Wednesday, August 3, 2022

ছাত্র-শিক্ষিকার বিয়ে এবং কিছু কথা -- মোঃ হেলাল উদ্দিন

বর্তমান সময়ে ভাইরাল হয়েছে ২২ বছর বয়সী কলেজ ছাত্র বিয়ে করেছে ৪০ বছর বয়সী কলেজ শিক্ষিকাকে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সকল মাধ্যমেই আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে। আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় এমন অসময় বিয়ে স্বাভাবিক চোখে দেখার সুযোগ নেই এটা সত্যিই, তবে কিছু বিষয় পরিস্কার হয়ে আলোচনা সমালোচনা করা দরকার।


প্রথমেই এটা পরিস্কার করে বলা দরকার যে তারা যে যার পেশায় ছাত্র এবং শিক্ষক হলেও সরাসরি কেউ কারো ছাত্র শিক্ষক নয়। তাই খবরের শিরোনামে ছাত্র শিক্ষিকার বিয়ে এটা বলা শুধু খবরটাকে আকর্ষণী করার সাংবাকিতা কৌশল। একজন ছাত্রের সবাই যেমন শিক্ষক না, তেমনি একজন শিক্ষকের সবাই ছাত্র নয়। তাই এমন শিরোনাম করে মানুষের দৃষ্টি বাগানোর কৌশল নিয়ে সমাজকে একটা ভুল ম্যাসেজ দেয়া হচ্ছে। এমন সংবাদ করলে পুরুষ শিক্ষকদের তো হাজারো সংবাদ প্রকাশ করতে হয়, কারন তাদের বড় একটা অংশের বিয়ে হয় ছাত্রীর সাথে, কিন্তু সেখানে এমন সংবাদ করা হয় না। এখন বলা যেতে পারে এটা তো স্বাভাবিক কারন পাত্রে বয়স বেশি হয় আর পাত্রীর বয়স কম হয়, যার কারনে ছাত্রীতো বিয়ে করতে হবে। ছাত্রী ছাড়া এতো পাত্রী পাবে কোথায়?


একজন শিক্ষক যখন তার সরাসরি ছাত্রীকেও বিয়ে করে তখনও কোন সমালোচনা হয় না। কারন সমালোচনার ক্ষেত্রে বয়স একটা ফ্যাক্টর। যেহেতু আমরা ধরেই নেই যে বিয়ের ক্ষেত্রে পাত্রীকে অবশ্যই বয়সে কম হতে হবে তাই বেশি বয়সী পাত্রীকে বিয়ে করা আমাদের সমাজ স্বাভাবিক ভাবে মেনে নেয় না। কিন্তু তাই বলে বয়সে বড় পাত্রীকে বিয়ে করতে তো কোন ধর্মীয় বা আইনি বাধা নেই। তারপরেও কেন সমালোচনা? এই সমালোচনাটা আমাদের স্বভাবের  একটা অংশ। তা পুরুষ বা নারী যেই হোক না কেন। টম ইমাম যখন তার মেয়ের চেয়েও কম বয়সী একটা মেয়েকে বিয়ে করলো তখন কি সমালোচনা কম হয়েছিলো? অনেক সমালোচনা হয়েছিলো। টাকার লোভ, টাকার ক্ষমতার ব্যবহার, সময় বিয়ে ভেঙ্গে যাবে এমন কতো সমালোচনার ঝড় বয়ে গিয়েছিলো। এখনো আলোচনা সমালোচনা চলছে। আবার সুবর্ণা মোস্তফা যখন হুমায়ুন ফরিদীকে ছেড়ে বদরুল আনামকে বিয়ে করেছিলো তখনো সমালোচনা চলছিলো। তাই বলে কি তারা খারাপ আছে?ভালো থাকাটা বয়সের উপরে নয়, মনের উপরে নির্ভর করে কারা কতোটুকো ভালো থাকবে।


কলেজ ছাত্র মামুন আর কলেজ শিক্ষিকা খাইরুন নাহার কেউ কারো ছাত্র শিক্ষক নয়। তাই ছাত্র শিক্ষকের দোহাই দিয়ে তাদের সম্পর্কে খারাপ বলার সুযোগ আমি দেখিনা। আর বয়সের বিষয়টা যতোটা না শারীরিক তারচেয়ে মানসিক বেশি। মন যদি মনের মানুষ খুঁজে পায় তার বয়স কম বেশিতে কিছু আসে যায় না। যদি তাই হতো তাহলে দশ পনের বছর ব্যবধানের পাত্র পাত্রীদের অনেক বিয়ে ভেঙ্গে যেতো। আমাদের সমাজিক ব্যবস্থা আমাদেরকে একই গন্ডির বাইরে চিন্তা করতে দেয়না বিধায় এগুলো নিয়ে আলোচনা সমালোচনা করা হয়। উন্নত বিশ্বে এমন সম্পর্ক নিয়ে কথা বলতে শোনা যায় না। অনেক সন্দেহ করতেছে যে নারীর চেয়ে পুরুষের বয়স কম হওয়াতে এই বিয়ে বেশি দিন স্থায়ী হবে না। তাহলে আমাদের দেশে তো বিবাহ বিচ্ছেদ হবার কথা নয়, কারন এখনে কম বয়সী পাত্রীই বেশির ভাগ বিয়ে করা হয়ে থাকে।


অনেকে বলতেছে ছেলে খুব চালাক। মেয়ের উপার্জনে চলতে পারবে তাই এমন বিয়ে করেছে। আসলে এটা ঠিক নয়, কারন আত্মমর্যাদাবান, দায়িত্বশীল মানুষ কখনো অন্যের ভরসায় বসে থাকে না। যারা দায়িত্ব নিতে চায় না বা অন্যের খরচে নিজে চলতে চায় তারা সব সময় সব জায়গায় একই রকম থাকবে। তাদের পরিবর্তন করা এতো সহজ নয়। যদি তাই হতো তাহলে সমাজে শান্তি বৈ অন্যকিছু থাকতো না।


সমাজে প্রতিটা সম্পর্ক শেষ পর্যন্ত নির্ভর করে মানুষের মানসিকতার উপরে। তাই সমালোচনার নামে কোন পেশাকে, কোন বয়সকে, কোন শ্রেণিকে, কোন লিঙ্গকে ছোট করা আমাদের উচিত নয়। তারা অবৈধভাবে সম্পর্কটা চালিয়ে যেতে পারতো, আমাদের জানার কোন সুযোগ ছিলো না। যা বর্তমানে আমাদের সমাজে অহরহ চলতেছে কিছুটা আমরা দেখি, কিন্তু বড় অংশটাই আমাদের লোকচক্ষুর অন্তরালে ঘটে যাচ্ছে। তারা এখান থেকে সমাজকে একটা ধাক্কা দিয়েছে। কারন এই সমাজ পাত্রীর বয়স বেশি হোক এমন কোন বিয়ে মেনে নিতে চায় না, তা বয়সের পার্থক্য এক বা দুই বছরের হলেও।


এই সম্পর্ক যদি টিকে যায় তাহলে আমাদের সমাজ ও নারী নিয়ে অনেক ট্যাবু ভাঙ্গতে সহায়তা করবে। এখানে একটু সন্দেহ প্রকাশ করলাম এই কারনে যে আমরা তাদের নিয়ে যেভাবে সমালোচনা করতেছি তাতে তারা তাদের সম্পর্ক টিকিয়ে কতোটা শক্ত থাকতে পারবে বলা কঠিন। কেননা মেয়ের পরিবার এখনো এই সম্পর্ককে মেনে নিতে পারেনি আর সমাজিক সমালোচনা তো চলমান। এতো সমালোচনার মধ্যেও তাদেরকে প্রশংসা করা মানুষের সংখ্যাও নেহাত কম নয়, এটা একটা পজেটিভ দিক। তাদের দাম্পত্য জীবন সুন্দর ও স্থায়ী হোক, আর সমাজ থেকে কিছু ট্যাবু দূর হয়ে যায়। কম বয়সী মেয়েকেই বিয়ে করতে হবে, বেকার ছেলেকে কখনোই বিয়ে করা যাবে না, বিয়ের ক্ষেত্রে শারীরিক সৌন্দর্যের প্রাধান্য এমন কিছু বাধা চলে যাক।

 



 

 

ছাত্র-শিক্ষিকার বিয়ে এবং কিছু কথা -- মোঃ হেলাল উদ্দিন

1 comment: