রাত পোহালেই বাংলা নববর্ষ ১৪২৯। সম্রাট আকবর খাজনার হিসাব নিকাষের জন্য হালখাতার চালু করতে গিয়ে এই প্রথার প্রচলন করেন। বছর শেষে খাজনাপাতি যাতে করে সহজে আদায় করে নতুন করে আবার শুরু করতে পারে এই ছিল উদ্দেশ্য। কালের পরিক্রমায় এটা বাঙালি সংস্কৃতির অংশে পরিণত হয়। আর বর্তমান সময়ে এসে এটা প্রগতিশীল এবং প্রতিক্রিয়াশীলদের বির্তকে স্থান করে নিয়েছে।
আমি ভিন্ন কিছু কথা বলি। গত দুই দিন আগে কুমিল্লার বুড়িরচং এ এক দরিদ্র কৃষকের ৪০ শতক জমির লাউ, চাল কুমড়া এবং মিষ্টি কুমড়ার ক্ষেতের সকল গাছ কেটে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা। দরিদ্র কৃষক জমি লিজ নিয়ে এই কাজটি করেছিল। ফলন ভালো হওয়ায় এবং বাজার মূল্য ভালো থাকায় তিনি আশা করেছিলেন প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা আর আয় হবে। কিন্তু কি হলো? তার মঙ্গল এখন কেমন করে হবে? তার মঙ্গলের জন্য আমাদের কি করা উচিত? সে কি মসজিদে যাবে না শোভাযাত্রায় যাবে? আমার কাছে বোধগম্য নয়। আর যে বা যারা এই কাজটি করেছে তারা কোথায় গিয়ে মঙ্গল কামনা করবে তাও ভেবে পাচ্ছি না।
সন্ধ্যায় অফিস থেকে ফেরার পথে কিংবা আগে যে ব্যক্তি যারা অন্যের কাছ থেকে মোটা অংকের ঘুষ নিয়ে কিংবা অন্য কোন অবৈধ পথে পকেট ভর্তি টাকা নিয়ে নববর্ষের পান্তা ইলিশ খাবার আয়োজন করেছেন তারা নিজের মঙ্গল করলেও কোন একটা পরিবারের জন্য অমঙ্গলই তো করেছে নাকি? এরা যদি মঙ্গল শোভাযাত্রা করে ইলিশ পান্তা খেয়ে ঘরে ফিরবে কিংবা পাঞ্জাবি টুপি পড়ে মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ে, তসবিহ গুনে বা মন্দিরে গিয়ে পূজা অর্ঘ দিয়ে আবার নতুন বছর থেকে একই কাজ করেন তাতে কি সমাজের, দেশের মঙ্গল হবে? বিষয়টা আমার কাছে পরিস্কার না।
আমরা যদি নিজেদের, সমাজের এবং দেশের মঙ্গল চাই তাহলে প্রথমেই নিজেকে পরিশুদ্ধ করতে হবে বলেই আমি মনে করি। যদি নিজেকে অন্যের অমঙ্গল থেকে রক্ষা করতে না পারি তাহলে আমিও অন্যের অমঙ্গলের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হবো। নিজেকে পরিশুদ্ধ না করে মঙ্গলশোভা কিংবা মসজিদ, মন্দিরে গিয়ে মঙ্গল কামনা করে লাভ হবে না বলেই আমার ধারনা। সমাজের প্রত্যেকটা মানুষ যখন তার নিজ নিজ অবস্থান থেকে নিজের ও অন্যের মঙ্গলে কাজ করবেন তখনই সমাজে, রাষ্ট্রে মঙ্গল প্রতিষ্ঠা পাবে। অন্যথায় অমঙ্গলেই ভরে যাবে আমাদের সোনার বাংলা। নতুন বছর আসবে, বছর চলে যাবে আর আমরা অমঙ্গলের মধ্যেই পড়ে থাকবো।
তাই আমি মনে করি কোনটা ভালো কোনটা খারাপ এই বির্তকে না গিয়ে এবং এর জন্য মানুষে মানুষে সমাজের, রাষ্ট্রের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করে যার কাছে যেটা ভালো মনে হয় তার মাধ্যমেই মঙ্গল কামনা করা শ্রেয়। সৃষ্টিকর্তা আমাদের বিবেক দিয়েছেন। নিজের এই বিবেক যা রায় দেয় তাই করুন, তবে যাতে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয় তা অবশ্যই নয়। কেননা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা কোন ধর্মের কাজ নয় এবং সকল ধর্ম, সকল সংস্কৃতি শান্তির কথা বলে। তাই বির্তক না করে, বিশৃঙ্খলা না করে, অশান্তি না করে নিজের এবং অন্যের মঙ্গলের জন্য নিজেদের নিবেদিত করি। এটাই হোক নতুন বাংলা বছরের শপথ। শুভ নববর্ষ - ১৪২৯।
বাংলা নববর্ষ এবং মঙ্গল-অমঙ্গলের কথা -- মোঃ হেলাল উদ্দিন
No comments:
Post a Comment