Monday, April 29, 2024

নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসনে ভালো করবেন যেভাবে -- মোঃ হেলাল উদ্দিন

বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ২০০ নম্বরের মধ্যে ১০ নম্বর থাকে নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসন অংশে। একটু দ্বিধাগ্রস্ত হওয়ায় অনেকের মধ্যে এই অংশ বাদ দেওয়ার প্রবণতা লক্ষণীয়। কিন্তু একটু কৌশলী হলে এখান থেকে সহজে ৬/৭ নম্বর পাওয়া যায়, যা প্রিলিমিনারি পাসের জন্য অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।

পিএসসি নির্ধারিত সিলেবাসের নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসন অংশে দেখা যায় মূল্যবোধ ও সুশাসনের সংজ্ঞা, উপাদান, পরস্পরের মধ্যে সম্পর্ক, সমাজ ও জাতীয় উন্নয়নের এর প্রভাব, সমাজ ও রাষ্ট্রে তা বাস্তবায়নের উপায়, আইন, নৈতিকতা এবং সংস্কৃতি ইত্যাদি বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। সিলেবাসের অধিকাংশ জুড়ে সুশাসন ও মূল্যবোধ সম্পর্কিত বিষয় থাকলেও এগুলোর সংজ্ঞা, উপাদান, উৎস, প্রকারভেদ থেকেই বেশি প্রশ্ন হয়ে থাকে। সমাজ ও জাতীয় উন্নয়নে নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসন প্রভাব, অনুপস্থিতিতে প্রভাব থেকে যে সকল প্রশ্ন আসে তার উত্তর সাধারণ ধারণা থেকে করা যায়। এছাড়া আইন, নৈতিকতা, সংস্কৃতি অংশ থেকে সাধারণ প্রশ্নগুলো ভালো করে পড়লে ২-৩ নম্বর পাওয়া সম্ভব। মোটকথা, নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসন অংশে ভালো নম্বর পেতে পরীক্ষার্থীকে যে সকল বিষয়ের প্রতি নজর দিতে হবে তার মধ্যে অন্যতম হলো-

        বিগত বিসিএস-এ নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসন অংশ থেকে আসা প্রশ্নসমূহ ব্যাখ্যাসহ ভালো করে পড়লে ৩ থেকে ৪ নম্বর পাওয়া সম্ভব। তাই বিগত বছরের প্রশ্নগুলো অবশ্যই ব্যাখ্যাসহ পড়ে পরীক্ষার হলে যেতে হবে।

        প্রশ্নের অপশনে যখন নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসন তিনটি দেওয়া থাকে, তখন দ্বিধায় পড়ে যেতে হয়। এই সকল ক্ষেত্রে কনফিউশন এড়ানোর জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার সময় এই ধরনের প্রশ্নসমূহ আলাদা করে একসঙ্গে নোট করে তা বিশ্লেষণ সহকারে পড়তে হবে।

        প্রশ্নে বিভিন্ন বইয়ের লেখক, বিভিন্ন লেখকের সংজ্ঞা উল্লেখ করে তার নাম জানতে চাওয়া হয়। এই ধরনের প্রশ্নসমূহের উত্তর মনে রাখতে বিশেষ কৌশল অবলম্বন করে পড়তে হবে যাতে করে কখনও ভুল না হয়। এক্ষেত্রে সংজ্ঞার মূলশব্দের (Key word) সাথে তার লেখকের নাম মিল করে পড়া যেতে পারে।

        নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসনের বিভিন্ন উপাদান, বৈশিষ্ট্য এবং প্রকারভেদের পার্থক্য ভালো করে পড়ে নিতে হবে। দেখা যায়, প্রশ্ন আসে প্রধান উপাদান কোনটি? যার উত্তর বিভিন্ন গাইড বইতে বিভিন্ন হতে পারে যা দেখে দ্বিধায় পড়ে যেতে হয়। তাই এই ধরনের প্রশ্নের সঠিক উত্তরের জন্য বোর্ডের বইকে প্রাধান্য দিতে হবে।

        সুশাসনের বিভিন্ন উপাদান সংখ্যা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা  ভিন্ন ভিন্ন বলেছে। এগুলো মনে রাখার জন্য WB, IMF, UNDP- এমন শব্দের সাথে উপাদান সংখ্যা এবং সাল একত্রে নোট করে বারবার পড়লে সহজে মনে রাখা যাবে।

        নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসনের একাধিক বই না পড়ে ভালো মানের একটি বই শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বারবার পড়তে হবে। সাথে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির পৌরনীতি ও সুশাসন প্রথম পত্র বোর্ড বইটি দেখতে হবে।

সর্বোপরি, নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসনের অংশসহ বিসিএস প্রিলিমিনারিতে ভালো করার জন্য ধারাবাহিকতা রক্ষা করে নিয়মিত রুটিন অনুযায়ী পড়ার কোন বিকল্প নেই। নিয়মিত লেখাপড়ার মাধ্যমে কঠিন বিষয়ও এক সময় সহজ হয়ে যায় এবং সফলতা লাভ করা যায়। আর নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসন অংশের সুন্দর ও গোছালো প্রস্তুতির জন্য গবেষণালব্ধ বই হিসাবে রচিত হলো ‘নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসন’ বইটি। আশাকরি এর মাধ্যমে নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসনের ১০ নম্বরের প্রস্তুতির ক্ষেত্রে শতভাগ সফলতা পাবেন। সবার জন্য শুভকামনা।

 


নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসনে ভালো করবেন যেভাবে 

-- মোঃ হেলাল উদ্দিন

Saturday, April 27, 2024

শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের ৬২তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা – মোঃ হেলাল উদ্দিন

আজ জাতীয় নেতা শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের ৬২তম মৃত্যুবার্ষিকী। আইনজীবী কাজী মুহম্মদ ওয়াজেদ ও সাইদুন্নেসা খাতুনের একমাত্র পুত্র প্রথিতযশা বাঙালি রাজনীতিবিদ ফজলুল হক ১৮৭৩ সালের ২৬ অক্টোবর বরিশাল জেলায় বাকেরগঞ্জের বর্ধিষ্ণু গ্রাম সাতুরিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৬২ সালের ২৭ এপ্রিল তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

সর্বভারতীয় রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন ফজলুল হক। সর্বভারতীয় রাজনীতির পাশাপাশি গ্রাম বাংলার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে তিনি নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। তাঁর আপোষহীন ন্যায়নীতি ও অসামান্য বাকপটুতার কারণে রাজনৈতিক মহল ও সাধারণ মানুষের কাছে তিনি বেশি পরিচিত ছিলেন শেরে বাংলা (বাংলার বাঘ) নামে। অবিভক্ত বাংলার অবিভক্ত বাংলার প্রথম প্রধানমন্ত্রী জাতীয় নেতা আবুল কাশেম ফজলুল হক তাঁর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা এবং দূরদর্শিতার জন্য ছিলেন সুপরিচিতি।

প্রখর মেধাসম্পন্ন ছাত্র এ কে ফজলুল হকের প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় বাড়ির পরিবেশে এবং বাড়িতেই তিনি আরবি, ফারসি ও বাংলা ভাষায় শিক্ষা লাভ করেছিলেন। পরে তিনি ভর্তি হন বরিশাল জেলা স্কুলে এবং সেখান থেকে ১৮৯০ সালে এন্ট্রাস পাশ করার পর উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করেন কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে। ১৮৯৪ সালে তিনি একই বছরে রসায়ন, গণিত ও পদার্থবিদ্যা তিনটি বিষয়ে অনার্সসহ কৃতিত্বের সঙ্গে স্নাতক পরীক্ষা পাশ করেন, যা ছিল একটি বিরল দৃষ্টান্ত।

ইংরাজি ভাষায় এমএ পাঠ শুরু করলেও পরে তিনি গণিতশাস্ত্রে এমএ ডিগ্রি নেন ১৮৯৬ সালে। কথিত আছে, তিনি ইংরাজি ভাষায় এম.এ. পড়তে গেলে তাঁর এক সহপাঠী তাঁকে বলেছিলেন মুসলমান শিক্ষার্থীরা অঙ্ক পড়তে ভয় পায়। সে কারণেই কি তিনি ইংরাজিতে এম.এ. পড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন? ওই সহপাঠীকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মাত্র ছয় মাসের প্রস্তুতি নিয়ে অঙ্কে প্রথম শ্রেণিতে এমএ পাশ করেন।

তিনি আইনেও স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেছিলেন এবং কলকাতার খ্যাতনামা আইনজীবী স্যার আশুতোষ মুখার্জির অধীনে দুইবছর শিক্ষানবিশীর পর কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী হিসাবে আইন ব্যবসা শুরু করেন। পিতার মৃত্যুর পর তিনি বরিশাল আদালতে যোগ দিয়েছিলেন। ১৯০৬ সালে আইন ব্যবসা ছেড়ে ফজলুল হক সরকারি চাকরি নিলেন কিন্তু ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় ১৯১১ সালে তিনি ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে আবার ফিরে গেলেন কলকাতা হাইকোর্টে আইনের পেশায়, যেখানে তিনি বিভিন্ন সময়ে প্রায় ৪০ বছর আইন প্র্যাকটিস করেছেন।

১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের পর বাংলার জনগণ বিভক্ত হয়ে পড়লে, ঢাকার চতুর্থ নবাব স্যার খাজা সলিমুল্লাহ বাহাদুর মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষার জন্য একটি সংগঠন তৈরির কথা ভেবে ১৯০৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর ঢাকায় অল ইন্ডিয়া মুসলিম এডুকেশন কনফারেন্স আহ্বান করেছিলেন। ঢাকার আহসান মঞ্জিলে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন ফজলুল হক। এই সম্মেলন থেকেই জন্ম নেয় নিখিল ভারত মুসলিম লীগ। সেই অর্থে শেরে বাংলা মুসলিম লীগের পথচলার শুরু থেকেই দলটির সঙ্গে ছিলেন। ১৯১৩ সালে তিনি বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক হন এবং ১৯১৬ থেকে ১৯২১ পর্যন্ত তিনি ছিলেন নিখিল ভারত মুসলিম লীগের সভাপতি। ওই একই সময়ে পাশাপাশি তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের যুগ্ম সম্পাদক এবং পরে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন। ফজলুল হকই ছিলেন একমাত্র বাঙালি যিনি দিল্লিতে ১৯১৮ সালে নিখিল ভারত মুসলিম লীগের বার্ষিক সম্মেলনে তিনি সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

১৯১৬ সালে লক্ষ্ণৌ শহরে মুসলিম লীগ ও কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে ফজলুল হক তিনি যে প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন, তাই ‘লক্ষ্ণৌ চুক্তি’ নামে অভিহিত। এই চুক্তির মাধ্যমে প্রাদেশিক পর্যায়ে আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা হয়। ওই অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ্ এবং মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী।

১৯২৪ সালে তিনি বাংলার শিক্ষামন্ত্রী হয়েছিলেন এবং ১৯৩৫ সালে কলকাতা কর্পোরেশনের প্রথম বাঙালি মুসলমান মেয়র নির্বাচিত হন। সরকারি দায়িত্ব পালনের সময় তিনি বাংলার গ্রামে গ্রামে ঘুরে কৃষক শ্রমিকদের বাস্তব অবস্থা দেখেছিলেন, প্রত্যক্ষ করেছিলেন তাদের ওপর জমিদার ও মহাজনদের নির্মম অত্যাচার। তাঁর সেই অভিজ্ঞতার আলোকে পরবর্তী জীবনে দরিদ্র নিপীড়িত কৃষক সমাজের অবস্থার উন্নতি ঘটাতে তিনি প্রবর্তন করেছিলেন ঋণ সালিশী বোর্ড, প্রণয়ন করেছিলেন বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন।

ভারতের ভবিষ্যত শাসনতন্ত্রের রূপরেখা নিয়ে আলোচনার জন্য ১৯৩০ এবং ১৯৩২ সালের মধ্যে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে পরপর বেশ কয়েকটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল তদানীন্তন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী র‍্যামসে ম্যাকডোনাল্ডের সভাপতিত্বে। ১৯৩০-৩১ সালের প্রথম বৈঠকে কংগ্রেসের যোগদান প্রত্যাখান করেছিলেন মি. গান্ধী। কিন্তু মুসলিম লীগ ওই বৈঠকে অংশগ্রহণ করেছিল। ফজলুল হক ঐ বৈঠকে বাংলা এবং পাঞ্জাবের মুসলমানদের জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রতিনিধিত্ব দাবি করে স্বতন্ত্র নির্বাচনের পক্ষে বক্তৃতা দিয়েছিলেন।

অবিভক্ত বাংলা প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন পাবার পর ১৯৩৭ সালে সেখানে প্রথম সাধারণ নির্বাচনে ব্রিটিশ ভারতে প্রজা পার্টি নামে সামন্ততন্ত্র বিরোধী যে দল ছিল সেটিকে ফজলুল হক কৃষক-প্রজা পার্টি নামে রাজনৈতিক দলে রূপান্তর ঘটান এবং ঐ নির্বাচনে বঙ্গীয় প্রাদেশিক পরিষদে তাঁর দল তৃতীয় বৃহত্তম দল হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে এ. কে ফজলুল হক হন অবিভক্ত বাংলার প্রথম নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী।

১৯৪০ সালে মুহাম্মদ আলী জিন্নাহর সভাপতিত্বে নিখিল ভারত মুসলিম লীগের অধিবেশন লাহোরে অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে বাংলার প্রধানমন্ত্রী এ কে ফজলুল হক এক জ্বালাময়ী বক্তৃতায় প্রথম ‘পাকিস্তান গঠনের প্রস্তাব’ পেশ করেন। ঐ অধিবেশনে ব্রিটিশ ভারতের পূর্ব এবং উত্তর-পশ্চিমের মুসলমান প্রধান অংশে ‘স্বায়ত্তশাসিত পৃথক মুসলিম রাষ্ট্র’ প্রতিষ্ঠার দাবি সম্বলিত সেই প্রস্তাব গৃহীত ও পাশ হয়। তাঁর ঐ বক্তৃতায় মুগ্ধ হয় পাঞ্জাববাসীরা তাঁকে উপাধি দিয়েছিল শের-ই-বঙ্গাল অর্থাৎ বাংলার বাঘ। তখন থেকে তিনি শেরে-বাংলা নামে পরিচিত হয়ে উঠেন।

১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির পর ফজলুল হক ঢাকায় চলে যান এবং ১৯৫২ সালে সাবেক পূর্ব পাকিস্তানের অ্যাডভোকেট জেনারেল নিযুক্ত হন। ১৯৫৪ সালে দেশের সাধারণ নির্বাচনে তিনি ‘যুক্তফ্রন্ট’ দলের নেতৃত্ব দিয়ে বিপুল ভোটে জয়লাভ করে পূর্ব পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। এরপর রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে তিনি পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিযুক্ত হন। ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র গৃহীত ও কার্যকর হবার পর তিনি স্বারষ্ট্রমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দিয়ে করাচি থেকে ঢাকা চলে যান এবং পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর পদের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এই পদে তিনি ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত ছিলেন। ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানের এক অভ্যূত্থানের পর তাঁকে গৃহবন্দী করা হয়।

শিক্ষা বিস্তারে শেরে বাংলা অনন্য অবদান রেখেছেন। ১৯৪০ সালে তাঁর প্রচেষ্টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হল প্রতিষ্ঠিত হয়। একই বছরে তাঁর প্রচেষ্টায় মুন্সিগঞ্জে হরগঙ্গা কলেজ প্রতিষ্ঠা হয়। তাঁর নিজের গ্রামেও তিনি একটি কলেজ এবং পাশাপাশি মাদ্রাসা ও হাইস্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ফজলুল হকের উদ্যেগে কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ইসলামিয়া কলেজ ও মেয়েদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান লেডি ব্র্যার্বোন কলেজ। এছাড়া তিনি মুসলমানদের শিক্ষিত করে তুলতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন আইন প্রণয়ন করেছিলেন।

১৯৬২ সালের ২৭শে এপ্রিল শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের জীবনাবসান হয়। আজ তাঁর ৬২তম মৃত্যুবার্ষিকীতে জানাই গভীর শ্রদ্ধা।

(তথ্যসূত্রঃ বিবিসি বাংলা এবং তাঁকে নিয়ে লেখা বিভিন্ন গ্রন্থ/ মোঃ হেলাল উদ্দিন- শিক্ষক, লেখকও গবেষক)।

শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের ৬২তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা

শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের ৬২তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা – মোঃ হেলাল উদ্দিন

Thursday, April 18, 2024

বিধাতার খেলা -- মোঃ হেলাল উদ্দিন

থমথমে আকাশ

কোথাও নেই একটু বাতাস

এরই মাঝে হঠাৎ বৃষ্টির ধারা

এইতো বিধাতার খেলা।

বিধাতা, কেন খেল এমন খেলা

কেন হঠাৎ ঝড় তোলো জীবনে

কেন আবার ভাসাও আনন্দে

কেন এমন করো জীবন নিয়ে।

হে বিধাতা, কেন সব সময় সমান রাখো না

কেন আনন্দের মাঝে বেদনা দাও

কেন সুখের মাঝে দুঃখ দাও

কেন হাসি খুশির মাঝে রাখনা সমান।

আকাশের মেঘ কেটে যাক

বৃষ্টির ধারা থেমে যাক

বহে যাক আনন্দের সুবাতাস

জীবন সাধারণ হয়ে যাক।

------------------

বিধাতার খেলা -- মোঃ হেলাল উদ্দিন

13/06/2017

Md. Helal Uddin

Tuesday, April 16, 2024

বাংলাদেশ সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী এবং বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লব: একটি পর্যালোচনা

 Journal of Social Science (JSS), Islamic University, Kushtia, Bangladesh
Vol. 2, No. 1, June - 2022 & No. 2, December - 2022 ISSN : 2521-3083

 

'বাংলাদেশ সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী এবং বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লব:  একটি পর্যালোচনা' প্রবন্ধটি পড়তে

Click Here

Saturday, April 6, 2024

সামাজিক গবেষণার ধাপ সমূহ -- মোঃ হেলাল উদ্দিন

সামাজিক গবেষণা হচ্ছে একটি সূক্ষ্ম সুশৃঙ্খল অনুসন্ধান পদ্ধতি। কোনো বিষয় বা ঘটনা সম্পর্কে গবেষণা পরিচালনা করতে হলে সুনির্দিষ্টভাবে কতকগুলো ধাপ অনুসরণ করতে হয়। প্রতিটি সামাজিক গবেষণার ধাপ বা পর্যায়গুলোর স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য থাকলেও এগুলো পরস্পর নির্ভরশীল ও অবিচ্ছেদ্যভাবে সম্পর্কিত। এজন্য সামাজিক গবেষণা পরিচালনার প্রাক্কালে অনেক সময় প্রথম পর্যায়েই শেষ পর্যায়ের প্রকৃতি নিরূপণ করতে হয়।

নিম্নে সামাজিক গবেষণার ধাপ গুলো আলোচনা করা হলো-

সমস্যা চিহ্নিতকরণ (Identification of the Problem)

গবেষণার প্রথম ও গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় হচ্ছে প্রচলিত সমস্যাবলি হতে গবেষণাযোগ্য সমস্যাবলি চিহ্নিত করা। কারণ, সমাজে বিরাজমান সব সমস্যাই গবেষণার উপযোগী নয়। গবেষণার সমস্যা চিহ্নিত করার সময় নিম্নোক্ত বিষয়াবলির প্রতি সচেতন থাকতে হয়-

ক) যেসব সমস্যা জটিল এবং যেগুলোর সমাধান কাম্য,

খ) যেসব সমস্যা সমাধানযোগ্য,

গ) সমস্যাটির বিভিন্ন দিক সম্পর্কে অনেক কিছু জানার প্রয়োজন রয়েছে,

ঘ) সমস্যাটি বিশ্লেষণ ও পরিমাপে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি প্রয়োগের সুযোগ রয়েছে। এসব দিক বিবেচনা করে গবেষণার সমস্যাবলি চিহ্নিত করা প্রয়োজন।

সমস্যা নির্বাচন (Selection of the Problem)

গবেষণার প্রথম পর্যায়ে চিহ্নিত সমস্যাগুলোর উপর যেহেতু একত্রে গবেষণা করা সম্ভব নয় এবং সব সমস্যা সমাধানের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা সমান নয়, সেহেতু চিহ্নিত সমস্যাগুলো হতে গবেষণার জন্য একটি নির্বাচন করতে হয়। গবেষণা রজন্য সমস্যা নির্বাচনের সময় নিম্নোক্ত বিষয়গুলো বিবেচনা করতে হয়-

ক) সমস্যা, প্রভাব ও বিস্তৃতি,

খ) সমস্যার সমাধান যোগ্যতা,

গ) গবেষণার বাস্তব উপযোগিতা ও গুরুত্ব,

ঘ) গবেষণার সাফল্য,

ঙ) গবেষণার তথ্যাবলি সংগ্রহ এবং পরিমাপের সম্ভাব্যতা ইত্যাদি।

সমস্যা সম্পর্কে প্রচলিত জ্ঞান ও মতবাদের সঙ্গে পরিচিত হওয়া

এ পর্যায়ে গবেষণা রজন্য নির্বাচিত সমস্যার উপর প্রকাশিত মন্তব্য, পূর্বোক্ত গবেষণা, মতবাদ এবং সমস্যার সাথে সংশ্লিষ্ট প্রবন্ধ, বই-পুস্তক প্রভৃতি প্রচলিত জ্ঞান পর্যালোচনা করে দেখা হয়। এতে গবেষক সমস্যা সম্পর্কে সুস্পষ্ট জ্ঞান লাভে এবং সংজ্ঞা প্রদানে সক্ষম হন। অনেকের মতে গবেষণার প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে প্রাসঙ্গিক তথ্য ও প্রকাশনা পর্যালোচনা। প্রচলিত জ্ঞান ও তত্ত্বের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার গুরুত্ব অনেক। যেমন-

ক) সমস্যা ব্যক্তকরণে সহায়তা দান করে,

খ) প্রাসঙ্গিক জ্ঞানের পর্যালোচনা সমস্যার গুরুত্বকে তুলে ধরে।

গ) গবেষণার প্রাথমিক খসড়া প্রণয়নে সহায়তা করে,

ঘ) সমস্যার কার্যকরী সংজ্ঞা প্রদান সহজ হয় ইত্যাদি।

সমস্যার কার্যকরী সংজ্ঞা প্রদান (Defining the Problem)

গবেষণা পর্যায়ে এমনভাবে সমস্যাকে সংজ্ঞায়িত করা হয় যাতে সমস্যার সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় হতে একে আলাদাভাবে চিহ্নিত করা যায়। এটি গবেষণার সামগ্রিক দার্শনিক পটভূমি তুলে ধরে, যার প্রেক্ষিতে গবেষণার লক্ষ্য নিরূপিত হয়। এ পর্যায়ে গবেষক সমস্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এবং গবেষণায় ব্যবহৃত বিভিন্ন প্রত্যয় ও অর্থবোধক শব্দের সুস্পষ্ট সংজ্ঞা প্রদান করেন। এ ধরনের সংজ্ঞা প্রদান ব্যতীত গবেষণার বিষয়বস্তু অস্পষ্ট হয় পড়ে।

কার্যকরী অনুমান গঠন (Formulation of Working Hypothesis)

গবেষণার আরম্ভ বিন্দু হতে অনুমান গঠন করা হয়। অনুমান হচ্ছে এমন একটি অন্তরবর্তীকালীন সিদ্ধান্ত যাকে গ্রহণ এবং প্রত্যাখ্যান করার পূর্বে এর সত্যতা প্রমাণ করার প্রয়োজন রয়েছে। কার্যকরী অনুমান গবেষণার দিকনির্দেশনা করে অন্ধ অনুসন্ধানের হাত থেক গবেষককে মুক্ত রাখে। সমস্যা সম্পর্কে পূর্ব অভিজ্ঞতার পর্যবেক্ষণ হচ্ছে অনুমান গঠনের ভিত্তি। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্তর।

নকশা প্রস্তুত করা (Designing the Research)

গবেষণার নকশা গবেষকের গবেষণামূলক কার্যাবলির পথ প্রদর্শক স্বরূপ। একজন প্রকৌশলীর নিকট নির্মাণ কাজের নকশা যেরূপ গুরুত্বপূর্ণ তেমনি সমাজ গবেষকের নিকটও গবেষণার নকশা গুরুত্বপূর্ণ। এতে গবেষণার বিষয়বস্তু, লক্ষ্য, যৌক্তিকতা, তথ্যের উৎস ও সংগ্রহ পদ্ধতি, তথ্য বিশ্লেষণ প্রক্রিয়া, নির্ভরযোগ্যতা, সময়, বাজেট, গবেষণাকার্যের প্রশাসনিক কাঠামো ও ব্যবস্থাপনা কার্যের প্রশাসনিক কাঠামো প্রভৃতি উপস্থাপন করা হয়।

তথ্য সংগ্রহের হাতিয়ার নির্ণয় (Determining Instruments)

এ পর্যায়ে গবেষণার তথ্য সংগ্রহের কোন পদ্ধতি ও কৌশল অবলম্বন করা হবে তা নির্ণয় করা হয়। তথ্যের নির্ভরযোগ্যতা এর উপর নির্ভরশীল বটে, এটি গবেষণার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্তর। তথ্য সংগ্রহের হাতিয়ার বা উপায় নির্বাচনের সময় লক্ষ রাখতে হবে, যাতে এগুলো যথার্থ, নির্ভরযোগ্য এবং সঠিক তথ্য প্রদানে সক্ষম হয়।

তথ্য সংগ্রহ (Data Collection)

এ পর্যায়ে গবেষক তথ্য সংগ্রহকারী, তত্ত্বাবধানকারী, তথ্যসংগ্রহের সময়সীমা, ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি নির্ধারণ করেন। এসবের উপর তথ্যের সঠিকতা, গুণগত মান নির্ভর করে বলে এক্ষেত্রে গবেষককে অত্যন্ত সচেতন ও সতর্ক থাকতে হবে।

তথ্যের বিশ্লেষণ (Analysis of Data)

সংগৃহীত তথ্যসমূহকে প্রক্রিয়াজাত ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে গবেষক সমস্যার আনুমানিক সিদ্ধান্তের সঙ্গে সংগৃহীত তথ্যের মিল রয়েছে কি-না তা যাচাই করে দেখেন। যুক্তিসম্মত উপায়ে তথ্যের পর্যায়ক্রমিকতা বজায় রেখে তথ্যকে শ্রেণি ও সারণিবদ্ধকরণও এর পর্যায়ে করা হয়ে থাকে।

তথ্যের মূল্যায়ন ও ব্যাখ্যা (Interpretation and Evaluation of Data)

গবেষণার এ পর্যায়ে সংগৃহীত তথ্যের বিস্তারিত ব্যাখ্যার মাধ্যমে তথ্যের বিভিন্ন দিক ও পরিধি মূল্যায়ন করা হয়। এ পর্যায়ে বিশেষভাবে লক্ষ করা হয় যে, তথ্যসমূহ সমস্যা সম্পর্কে সন্তোষজনক জ্ঞান দানে সক্ষম কিনা এবং ভবিষ্যৎ অনুসন্ধানের তথ্য সহায়ক হবে কিনা সে সম্পর্কে বিশ্লেষণ করে দেখা হয়।

গবেষণার ফলাফল বা প্রতিবেদন প্রকাশ (Reporting)

গবেষণার সর্বশেষ স্তর হচ্ছে প্রাপ্ত ফলাফল সংক্ষিপ্ত ও সহজবোধ্য করে প্রকাশ করা। সামাজিক গবেষণার ফলাফল সাধরণত সারণি, রেখাচিত্র, মানচিত্র, গ্রাফ প্রভৃতির মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়ে থাকে। গবেষণা রিপোর্টে সাধারণত নিম্নোক্ত বিষয়গুলো অন্তর্ভূক্ত করা হয়ে থাকে-

ক) সমস্যার সংজ্ঞা,

খ) গবেষণার লক্ষ্য,

গ) গবেষণার পদ্ধতি,

ঘ) গবেষণার ফলাফল, এবং

ঙ) ফলাফলের ব্যবহারিক গুরুত্ব।

 

সামাজিক গবেষণার ধাপ সমূহ 

-- মোঃ হেলাল উদ্দিন