বিয়ে
একটা পবিত্র বন্ধন। বিয়ের মাধ্যমে দু'জন নারী-পুরুষের মধ্যকার মিলনকে
বৈধতা দেয়া হয় এবং ইসলামের দৃষ্টিতে বিয়ে একটা ইবাদাত স্বরুপ। যারা বিয়ে
করবেন বলে ভাবছেন এবং ইতোমধ্যে যারা বিয়ে করেছেন, তাদের দাম্পত্য জীবনকে
সুন্দর ও সুখের করতে কতিপয় বিষয়ের প্রতি নজর রাখা গুরুত্বপূর্ণ। আর এ
বিষয়গুলো জানতে আপনারা পড়তে পারেন একটা সুন্দর বই, Marriage: Making and
Living of It; বইটি লিখেছেন মির্জা ইয়াওয়ার বেগ। বইটি বিয়েঃ স্বপ্ন থেকে
অষ্টপ্রহর নামে বাংলায় অনুবাদ করেছেন আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, সিয়ান
পাবলিকেশনের এই বইটি সহজে পাবেন কাটাবনের যেকোন লাইব্রেরিতে। এবার শোনা
যাক, কেন বইটি পড়তে বলা আর কেনই বা এই লেখা। পৃথিবীতে এমন নারী বা পুরুষ
খুঁজে পাওয়া কঠিন যারা বিয়ে করতে চান না বা বিয়ের সুখে বসবাস করতে আগ্রহী
নয়। সুতরাং বলা যায়, আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় বিয়ে একটি মৌলিক বিষয়।
বিয়ে কি?:
ইসলামের
দৃষ্টিতে একজন নারী ও একজন পুরুষের মাঝে সম্পাদিত সবচেয়ে জীবনঘনিষ্ঠ একটি
দ্বিপাক্ষিক চুক্তির নাম হলো বিয়ে। বিয়ের প্রথম ও প্রধান উদ্দেশ্য সম্পর্কে
আল্লাহ প্রশান্তি লাভের কথা বলেছেন। কেননা বিয়ের এই চুক্তিতে নারী-পুরুষ
আল্লাহকে সাক্ষী রেখে প্রতিজ্ঞা করেছেন যে, "তারা জীবনসঙ্গীর কাছ থেকে
পূরণীয় একান্ত বিষয়গুলো আর কোথাও খুঁজবেন না। তাদের চোখ, কান ও হৃদয়
জীবনসঙ্গী ছাড়া অন্য কোথাও গিয়ে দিকহারা হবে না" (বিয়েঃ স্বপ্ন থেকে
অষ্টপ্রহর)।
কাকে বিয়ে করবেন?:
বিয়ে
করার ক্ষেত্রে সবারই পছন্দে থাকে পাত্র বা পাত্রীর শারীরিক সৌন্দর্য, বংশ
মর্যাদা, অর্থ-বিত্ত ও সমাজে তাদের প্রভাব প্রতিপত্তি। কিন্তু হাদিসে আছে,
"তোমরা বিয়ের সময় দীনদার নারীদের অগ্রাধিকার দাও। মির্জা ইয়াওয়ার বেগ
লিখেছেন, বিয়ের জন্য ছয়টি বিষয় খুব দরকার যেগুলো হলোঃ
ক) পাত্র/পাত্রীর সাহস, ধৈর্য, আত্নসম্মান, আত্নবিশ্বাস, ধীরস্থির স্বভাব, পুরুষের পৌরুষদীপ্ততা, নারীদের লজ্জাশীলতা, বিনয় প্রভৃতি।
খ)
প্রেমে পড়ার কথা ভুলে যেতে হবে। ভালোবাসা তৈরি করতে হবে। কেননা প্রেম
হচ্ছে শারীরিক আকর্ষণের অন্য একটা নাম মাত্র, যা ক্ষনস্থায়ী। পক্ষান্তরে,
ভালোবাসা তৈরি করা মানে চোখের চাহনি, ইশারা আর বিশেষ শব্দের মিশেলে তৈরি
করা এমন এক নিজস্ব ভাষা, যে ভাষা কেবল দু'জনেরই। প্রেমে পড়ার চেয়ে তৈরি করা
ভালোবাসার ফলে বিয়ের পঁচিশ বছর পরেও যখন জীবনসঙ্গীর দিকে তাকাবে তখনই তার
প্রেম পড়বেন।
গ) পাত্র/পাত্রীর আচার-আচরণ দেখতে হবে সবার আগে।
ঘ) পাত্র/পাত্রীর কথোপকথন কেমন তা দেখতে হবে। কেননা কথাবার্তার মাধ্যমে ব্যক্তির মানসিকতার পরিচয় পাওয়া যায়।
ঙ) জীবনের বাকি সময়টা যেহেতু এক সাথে কাটাতে চাচ্ছেন, তাই দু'জনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যও একই রকম থাকা দরকার।
চ)
সম্ভাব্য জীবন সঙ্গীর পরিবারের দিকে খেয়াল করুন। দেখুন তাদের পরিবারের
সাথে আপনার কি কি বিষয় যায়, বেশি অমিল থাকলে এর থেকে দূরে থাকুন।
বিবাহিত জীবন সুখী করার উপায় কি?:
এ
সম্পর্কে এ বইয়ে বিশটি প্রশ্নের উত্তর প্রদানের মাধ্যমে বিবাহিত জীবন সুখী
করার উপায় সমূহ বলে দিয়েছেন। লেখকের মতে, সুখী দাম্পত্য জীবনের মূলসূত্র
তিনটি- সত্য বলা, যত্ন নেয়া এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ। এছাড়াও থাকতে হবে
ক্ষমাশীলতা, সবকিছু ভাগাভাগি করে নেয়া, কথোপকথন আর একে অন্যের সান্নিধ্য
পাওয়ার ব্যাকুলতা। প্রবাদ আছে, যারা এক সঙ্গে আনন্দ উপভোগ করতে পারে তারাই
দীর্ঘদিন এক সঙ্গে থাকতে পারে। সুখী দম্পতি হবার আর একটা সহজ কাজ হচ্ছে
উপহার দেয়া। হাদিসে আছে, "তোমরা উপহার দাও, কারন তা পরস্পরের মধ্যে
ভালোবাসা বাড়িয়ে দেবে।" সুতরাং পরস্পর পরস্পরকে উপহার দিন, তা যে মূল্যেরই
হোক না কেন।
দাম্পত্য
জীবনে মা-বাবা ও শ্বশুড়-শ্বাশুড়িকে মোটেই জড়ানো যাবে না। দাম্পত্য জীবনে
ছোট-বড় অনেক সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। "বিয়ের পর এসব নানা রকম সম্পর্কের
প্রত্যেকটিকে যথাস্থানে রেখে সামাল দিয়ে চলতে পারাটাই মানসিক পরিপক্বতা।"
আমি থেকে আমরা হওয়া একটা কঠিন ব্যাপার। তাই ছোট ছোট বিরোধের বিষয়গুলো এড়িয়ে
চলতে পারলে বড় ধরনের বিবাদ থেকে খুব সহজেই রক্ষা পাওয়া যাবে।
দাম্পত্য জীবন সূখী করার দায়িত্ব কার?:
আমরা
ভাবি পুরুষ শুধু উপার্জন করবে আর নারী ঘর সামলাবে। কথাটা ঠিক আছে, তাই বলে
পুরুষ আর কোন কাজ করবে না তা কিন্তু ঠিক নয়, আবার নারীও শুধু ঘর নিয়ে
থাকবে তাও ঠিক নয়। দাম্পত্য জীবনকে সুখী করতে উভয়কেই সহায়তা করতে হবে।
লেখকের মতে, "পরস্পরকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করুন এবং তা নিয়মিত প্রকাশ করুন।
ভালো কাজে পরস্পরে প্রতিযোগিতা করুন।"
অনেকে
বলে থাকেন, টাকা হলেই সংসারে সুখ থাকে। আসলে স্বচ্ছলতা কিংবা অস্বচ্ছতা
উভয়ই সংসার দৃঢ় করা কিংবা ভাঙনের কারণ হতে পারে। তাই টাকার চেয়েও মহত্ব,
আত্নসম্মান, আত্নবিশ্বাস, মমতা, পরস্পরকে খুশি করার অকৃত্রিম ইচ্ছা অনেক
বেশি প্রয়োজন। মিথ্যা বলা, বিশ্বাস ভঙ্গ করা, প্রতারণা করা, কর্তৃত্বের
জন্য লড়াই করার মত কাজ থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। যা নারী-পুরুষ উভয়ের
জন্যই প্রযোজ্য।
শেষকথাঃ
একটি
সফল দাম্পত্য জীবনের জন্য দু'টি শর্ত অবশ্যই পালনীয়, ক) পরস্পরের প্রতি
কৃতজ্ঞতাবোধ এবং খ) খারাপ স্মৃতি ভুলে যাওয়া। সুতরাং আমাদের উচিত হবে এ সকল
বিষয় মাথায় রেখেই বিয়ে করা এবং বিয়ে পরবর্তি জীবনকে অতিবাহিত করা। সর্বশেষ
কথা হলো রাসূল সঃ বলেছেন, "একে অন্যকে ভালোবাসে এমন দু'জনের জন্য বিয়ের
মতো উত্তম কিছু আমি দেখি না।" আল্লাহ সবাইকে একটা সুন্দর ও সুখী জীবন দান
করুন। আমীন।।
বিয়েঃ স্বপ্ন থেকে অষ্টপ্রহর -- আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ
অসাধারণ আলোচনা।
ReplyDelete