত প্রতিষ্ঠান থাকলেও বাস্তব প্রশাসনিক প্রভাব থাকে আমলাদের হাতে। যেমন — উপজেলা চেয়ারম্যানের চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) ক্ষমতা কার্যত বেশি।

৩. রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা

প্রশাসনের পদোন্নতি, বদলি বা পদায়নে রাজনৈতিক প্রভাব গভীর। সরকার পরিবর্তন হলে কর্মকর্তাদের অবস্থানও বদলে যায়, যা প্রশাসনের নিরপেক্ষতাকে ক্ষুণ্ন করে।

৪. দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের সাম্প্রতিক প্রতিবেদন (২০২4) অনুসারে, বাংলাদেশের সরকারি সেবা খাতে ঘুষ-সংক্রান্ত অভিযোগের হার ৬৮%। এটি প্রমাণ করে যে আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থা জনগণের কাছে জবাবদিহিমুক্ত হয়ে পড়েছে।

৫. প্রযুক্তি ও ই-গভর্নেন্সের সীমাবদ্ধতা

ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচি অনেকাংশে সফল হলেও প্রশাসনিক প্রক্রিয়া এখনো কাগজভিত্তিক। সরকারি তথ্য পেতে নাগরিককে ফাইল ঘোরানো, দপ্তরে দপ্তরে ঘোরা—এগুলো এখনো সাধারণ ঘটনা।

৬. প্রশাসনিক দ্বন্দ্ব ও অসন্তোষ

২০২৫ সালে “উপসচিব পদে ৫০–৫০ ভাগ কোটা বিতর্ক” প্রশাসনের ভেতরে গভীর দ্বন্দ্ব তৈরি করেছে (সূত্র: বাংলাট্রিবিউন, মার্চ ২০২৫)। এ ধরনের দ্বন্দ্ব নীতি বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি করছে।

৭. নীতি বাস্তবায়নে ব্যর্থতা

গবেষণা (ResearchGate, ২০২৪) দেখায়, সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পের ৩০% সময়মতো সম্পন্ন হয় না। প্রধান কারণ প্রশাসনিক দেরি, ফাইলজট, এবং দুর্বল তদারকি।


আলোচনা (Discussion)

বাংলাদেশের আমলাতন্ত্রের বর্তমান অবস্থা বিশ্লেষণ করলে কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট হয় —

১. গণতন্ত্রের ওপর প্রভাব:

আমলাতন্ত্র রাষ্ট্রের শাসনব্যবস্থাকে এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করে যে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা প্রায়ই প্রশাসনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। এটি গণতন্ত্রের মূল চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

২. দুর্নীতি ও জনঅসন্তোষ:

প্রশাসনের অদক্ষতা, ঘুষপ্রথা ও সময়ক্ষেপণ সাধারণ মানুষের আস্থা নষ্ট করছে। সেবা পেতে ঘুষ দেওয়া এখন সামাজিকভাবে ‘স্বাভাবিক’ হয়ে গেছে, যা প্রশাসনিক নৈতিকতার চরম অবক্ষয়।

৩. নীতি বাস্তবায়নে অদক্ষতা:

নীতিনির্ধারক ও বাস্তবায়নকারীর মধ্যে সমন্বয়হীনতা নীতি বাস্তবায়নের বড় অন্তরায়। অনেক উন্নয়ন প্রকল্প কাগজে সীমাবদ্ধ থাকে, বাস্তবে এর সুফল জনগণ পায় না।

৪. রাজনৈতিক প্রশাসনীকরণ:

প্রশাসন রাজনৈতিকভাবে এতটাই সংযুক্ত যে নিরপেক্ষতা অনেক সময় অনুপস্থিত থাকে। ভোট, আইন প্রয়োগ ও প্রতিবাদ দমনে প্রশাসনের ভূমিকা প্রায়ই বিতর্কিত হয়।

৫. নৈতিক নেতৃত্বের অভাব:

প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের মধ্যে দায়িত্ববোধ ও জনসেবার আদর্শ কমে যাচ্ছে। চাকরি এখন অনেকের কাছে ক্ষমতা ও সুযোগের উৎস হয়ে উঠেছে, সেবার ক্ষেত্র নয়।


গবেষণার ফলাফল (Findings)

বিষয় বাস্তব চিত্র প্রভাব

কেন্দ্রীভূত প্রশাসন অধিকাংশ সিদ্ধান্ত কেন্দ্রে নেওয়া হয় স্থানীয় প্রশাসনের অকার্যকারিতা

রাজনৈতিক প্রভাব পদোন্নতি ও বদলিতে দলীয় বিবেচনা নিরপেক্ষতা নষ্ট

দুর্নীতি ঘুষপ্রথা ব্যাপক জনগণের আস্থা নষ্ট

প্রযুক্তি সীমাবদ্ধতা ডিজিটাল প্রক্রিয়া আংশিক কাজের ধীরগতি

নীতি বাস্তবায়নে ব্যর্থতা প্রকল্প বিলম্ব ও অপচয় উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত


প্রস্তাবনা (Recommendations)

১. প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ: উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে স্বায়ত্তশাসন বাড়াতে হবে, বাজেট ও পরিকল্পনায় স্থানীয় সরকারকে ক্ষমতা দিতে হবে।

২. জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা: সেবা প্রক্রিয়াকে অনলাইনে উন্মুক্ত করে নাগরিক পর্যবেক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে।

৩. দুর্নীতি দমন: দুদক ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বৃদ্ধি করতে হবে।

৪. মানবসম্পদ উন্নয়ন: প্রশিক্ষণ, কর্মদক্ষতা ও নৈতিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে।

৫. রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত প্রশাসন: প্রশাসনকে দলের হাতিয়ার নয়, রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখতে হবে।

৬. ই-গভর্নেন্স বাস্তবায়ন: ফাইলজট ও সময়ক্ষেপণ রোধে ইলেকট্রনিক অনুমোদন ও ডিজিটাল ট্র্যাকিং সিস্টেম চালু করতে হবে।

৭. নাগরিক অংশগ্রহণ: উন্নয়ন পরিকল্পনা, বাজেট অনুমোদন ও সেবা প্রদানে নাগরিকদের মতামত অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।


উপসংহার (Conclusion)

সব দিক বিবেচনায় বলা যায় — বাংলাদেশ এখনো একটি আমলাতান্ত্রিক রাষ্ট্র। স্বাধীনতা অর্জনের পরও প্রশাসন জনগণের সেবক নয়, বরং ক্ষমতার ধারক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তবে এটিই শেষ কথা নয়। প্রশাসনিক সংস্কার, স্বচ্ছতা, প্রযুক্তির ব্যবহার ও নাগরিক সচেতনতার মাধ্যমে এই কাঠামোকে গণমুখী করা সম্ভব।

আমলাতন্ত্রকে সম্পূর্ণভাবে বিলোপ করা নয়, বরং সেটিকে জনসেবামুখী ও জবাবদিহিমূলক আমলাতন্ত্রে রূপান্তরিত করা—এটাই সময়ের দাবি। যদি রাজনৈতিক সদিচ্ছা, জনচাপ ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার একসঙ্গে কাজ করে, তাহলে বাংলাদেশের প্রশাসন সত্যিকারের “জনগণের রাষ্ট্রযন্ত্র” হয়ে উঠতে পারে।


তথ্যসূত্র (References)

1. Weber, Max. Economy and Society. University of California Press, 1978.

2. Public Administration Reform Commission Report, Government of Bangladesh, 2023.

3. The Daily Star (2024), “Bangladesh’s Bureaucracy Needs Reinvention.”

4. Transparency International Bangladesh (TIB) Report, 2024.

5. Bangla Tribune (2025), “নতুন সংকটে প্রশাসন।”

6. ResearchGate (2024), “Public Policy Implementation Challenges in Bangladesh.”

7. Atlantic Council (2025), “Bangladesh’s Revolution at a Crossroads.”

8. Kalbela (2025), “প্রশাসনে দ্বন্দ্ব ও দক্ষতার সংকট।”

9. Dhaka Tribune (2025), “Bangladesh Bureaucracy Faces Fresh Friction Amid Promotions.”

Friday, October 3, 2025

ভালোবাসার প্রকাশ -- মোঃ হেলাল উদ্দিন


 কথায় বলে,

সহজ কথা যায়না সহজে বলা।

ঠিক তাই,

আমি তোমাকে ভালোবাসি

তিন শব্দের সহজ ছোট্ট একটি কথা

বলতে গেলে দরকার অনেক ভাবা।

তবু আমরা বলতে চাই

কিন্তু কেমন করে বলবো নেই তা আমার জানা।

তোমরা বলো, কবি আমি 

তাই একটু অগোছালো আমার চলা।

হাতে ফুল গুঁজে তোমার সামনে দাড়িয়ে

বিশ্ব প্রেমিকের মতো যে বলবো

আমি তোমাকে ভালোবাসি

সেই প্রেমিক আমি হতে পারিনি।

দুই চার লাইন লিখে নিজেকে কবি ভাবলেও

এমন প্রেমিক হওয়া আমার জন্য এতো সহজ নয়।

তাই কলমেই আমার ভরসা।

কলমের কালিতে লিখে দিয়ে যাই

আমার মনের গোপন কথা

তুমি যে আমার অনন্ত ভালোবাসা।

----------------------------------

ভালোবাসার প্রকাশ 

-- মোঃ হেলাল উদ্দিন

Friday, September 5, 2025

তুমি আছো কোথায়? -- মোঃ হেলাল উদ্দিন

 পিপাসিত শুকনো হৃদয়ের জমিন

চাতকের মতো চেয়ে থাকে অন্তহীন। 

সুদূর পরাহত দৃষ্টির সীমানায়

মন শুধু তোমাকে খুঁজে বেড়ায়।

তুমি আছো কোথায়? 

সকালে সোনালী রোদের ছায়ায় 

শেষ বিকালে গোধূলির মায়ায়

তোমার ছবি এ চোখে ঘুরে বেড়ায়।

তুমি আছো কোথায়?

নিশিতে জোসনার জলে ভিজে

মন শুধু তোমায় খুঁজে ফিরে।

স্বপ্নের ভেলায় চলে হৃদয়ের আশা

যদি হয়ে যায় তোমার সাথে দেখা

বলবে খুলে হৃদয়ের জমানো কথা।

দিন শেষে রাত গিয়ে 

চলে আসে নতুর আরেক ভোর

আসোনা তুমি এ হৃদয়ে মোর।

মন তাই বলে যায়, 

তুমি আছো কোথায়?

মেটাতে হৃদয়ের তৃষ্ণা উত্তর খুঁজে একা,

তুমি আছো, তুমি থাকবে  হৃদয়ের মাঝে গাঁথা

তুমি যে আমার এ হৃদয়ের অনন্ত ভালোবাসা।

 

তুমি আছো কোথায়? 

-- মোঃ হেলাল উদ্দিন

Friday, August 22, 2025

সুখের তরে -- মোঃ হেলাল উদ্দিন

সবাইকে হাসি-খুশি রাখার দায়িত্ব তোকেই নিতে হবে,
তোর হাসি-খুশিতে কার-বা কি লাভ-ক্ষতি আছে।
জানিস না তোর জন্ম হয়েছে সবাইকে খুশি করতে।
জন্মেই তুই খুশি করেছিলি মা-বাবা, দাদা-দাদী,
নানা-নানী তোর কতো কাছের দূরের স্বজনকে।
তুই কি তা ভুলে গেলি, তোর কি তা মনে পড়েনা।
জন্মের পরপরই তুই কেঁদে উঠলি আর সবাই
হাসিতে ফেটে পড়ল, খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেল।
তারপরে যতোই দিন গড়াতে লাগলো তোর
এই খুশি করার দায়দায়িত্ব বাড়তে লাগলো।
মনে পড়ে কি তোর সেদিনের কথা
যেদিন তুই স্কুলের পরীক্ষায় প্রথম হতে পারলি না
সবাই কি মন খারাপই না করেছিলো,
সেদিন কেউ তোর মনের অবস্থা দেখেনি
দেখেছে শুধু তাদের সম্মানের কথা,
তাদের স্বপ্ন পূরনের পথে বাধার কাটা।
এরপর থেকে আর তোকে এমন অবস্থা দেখতে হয়নি,
তুই সবাইকে খুশিই করে যাচ্ছিস
তোর মেধার দ্বারা, তোর শ্রমের দ্বারা,
যখন যেভাবে পারো, যতোটুকু পারো
সবাই তাতে খুশি, সবাই তোর প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
কিন্তু কেউ কি একবারও জানতে চেয়েছে
তুই কেমন আছিস, তোর কোন প্রয়োজন আছে কিনা?
কিংবা কেমন করে কাটছে তোর সময়
চায়নি তা জানতে আর চাইবেও না।
তুই মুখে বললেও কেউ শোনার সময় পাবে না,
যদি না তাদের তুই খুশি রাখতে পারিস।
সবাইকে খুশি রাখাই যে তোর কাজ।
তুই ভুলে যা তোর সুখের কথা,
তুই মনে করিস না তোর হাসি কান্নার কথা।
তুই যে পৃথিবীতে এসেছিস একা
আবার চলে যাবিও একা।
সেদিন সবাই কাঁদবে, বলবে তোর কথা
তোর দায়িত্ব যে ছিল তাদের সুখে রাখা।
তুই ভুলে যা তোর সব কথা,
তোর দায়িত্ব যে সবাইকে সুখে রাখা।
---------------------------------- 

 সুখের তরে -- মোঃ হেলাল উদ্দিন
     ০৫/০৮/২০১৭

Wednesday, July 30, 2025

মায়াবিনী -- মোঃ হেলাল উদ্দিন

 

 মায়াবিনী
অনেক দিন থেকেই ভাবছি
একটা কবিতা লিখবো, কিন্তু
কবিতার শিরোনাম, পটভূমি যে
খুঁজে পাচ্ছি না।
কেমন করে যে কবিতাটা লিখি
এর সমাধানও মিলছে না।
আচ্ছা, মায়াবিনী
কবিতায় কি শুধুই বাস্তবতা থাকে
না কি মনের কল্পনাও কবিতায় রুপ নেয়,
একবার ভেবে বলবে কি?
কোথায় যেন পড়েছিলাম কবিতাই জীবন
জীবনের নাম-ই কবিতা।
কথাটা কতোটুকু সত্য জানি না
জানতে চাইও না।
আমি জানি, আমার মনের ভাবনাই কবিতা
তা কারো জীবনের সাথে মিলে যেতে পারে
আবার মিলে যেতে নাও পারে এই পৃথিবীর
কোন ধরনের বাস্তবতার সাথে।


মায়াবিনী
আমি আশাবাদী মানুষ
আশাই আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে
পথ চলতে সাহায্য করছে নতুন পথে,
তবু মাঝে মাঝে হতাশার চাদর
আশার পথকে অবরুদ্ধ করতে চাচ্ছে,
আমাকে সামনে আগাতে বাধা দিচ্ছে,
আমি হতাশায় হাবুডুবু খাচ্ছি।
তবু আমি হারতে রাজি না।


মায়াবিনী
হার মানা নামের শব্দ আমার কাছে নাই
কবিতা আমি লিখবোই
শিরোনামহীন কবিতা, পটভূমিহীন কবিতা
তবু জীবনকে থামিয়ে রাখবো না
রাখতে পারবো না, রাখা সম্ভাবও না।
জীবন চলছে, পৃথিবী চলছে
সবকিছুই যেমন আছে, তেমনই থাকবে
বা পাল্টে যাবে অনেক কিছুই।
ভাঙ্গা গড়ার এই পৃথিবীর বুকে
আসবে যাবে এইতো নিয়ম
এই নিয়মের মাঝেই আমি রচনা করব
আমার জীবন।

মায়াবিনী 

-- মোঃ হেলাল উদ্দিন

১০/০৮/২০১৭

Thursday, July 17, 2025

সবুজাভ সংকেত -- মোঃ হেলাল উদ্দিন

 

সারা বিশ্বে চলছে সবুজের আকাল,
গাছপালা কেটে সব করছে দালান।

বাড়ছে মানুষ, বাড়ছে বাসের স্থান,
কমছে গাছপালা, কমছে সবুজের দখল।

এমন করে চলতে থাকলে আর কিছু কাল,
পৃথিবী হয়ে যাবে বসবাস অযোগ্য স্থান।

তাই এখনই বন্ধ করি উজাড় করা গাছপালা বন,
পৃথিবীকে ফিরিয়ে দেই আবার সেই সবুজের দখল।


 সবুজাভ সংকেত -- মোঃ হেলাল উদ্দিন
১২/১১/২০১৭ ইং

একটি গবেষণা প্রস্তাব লেখার পদ্ধতি -- মোঃ হেলাল উদ্দিন

 

একটি গবেষণা প্রস্তাব লেখার পদ্ধতি

গবেষণা প্রস্তাব হলো একজন গবেষক যে বিষয়ে গবেষণা করতে চায় তার একটি পরিকল্পিত লিখিত রুপ। যেখানে গবেষণার বিষয়, উদ্দেশ্য, গুরুত্ব, অনুমিত সিদ্ধান্ত, কর্ম পরিকল্পনা ইত্যাদি বর্ণনা করা হয়ে থাকে। একজন গবেষককে তার গবেষণাকর্ম শুরুর পূর্বে গবেষণা প্রস্তাব উপস্থাপন করতে হয়। একজন নতুন গবেষকের গবেষণার প্রতি আগ্রহ থাকলেও প্রথম বাধার সম্মুখীন হতে হয় এই গবেষণা প্রস্তাব লেখা নিয়ে। কেননা, গবেষণা প্রস্তাব লেখার বিশেষ কিছু নিয়ম ও ধাপ অনুসরণ করতে হয়। গবেষণা প্রস্তাব লেখার এই পদ্ধতি নিয়েই আজকের আলোচনা।

১। শিরোনাম (Title):

শিরোনাম দ্বারা আপনার কাজ কোন বিষয়ে এবং আপনি আপনার কাজে কি কি বিষয়ে তুলে ধরতে চান তার একটি সামগ্রিক ধারনা পাওয়া যাবে। আরো সহজ করে বললে বলা যায় যে, আপনার গবেষনার ঊদ্দেশ্য সমূহের স্পষ্ট প্রতিফলন হবে শিরোনামে। গবেষণার শিরোনাম এমন হতে হবে যাতে শিরনামকে ভাঙ্গলে গবেষণার উদ্দেশ্য পাওয়া যায় আবার গবেষণার উদ্দেশ্য সমূহকে জোড়া দিলে শিরোনাম পাওয়া যায়। তাই শিরোনাম নির্ধারনের ক্ষেত্রে দুইটি পন্থা অবলম্বন করতে পারেন। প্রথমত, সাহিত্য পর্যালোচনার ভিত্তিতে ঊদ্দেশ্য নির্ধারন করে গবেষণার একটি প্রাথমিক শিরোনাম দেয়া যেতে পারে । যা পরবর্তী  কাজের উপর ভিত্তি করে পরিবর্তন বা পরিবর্ধন করা যাবে। আর দ্বিতীয়ত হল সব কাজ শেষ করার পর কাজের সাথে সংশ্লিষ্টতা রেখে একটি শিরোনাম দেয়া। তবে শিরোনাম হতে হবে সংক্ষিপ্ত অথচ অর্থবহ। শিরোনাম মূলত ১৪ -১৮ শব্দের মধ্যে হতে হয়। শিরোনাম দুইভাবে লেখা যেতে পারে। প্রথমটি হল, এক লাইনে পুরো শিরোনাম দিয়ে দেয়া। আর অন্যটি হল কোলন ( : ) ব্যবহারের মাধ্যমে শিরোনামকে দুইভাগে ভাগ করে লেখা। একটি বিষয় লক্ষনীয় কোলন ( : ) ব্যবহারের পর কখনো প্রেক্ষিত শব্দটি ব্যবহার না করাই উচিত। কারন কোলন ( : ) এবং প্রেক্ষিতএর অর্থ একই। সবশেষ কথা, শিরোনাম হবে মূলত আপনার গবেষণার মূলবিষয় সূচক শব্দের (Keyword) সংমিশ্রণ।

২। ভূমিকা (Introduction):

গবেষণা প্রস্তাবনার প্রথম ও গুরুত্বপূর্ন ধাপ হলো ভূমিকা। এই ভূমিকার মাধ্যমে একজন পাঠক আপনার গবেষণা সম্পর্কে স্পস্ট ধারনা লাভ করতে পারবেন। তাই এই ভূমিকা অংশটি অত্যন্ত যত্নের সাথে লেখা উচিত এবং সবার শেষে লেখা উচিত। ভূমিকা অংশটি যতটুকু পারা যায় সহজ ও সরল রাখতে হবে যাতে কেউ তা পড়া মাত্র বুঝে যেতে পারে। তাই ভূমিকা লিখতে যে যে বিষয়গুলোর প্রতি খেয়াল রাখতে হবে সেগুলো হলোঃ প্রথমত, শুরুতেই আপনার গবেষণার জন্য নির্বাচিত বিষয়ের একটি সার্বজনীন ধারনা দিতে হবে। ধরুন, কেউ উচ্চ শিক্ষা নিয়ে কাজ করতে চায় , তাহলে তাকে দেখাতে হবে বিশ্বব্যাপি উচ্চ শিক্ষাকে কিভাবে দেখা হচ্ছে এবং ইহার বর্তমান অবস্থা কি তা তুলে ধরতে হবে। ঠিক এরপরেই চলে আসতে হবে বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে। বাংলাদেশে উচ্চ শিক্ষার বর্তমান অবস্থা কিরূপ তার একটি সার্বিক ধারনা দিতে হবে। ঠিক এরপরেই গবেষণার জন্য যে যে উদ্দেশ্য নির্ধারন করা হয়েছে তার সাথে বর্তমান অবস্থার কি কি ধরনের সামঞ্জস্যতা এবং ার্থক্য রয়েছে তা দেখাতে হবে এবং একই সাথে যে বিষয়ে জোড় (Focus) দেয়া হয়েছে তা উল্লেখ করতে হবে। উদ্দেশ্যর সাথে সংশ্লিষ্ট তাত্ত্বিক প্রেক্ষাপটের সম্পর্ক আলোচনা করতে হবে। আর এই সার্বিক ধারনা, সামঞ্জস্যতা ও পার্থক্য - এইসব কিছু সাহিত্য পর্যালোচনার ভিত্তিতে দিতে হবে। তথ্যসূত্র উল্লেখপূর্বক আপনাকে আপনার যুক্তি প্রদর্শন করতে হবে। মোটকথা, ভূমিকা হবে গবেষণা প্রস্তাবটির সারসংক্ষেপ।

৩। বিষয় বিবৃতিকরন বা সমস্যা নির্ধারণ (Statement of the Problem / Issue):

একজন গবেষক যে বিষয়ে গবেষণা করবেন তার সামাজিক প্রেক্ষাপট কিরূপ এবং বর্তমানে তার অবস্থা কি, এই সংক্রান্ত কি কি তথ্য/ উপাত্ত রয়েছে এসব যৌক্তিকভাবে উপস্থাপন করতে হবে এই অংশে। গবেষণার বিষয়টি কি সামাজিক সমস্যা নাকি এমন এক সামাজিক বিষয় যা কিনা সমাজের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন দিক এবং যে বিষয়ের দিকে নজর দেয়া উচিত এবং যে বিষয় নিয়ে গবেষণা করে সে বিষয়ের বিভিন্ন দিক তুলে ধরাটা জরুরি। এই সকল আলোচনা থাকবে এই অংশে।

গবেষণার উদ্দেশ্য (Research Objectives):

গবেষণার উদ্দেশ্য হল গবেষণার প্রাণ। গবেষণার উদ্দেশ্য নির্বাচনের ক্ষেত্রে দুইটি পন্থা অবলম্বন করা যেতে পারে। প্রথমত, গবেষণার যে বিষয় নির্বাচন করা হবে সে বিষয়ের ক্ষেত্রে কি কি বিষয় দেখতে চাওয়া হবে তা উদ্দেশ্য হিসেবে গ্রহন করাদ্বিতীয়ত, সাহিত্য পর্যালোচনার ক্ষেত্রে যে সব রিসার্চ গ্যাপ পাওয়া গিয়েছে সেগুলোকে গবেষণার উদ্দেশ্য হিসেবে নির্ধারন করা যেতে পারে। তবে যে পদ্ধতিতেই গবেষণার উদ্দেশ্য নির্ধারন করা হোক না কেন, উদ্দেশ্য দ্বারা যাতে গবেষণার নির্ধারিত বিষয়ের উপর নতুন নতুন দিক উঠে আসে সেদিকে নজর দিতে হবে। গবেষণার উদ্দেশ্য হতে হবে খুব স্পষ্ট এবং নির্দিষ্ট। গবেষণার উদ্দেশ্য নির্বাচনের দুইটি পন্থা আছে। প্রথম পন্থা হল একটি বৃহৎ উদ্দেশ্য ( Broad Objective) এবং দ্বিতীয়টি হল, ৩-৫ টি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য (Specific Objective) নিয়ে কাজ করা। 

৫। সাহিত্য পর্যালোচনা (Literature Review):

একটি গবেষণা শুরু করার জন্য সাহিত্য পর্যালোচনা অতীব জরুরি। গবেষণা শুরু পূর্বে গবেষককে বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে আর এই কার্যটি সর্বপ্রথমে করতে হয়। সাহিত্য পর্যালচনার জন্য একজন গবেষককে যা করতে হবে-

(I)     গবেষককে গবেষণার বিষয় সংশ্লিষ্ট সাহিত্য খুঁজে বের করতে হবে। সেটি হতে পারে বই, জার্নাল, আর্টিকেল, পত্রিকার লেখনী, ওয়েবসাইট, তথ্যচিত্র ইত্যাদি।

(II)     যে কোন সাহিত্য পর্যালোচনার ক্ষেত্রে যে সব বিষয় লক্ষ্য করতে হবে তা হল - সাহিত্যটির উদ্দেশ্যসমূহ কি কি, কোন গবেষনা পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে, কোন তাত্ত্বিক প্রেক্ষাপট থেকে বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, কি ধরনের ফলাফল এসেছে, কোন রিসার্চ গ্যাপ আছে কি না। এই সব বিষয়কে গবেষককে গবেষণার উদ্দেশ্যের সাথে সম্পর্কিত করে সুন্দর করে উপস্থাপন করতে হবে।

(III)   সাহিত্য পর্যালোচনার মূল উদ্দেশ্য হল আপনার গবেষনার বিষয় সম্পর্কে খুব ভালভাবে জানা। তাই যত বেশি সাহিত্য পর্যালোচনা করা যায় তত ভাল। সাধারণত গবেষনা প্রস্তাবনায় সাহিত্য পর্যালোচনা ৫-৬ টি দিলেই যথেষ্ট।

৬। তাত্ত্বিক প্রেক্ষাপট (Theoretical Framework):

তাত্ত্বিক প্রেক্ষাপট মূলত গবেষকের গবেষণা ও গবেষণা প্রস্তাবনাকে একটি বৈধতা (Valid Platform) প্রদান করে। তাত্ত্বিক প্রেক্ষাপট প্রদানের পূর্বে যে বিষয়টি লক্ষ্য রাখতে হবে তা হল, গবেষক যে তত্ত্ব ব্যবহার করবেন তা সম্পর্কে বিস্তারিত ধারনা থাকতে হবে এবং তত্ত্বটি গবেষণা বিষয়ের সাথে কিভাবে সম্পর্কযুক্ত তাও জানতে হবে। গবেষক যে ধরনের তত্ত্বই ব্যবহার করুক না কেন যখনই তিনি তাত্ত্বিক প্রেক্ষাপট লিখবেন তখন তাকে তিনটি ধাপ মেনে চলতে হবে।

(I)      গবেষক যে তত্ত্ব ব্যবহার করবেন সে তত্ত্বটি তিনি তাত্ত্বিকের ভাষায় বয়ান করবেন

(II)     এই তত্ত্বের ক্ষেত্রে গবেষকের যে বোধগম্যতা (Understanding) তা বয়ান করবেন এবং

(III)   এই তত্ত্বটি গবেষকের বিষয়ের সাথে কিভাবে সম্পর্কিত এবং কিভাবে এই তত্ত্ব দিয়ে গবেষকের গবেষণার বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করা যাবে তা তুলে ধরতে হবে।

তাত্ত্বিক প্রেক্ষাপটে কয়টি তত্ত্ব দেয়া যাবে এরকম প্রশ্ন প্রায় সবার মনে আসে। তাত্ত্বিক প্রেক্ষাপটের ক্ষেত্রে গবেষক একটি থেকে সর্বোচ্চ তিনটি তত্ত্ব দিতে পারবেন। যত তত্ত্ব ব্যবহার কম হবে গবেষকের জন্য তত সুবিধা, কারন যত বেশি তত্ত্ব দিবেন গবেষকের বিষয়টি ব্যাখা করার ক্ষেত্রে তত বেশি অসুবিধা । 

৭। গবেষনা পদ্ধতি (Research Methodology):

গবেষণা পদ্ধতির ক্ষেত্রে গবেষককে যে সব বিষয় খেয়াল রাখতে হবে তা হলো সঠিক গবেষণা যন্ত্র ও কৌশল (Research Tool & Techniques)। গবেষণার দুইটি ধারা আছে। যথাঃ গুনগত (Qualitative Approach) ও পরিমাণগত (Quantitative Approach)এখন গবেষক যদি গবেষণার জন্য গুনগত ধারা নির্ধারিত করলেন কিন্তু নির্বাচন করলেন পরিমানগত ধারার গবেষণা যন্ত্র ও কৌশল তবে তা বড় ভুল হিসেবে হবে এবং গবেষণা প্রস্তাবনাটি বাতিল হয়ে যাবে। একটি গুনগত ধারার গবেষণা পদ্ধতিতে যে সব বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকে তা হলো-

গবেষনা প্রস্তাবনার গবেষনা পদ্ধতি অংশে যা যা বিষয় থাকবে

·   গবেষণার এলাকা নির্বাচন (Research Area)

·   নমুনা নির্বাচন (Sampling) 

গুনগত ধারায় গবেষণায় নমুনার আকার (Sample Size) ১ জন থেকে সর্বোচ্চ ৫০ জন পর্যন্ত হতে পারে। এক্ষেত্রে ৩০-৩৫ জন হল আদর্শ নমুনার আকার (Sample size)

·   তথ্য উৎ (Sources of Data) 

                               I. মুখ্য উপাত্ত (Primary Data)

                              II. গৌন উপাত্ত (Secondary Data)

মুখ্য উপাত্ত সংগ্রহের ক্ষেত্রে পর্যবেক্ষন (Observation), নিবিড় সাক্ষাৎকার (In-depth Interview), মূল তথ্যদাতা সাক্ষাৎকার (Key Informant Interview), ফোকাস বা দলগত আলোচনা (Focus/Group discussion), কেস স্টাডি (Case Study) এই ৫ টি পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে।

গৌণ উপাত্তের ক্ষেত্রে আসবে বিভিন্ন বই, জার্নাল, আর্টিকেল, পত্রিকার লেখনী, ওয়েবসাইট, তথ্যচিত্র ইত্যাদি থেকে প্রাপ্ত তথ্য।

·   ব্যবহৃত পরিসংখ্যানগত কৌশল (Used statistical strategies) 

৮। গবেষনার যৌক্তিকতা (Research Rationality):

এই অংশে মূলত গবেষক যেই বিষয়ে গবেষণা করতে চায় কেন সে এই বিষয়ে আগ্রহী, কোন ঘটনা বা অভিজ্ঞতার কারনে গবেষক এই বিষয় নিয়ে কাজ করছেন এবং এই বিষয়ে কাজ করার ফলে গবেষক নিজে ও অন্যান্যরা কিভাবে লাভবান হবে তা লিখতে হবে। এই যৌক্তিকতা লিখতে হলে গবেষককে কিছু যুক্তি প্রদর্শন, যেমনঃ গবেষণার বিষয় সম্পর্কিত সাম্প্রতিক কিছু তথ্য/ উপাত্ত দেখাতে হবে যা গবেষককে আগ্রহী করে তুলেছে উক্ত গবেষণা কাজটি করার জন্য।

৯। কর্মপরিকল্পনা (Work Plan):

কর্মপরিকল্পনায় মুলত সাহিত্য পর্যালোচনা, মাঠকর্ম, তথ্য বিশ্লেষন, খসড়া গবেষণাপত্র তৈরি, মূল গবেষণাপত্র তৈরি এই ৫ টি কার্য সম্পদান করতে কতো সময় লাগবে তার একটি বর্ণনা দিতে হয়। এই পাঁচটি কার্য সম্পন্ন করতে মোট ৫-৬ মাস সময়ের উল্লেখ থাকে। প্রত্যেকটি কার্য সম্পাদনের ক্ষেত্রে কতটুকু সময় লাগবে তাও কর্মপরিকল্পনায় নির্ধারন করে দিতে হবে।

১০। অধ্যায় বিভাজন (Chapter Division):

গবেষক তার গবেষণাকর্মটি কয়টি অধ্যায়ে সম্পন্ন করবেন তা এখানে উল্লেখ করবেন। অধ্যায় বিভাজন লেখার ক্ষেত্রে প্রথম অধ্যায় থেকে শুরু করে শেষ অধ্যায় পর্যন্ত প্রতিটি অধ্যায়ের শিরোনাম উল্লেখ করতে হবে।

১১। তথ্যসূত্র (Reference):

তথ্যসূত্র বর্ণনায় একজন গবেষক AAA (American Anthropological Association) এবং APA (American Psychological Association)এই দুইটি ধারায় তথ্যসূত্র প্রদান করতে পারেন।

 

একজন গবেষককে তার গবেষণাকর্মের প্রথম ধাপ হিসাবে গবেষণা প্রস্তাব লিখতে হয়। এই গবেষণা প্রস্তাবই বলে দিতে পারে মূল গবেষণার বিষয়বস্তু, উদ্দেশ্য, গুরুত্ব, ফলাফল, গবেষণার সময়কাল ইত্যাদি। তাই গবেষণা প্রস্তাবটি অত্যন্ত সুন্দর ভাবে সম্পন্ন করতে উল্লেখিত ধাপগুলো অনুসরণ করলে কাংখিত ফলাফল পাওয়া যাবে।

 

সহায়ক গ্রন্থপঞ্জি

Crane, J. G. and Michael V. A. (1992). Field Projects in Anthropology: A Student Handbook. Prospect Heights, IL: Waveland Press.

Kumar, R. (2011). Research Methodology: A step-by-step guide for beginners. London: SAGE publications

মাসুম, সেখ গোলাম। কামারান এম কে মন্ডল (২০২১)। সামাজিক গবেষণা পদ্ধতির ভূমিকা। ঢাকাঃ অনিন্দ্য প্রকাশ।

 

 একটি গবেষণা প্রস্তাব লেখার পদ্ধতি -- মোঃ হেলাল উদ্দিন