Wednesday, October 18, 2023

সরদার ফজলুল করিমের 'আমি মানুষ' বইয়ের একটি পর্যালোচনা -- মোঃ হেলাল উদ্দিন

বই পড়া আমার কাছে কিছুটা নেশার মতো। সময় পেলেই পড়ার চেষ্টা করি। পড়ি, ভুলে যাই, তবু পড়ি। আর এই পড়া বইগুলোর নাম জানাতেই কিছুদিন ধরে একটু লেখার চেষ্টা করি। এই লেখার চেষ্টাকে ঠিক রিভিউ বলা যাবে না। রিভিউ বলতে যা বুঝায় তা করার ক্ষমতা এই অধমের নাই। শুধু আমার পছন্দের কিছু বই যা অন্যেরও ভালো লাগতে পারে তাই লিখে প্রকাশ করি।

আজ যে বইটির কথা বলছি তা হলো সরদার ফজলুল করিমের লেখা 'আমি মানুষ'। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র হিসাবে স্যারের নাম জানাটা স্বাভাবিক। প্লেটোর 'রিপাবলিক', এরিস্টটলের 'পলিটিক্স', রুশোর 'সোশ্যাল কন্ট্রাক্ট' এর মতো বইগুলোর অনুবাদ সরদার ফজলুল করিম স্যার করেছেন। এর বাইরে স্যারের লেখার সাথে আমার আর পরিচয় ছিলো না।

গত ১৫ জুন ২০২২ ছিলো স্যারের ৮ম মৃত্যুবার্ষিকী। এ উপলক্ষে সরদার ফজলুল করিম স্সৃতি সংসদ এক স্মরণসভার আয়োজন করে জাতীয় প্রেস ক্লাব অডিটোরিয়ামে। সেই স্মরণসভায় অংশগ্রহণ করেছিলাম। আর এখান থেকেই সরদার ফজলুল করিম স্যার সম্পর্কেবিস্তারিত জানার সুযোগ হয়েছে। স্যারের জীবন দর্শন, শিক্ষা, সমাজ, রাষ্ট্র নিয়ে ভাবনা এমন অনেক কথা তুলে ধরেছেন যারা স্যারের সাথে ছিলেন, স্যারের কাছ থেকে শিক্ষা নিয়েছেন এবং স্যারের কাজ নিয়ে যারা গবেষণা করেন। সেখানে স্যারের প্রকাশিত বইগুলোর প্রদর্শন এবং বিক্রিরও ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এখান থেকেও তার সম্পর্কে জানতে পারি এবং 'আমি মানুষ' বইটি উপহার হিসাবে পাই। যদিও স্যারের অনুদিত কয়েকটি বই আগেই সংগ্রহ করা আছে।

'আমি মানুষ' বইটি পড়তে গিয়ে বুঝলাম সরদার ফজলুল করিম স্যারের লেখা এতো তাড়াতাড়ি পড়ে বুঝা সম্বভ নয়। তার লেখার ধরন একেবারে আলাদা এবং সহজ ও সংক্ষেপ কথার মাঝে লুকিয়ে আছে জীবন দর্শনের বিশালতা, যা বুঝতে হলে সময়ের প্রয়োজন। বইটিতে মোট বিশটি লেখা আছে। লেখাগুলো মূলত তার ডাইরিতে লিখে রাখা দিনপিলির অংশ। ২০০১-০৮ সালের কয়েক দিনের দিনলিপি। তবে ২০০৩-০৪ সালের দিনরিপিই বেশি। এগুলো স্যারের দিন লিপি হলেও এর মাঝেই খুঁজে পাওয়া যাবে জীবন দর্শন, মানবতা, বিশ্বশান্তি, সমাজ ব্যবস্থা, রাষ্ট্র ব্যবস্থার পথ নির্দেশনা।

বইয়ের প্রথম লেখা 'আমি মানুষ' এখানে লিখেছেন, 'আমি লেবু, শশা, কাঁচা আম ইত্যাদি কিনতে গিয়ে দেখলাম একটা মেয়ে তাকিয়ে, আমার ভাব ভাবভঙ্গি দেখে জিজ্ঞেস করলঃ চাচা আপনি হিন্দু? আমি অবাক হলাম না। আমি বললামঃ 'আমি মানুষ'। আমার জবাবে ও মজা পেল। আবার প্রশ্ন করলঃ আপনি চাচা মুসলমান? আমি আবার বললামঃ 'মানুষ'। এবার তার মজা আরো বেড়ে গেল। দোকানীকে সম্বোধন করে বললঃ দেখছেন নি! উনি হিন্দুও না, মুসলমানও না। উনি 'মানুষ'।' কথাগুলো খুবই সহজ কিন্তু এর গভীরতা অনেক বেশি। এই যে 'মানুষ' হওয়াটা এটাকে জীবন দর্শন করা এতো সহজ না, যদি তাই হতো তবে সমাজে, রাষ্ট্রে এতো সমস্যার সৃষ্টি হতো না।

'সহজ সরল সত্য কথা'য় লিখেছেন, 'আমি আমার ছাত্রছাত্রীদের বলি  ১৩ কোটি মানুষ। আমি বলি ১৩ কোটি বই। ছাত্রছাত্রীরা কম্পিউটার বুঝে কিন্তু বই কাকে বলে বুঝে না। বই বস্তু বটে। কিন্তু বস্তু মাত্রই তো বই নয়। আমার শেষ করা কম্পিউটার আর আইটির বাহাদুরদের কাছেঃ রবোট বানান, ক্ষতি নেই। কিন্তু আগে মানুষ হন, মানুষ বানান।' এই যে মানুষ হবার কথা বলেছেন, বর্তমান বিশ্ব ব্যবস্থায় সেই মানুষের বড়ই প্রয়োজন।

'মানুষের উপায় কী বল' তে স্যার তার অতীতের কিছু কথা বলেছেন। যেখানে ১৯৮৮, ১৯৯৮ এবং ২০০৪ সালের বন্যার স্মৃতিচারণ করেছেন। ১৯৪২-৪৪ সালে বর্তমান ঈদগাহ মাঠ, হাউজ বিল্ডিং কর্পোরেশন এর জায়গার কেমন অবস্থা ছিলো তা বলেছেন। এখানে মূল যে বিষয়টা বলেছেন তাহলো, এক সময় মনে করা হতো মানুষই হবে প্রকৃতির প্রভু; প্রকৃতি মানুষের উপর নয়। অথচ আসল সত্য হলো সবারই সহাবস্থানের ব্যাপার। কিন্তু মানুষের নির্বুদ্ধিতার কারনেই এই বন্যা, খরা হচ্ছে প্রকৃতির প্রতিশোধ। উল্লেখ্য, ১৯৮৮ সালের বন্যা নিয়ে সরদার ফজলুল করিম স্যার 'নূহের কিশতি' বইটি লিখেছেন।

বইয়ের প্রতিটা লেখাতেই পাওয়া যাবে কিছু দার্শনিক উক্তি, যা জীবনের নানান দিকের ইঙ্গিত করে। যেমন- 'সত্য কথার একট কথামালা'য় লিখেছে, 'সত্যের মৃত্যু নেই।' 'জীবন মরে না, মৃত্যুই মরে।' 'আত্মশাসনই সব চাইতে কঠিন শাসন।' 'দেশের রক্ষী বাহিনী হবে নাগরিকদের রক্ষক, ভক্ষক নয়।' 'আদিকালকে যেমন আমি জানিনে, অনন্তকালকেও তেমনি জানিনে তবু বস্তুর ক্রমপরিবর্তনই যে কাল, তাকে অস্বীকার করার কোন উপায় নেই।' 

 '৭১-এর আলামত? এ বলেছেন, 'চায়ের কেটলীর পানি, প্রথমে অল্প গরম, তার পরে আবার একটু গরম, এবং পরিশেষে গরমের পরিমাণের বৃদ্ধিতে পানির, পানি থেকে গ্যাসে রুপান্তর। এই হচ্ছে সামাজিক রসায়নের কথা।' 'আমরা সবাই ইতিহাসের সন্তান; জানি বা না জানিঃ দর্শক হই বা না হই।' এখানে তিনি ইতিহাসের কথা কেন বলেছে এইটাও ভেবে দেখা দরকার।

বইটির অন্যান্য লেখাগুলো থেকে আমার কাছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা হলোঃ

'মানুষ ক্ষুদ্র প্রাণী। সহজ পথের সন্ধানী।' 

'উদভ্রান্তরা জানে হত্যা করার মতো সহজ কাজ আর নেই।' 

'এ ম্যান হু ক্যানট বি এ গুড ফাদার টু হিজ ফামিলি, ক্যানট বি এ গুড কমিউস্ট।' 

'মানুষের সমাজ হচ্ছে মানুষের বাগানঃ মানুষ মাত্রই একটি ফুলঃ সে ক্ষুদ্র হোক, কিংবা দীর্ঘ হোক, সাদা কিংবা কালো হোক।' 

'মানুষ মানুষের ভাই, মানুষ মানুষের হত্যাকারী নয়।'

'আমাদের মৃত্যু আজ, কাল বা পরশু ঘটুক না কেন, আমাদের স্বপ্নের মৃত্যু কোনদিন ঘটবে না। মৃত্যুই মরে এবং জীবনই বাঁচে।' 

'জীবনের উপর বিশ্বাস হারানোর মতো পাপ আর নেই। জীবনের ওপর বিশ্বাস হারানোর অধিকার আমাদের নেই।' 

'মানুষের জন্য মানুষের ভালোবাসা অবশ্যই ওষুধ।'

'আমার মতো বিত্তহীন মধ্যবিত্তের কষ্ট করা নিয়ে আফসোস করার বিলাসিতার উপায় নেই।' 

'গরিব-ধনী প্রত্যেকটি পরিবারই সাম্যবাদী নীতির ভিত্তিতে পরিচালিত পরিবার।'

বইঃ আমি মানুষ
লেখকঃ সরদার ফজলুল করিম
প্রকাশকঃ কথা প্রকাশ
মূল্যঃ ১২০ টাকা।






সরদার ফজলুল করিমের 'আমি মানুষ' বইয়ের একটি পর্যালোচনা 

Friday, October 13, 2023

গল্প লেখার কৌশল -- মোঃ হেলাল উদ্দিন

অনেক অনেক জানা প্রয়োজন, তবে অল্প জেনে সঠিক প্রয়োগকৌশল জানা আরো বেশি প্রয়োজন।

গল্প লিখতে হলে ভাবনার জগত যেমন প্রসারিত হতে হয় তেমনি কিছু কৌশল অবলম্বন গল্প লেখাকে সহজ করে দেই। তাই জেনে নেই সেই কৌশলগুলো যা প্রয়োগ করে সহজে গল্প লিখতে পারবো।

১. গল্পের কাহিনি: গল্পের প্রাণ দান করতে ব্যতিক্রমি কাহিনি দরকার। গল্পে নতুনত্ব সবার কাছে গ্রহণযোগ্য।

২. গল্পের চরিত্র: কাহিনিকে গতিশীল করতে চরিত্র প্রয়োজন। চরিত্রের বৈচিত্র্য গল্পের ভিন্নতা তৈরি করে।

৩. গল্পের সংলাপ: কাহিনির না-বলা ভাষা প্রকাশ করে সংলাপ। সংলাপ যতো সুন্দর হবে, গল্প ততো গ্রহণযোগ্য হবে।

৪. গল্পের পরিবেশ: কাহিনির পরিবেশ গল্পের সত্যতা বজায় রাখে এবং বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ায়। তাই কাহিনির নিজস্ব পরিবেশ দরকার আছে।

৫. গল্পের ভাষা ও উপস্থাপনশৈলী: গল্পকে শক্তিশালী করতে, অন্য গল্প থেকে পৃথকীকরণে এবং স্বাতন্ত্র দানে গল্পের ভাষা ও উপস্থাপনশৈলী শক্তিশালী হওয়া দরকার।

এই কৌশল অবলম্বন করে সাথে বেশি বেশি গল্প পড়ার মাধ্যমে আপনার গল্প লেখা শুরু করতে পারেন।


গল্প লেখার কৌশল