Sunday, June 23, 2024

সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী: প্রেক্ষাপট, বিষয়বস্ত এবং পর্যালোচনা -- মোঃ হেলাল উদ্দিন


 Kushtia College Journal Vol.1, Issue 1&2 
ISSN 3006 -1741 
Pp.39-45 

'সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী: প্রেক্ষাপট, বিষয়বস্ত এবং পর্যালোচনা' প্রবন্ধটি পড়তে

Click Here 

 

Abstract

A state is governed on the basis of certain principles, the sum of these principles is called the constitution. Amendment of the constitution may be necessary for the welfare of the people of the state. Seventeen amendments have been made in the constitution of Bangladesh so far. One of the important ones is the Fifteenth Amendment. Because through this amendment, the original spirit of the constitution is returned to the basic principles of 1972’s constitution. In addition, the caretaker government system was abolished, some articles of the constitution were made ineligible for amendment, blocking the way of illegal power grab, Bangabandhu was constitutionally recognized as the father of the nation, the speech of 7th March was included as a shedule in the constitution and several articles amendment were brought. Although the constitution has been given a beautiful shape through the fifteenth amendment, there are controversy over some other issues including the amendment process, the abolition of the caretaker government system and some articles also barred the possibility of amendment by any subsequent government or parliament. All these reasons make the Fifteenth Amendment of special importance.

Friday, June 21, 2024

সাহসী মেয়ের গল্প 'আনা ফ্রাঙ্কের ডায়েরি' -- মোঃ হেলাল উদ্দিন

এই মেয়েটি বাড়ীর পিছনদিকের চিলেকোঠায় লুকিয়ে ছিল । দীর্ঘ মাত্র ৭৬১ দিন, অর্থাৎ দুই বছরের একটু বেশী । সে যেখানে লুকিয়ে ছিল সেই জায়গাটার আয়তন ৪৫০ বর্গফুট আর ঐটুকু জায়গায় মেয়েটিসহ মোট ছিল আটজন ।

দুই বছর ঐ জায়গাতেই থাকা, ঘুম থেকে ওঠা, টয়লেট সারা, সামান্য কিছু খাওয়া ; ঐখানেই সন্ধ্যে এবং রাত দেখা । বাইরে সারা শহরে নাৎসি বাহিনীর সদস্যরা ঘুরে বেড়াচ্ছে । উপরে আকাশ থেকে বোমা বর্ষণ হচ্ছে । ধরা পড়লেই শেষ ।

আমাদের মত হাতে মুঠোফোন, মুঠোফোনে সারা বিশ্ব দেখা, ইন্টারনেট, ল্যাপটপ, স্কাইপি, ওয়াটস‌এ্যাপ, ম্যাসেঞ্জারে ভিডিও চ্যাট- ১৯৪২ সালে স্বপ্নেও কেউ ভাবেননি এসবের কথা ।

তাহলে মেয়েটির সময় কাটত কিভাবে ? মেয়েটি দিনলিপি লিখত প্রতিদিন । মাত্র ১৫ বছরের মেয়েটি প্রতিদিন লিখে গেছে দিনলিপি । তাতে লিখেছে তার কথা, তার বাবা-মার কথা । লিখেছে তার শরীর কিভাবে বদলে যাচ্ছে সেসব বর্ণনাও । সে অকপটে লিখে গেছে সব কথা । সে লিখেছে,
“Because paper has more patience than people.”

কি সাংঘাতিক কথা ! ১৫ বছরের মেয়ের ? মানুষের ধৈর্য নেই, কাগজের আছে । মানুষ আরেক মানুষের আদর্শ, ধর্মবিশ্বাস এসবের সম্মান দেয় না, কিন্তু কাগজ দেয় । মেয়েটি তাই কাগজকেই বলে সব কথা ! কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি । কোনও এক বিশ্বাসঘাতক তাদের ধরিয়ে দেয় । পরিবারের আটজনের অনেককেই মেরে ফেলা হয় । এই মেয়েটি আর তার বড় বোন 'টাইফাস' জ্বরে মারা যায় নির্যাতন শিবিরেই । শুধুমাত্র মেয়েটির বাবা বেঁচে ফিরতে পেরেছিলেন ।
মেয়েটি এত কিছুর পরও আনন্দ, সৌন্দর্য, মানুষের মহত্ত্ব এসবের উপর বিশ্বাস হারায়নি । মেয়েটি যেসব কথা দিনলিপিতে লিখেছিল তার থেকে কয়েকটি প্রিয় উদ্ধৃতি,

“How wonderful it is that nobody need wait a single moment before starting to improve the world.”
'ভাবলে ব্যাপারটা কত চমৎকার যে, আসলে পৃথিবী বদলে দেবার জন্য কারও এক মুহূর্ত অপেক্ষা করার দরকার নেই !'

“Think of all the beauty still left around you and be happy.”
'চারিদিকের যে সব সৌন্দর্য এখনও বাকি আছে তা দেখ আর আনন্দিত হও ।'

“I can shake off everything as I write; my sorrows disappear, my courage is reborn.”
'আমি লিখতে শুরু করলেই সব ঝেড়ে ফেলতে পারি, আমার দুঃখ দূর হয়ে যায়, আমার সাহস ফিরে আসে ।'

“I've found that there is always some beauty left-in nature, sunshine, freedom, in yourself; these can all help you.”
'আমি দেখেছি, সৌন্দর্য কোথাও না কোথাও শেষমেশ থাকেই । প্রকৃতিতে, সূর্যালোকে, স্বাধীনতায়, নিজের ভিতরে আর এই সৌন্দর্যগুলো তোমাকে সাহায্য করবেই ।'

“I don't think of all the misery, but of the beauty that still remains.”
'আমি দুঃখ-কষ্টের কথা ভাবি না, ভাবি যা সৌন্দর্য এখনও বাকী রয়ে গেছে তার কথা ।'

“Whoever is happy will make others happy.”
'যে নিজে সুখী সে অন্যকে সুখী করতে পারে ।'

“In the long run, the sharpest weapon of all is a kind and gentle spirit.”
'শেষমেশ সবচেয়ে উপযুক্ত অস্ত্র হল দরদী এবং মরমী একটি মন ।'

“Where there's hope, there's life. It fills us with fresh courage and makes us strong again.”
'যেখানে আশা আছে, সেখানেই জীবন আছে । এই আশা আমাদের নতুন সাহস জোগায় এবং শক্ত হতে সবকিছুতে সাহায্য করে ।'

“In spite of everything, I still believe that people are really good at heart.”
'সবকিছুর পরও আমি বিশ্বাস করি, মানুষ তার ভিতরে সত্যিই ভাল ।'

মেয়েটির লেখায় বারবার 'যতটুকু সৌন্দর্য বাকী আছে' এ কথা কেন বলেছে তা বোঝা যাবে দ্বিতীয় ছবিতে । চিলেকোঠার জানালাটা গাঢ় রঙের পর্দা দিয়ে ঢাকাই থাকত, কিন্তু বাইরে বোমাবিধ্বস্ত শহরের চেহারা তখন এমনই ।

আনা ফ্রাঙ্ক নামের এই মেয়েটি মারা যায় ১৫ বছর বয়সে । মুক্তির ২ মাস, অর্থাৎ ৬০ দিন আগে সে মারা যায় । তার জন্ম ১৯২৯ সালের ১২ জুন এবং মারা যায় ১৯৪৫ সালে ।

আনা তার দিনলিপি শেষ বারের মত লেখে ১৯৪৪ সালের ১ অগাস্ট, মঙ্গলবার । কারণ, ঐ দিন তার সাথে থাকা বাকি সাতজন ধরা পরে হিটলার বাহিনীর কাছে ।

May be an image of 1 person, smiling and text

বই- আনা ফ্রাঙ্কের ডায়েরি
লেখক- আনা ফ্রাঙ্কা

(লেখা ও ছবি- সংগৃহীত)

Md. Helal Uddin
28.07.2024

Friday, June 14, 2024

নৈতিকতার ধারণা -- মোঃ হেলাল উদ্দিন

 নৈতিকতার ইংরেজি প্রতিশব্দ Morality। ইংরেজি Morality শব্দটি এসেছে ল্যাটিন Moralitas থেকে, যার অর্থ ‘সঠিক আচরণ বা চরিত্র’। গ্রিক দার্শনিক সক্রেটিস, প্লেটো এবং এরিস্টটল সর্বপ্রথম নৈতিকতার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। সক্রেটিস বলেছেন, “সৎ গুণই জ্ঞান” (Virtue is knowledge)। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিরা অন্যায় করতে পারেন না এবং ন্যায় বোধের উৎস, হচ্ছে ‘জ্ঞান’ (knowledge) এবং অন্যায়বোধের উৎস হচ্ছে ‘অজ্ঞতা’ (ignorance)। পরবর্তীতে রোমান দার্শনিকরা প্রথাগত আচরণের অর্থে mas কথাটি ব্যবহার করেন। ল্যাটিন এই mas শব্দ থেকেই Morals Morality শব্দের উদ্ভব ঘটেছে।

নীতিবিদ ম্যুর বলেছেন, ‘শুভর প্রতি অনুরাগ ও অশুভর প্রতি বিরাগই হচ্ছে নৈতিকতা।’

জোনাথান হেইট (Jonathan Haidt) মনে করেন, ‘ধর্ম, ঐতিহ্য এবং মানব আচরণ- এই তিনটি থেকেই নৈতিকতার উদ্ভব হয়েছে।’

নৈতিকতার সংজ্ঞায় Collins English Dictionary - তে বলা  হয়েছে, Morality is concerned with on negating to, human behavior, esp. the distinction between good and bad and right and wrong behavior.

নৈতিকতা সম্পর্কে অধ্যাপক নিউনার ও কিলিং বলেন, ‘নৈতিকতা হলো বিজ্ঞান ও দর্শনের সেই সকল কাজ যা মানুষের নৈতিক আচরণ, কর্তব্য এবং বিচার বিবেচনা বিশ্লেষণ করে।’

Cambridge International Dictionary of English - তে বলা হয়েছে, নৈতিকতা হলো ‘ভালো-মন্দ আচরণ, স্বচ্ছতা, সততা ইত্যাদির সাথে সম্পর্কযুক্ত একটি গুণ, যা প্রত্যেক ব্যক্তিই আইন কিংবা অন্য কোনো বিষয়ের থেকে বেশি গুরুত্ব প্রদান করে থাকে।’

মানুষের ন্যায়-অন্যায়, ভালো-মন্দ, উচিত-অনুচিত বোধ বা অনুভূতি থেকে নৈতিকতা বা নীতিবোধের বিকাশ ঘটে। শুধুমাত্র আইন বা রাষ্ট্রীয় বিধিবিধানই নাগরিক জীবন নিয়ন্ত্রণের জন্য যথেষ্ট নয়। এ জন্যই আর. এম. ম্যাকাইভার বলেছেন, ‘Law, does not and can not cover all grounds of morality’।

নৈতিকতার পিছনে সার্বভৌম রাষ্ট্র কর্তৃত্বের সমর্থন বা কর্তৃত্ব থাকে না। নৈতিকতা মূলত ব্যক্তিগত এবং সামাজিক ব্যাপার। নৈতিকতা বা ন্যায়নীতিবোধের ধারণা বা এর প্রতি যে দেশের জনগণের শ্রদ্ধাবোধ বেশি এবং যে রাষ্ট্রের মানুষের নৈতিক মান সুউচ্চ, সেদেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সহজ।

 

নৈতিকতার ধারণা -- মোঃ হেলাল উদ্দিন

সুশাসনের ধারণা - মোঃ হেলাল উদ্দিন

সুশাসনের ধারণা

মানব সভ্যতার বিবর্তনের ফসল হলো পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র। এই সংগঠনের সদস্যদের পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ধারণ এবং আচরণ নিয়ন্ত্রণের জন্য এক সময় গড়ে উঠে শাসন ব্যবস্থা। শুরুতে সমাজ ও রাষ্ট্রের শাসন ব্যবস্থার মূল উদ্দেশ্য ছিলো জননিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কিন্তু বর্তমানে জনকল্যাণই রাষ্ট্রের মূখ্য উদ্দেশ্য বলে বিবেচিত হয়। তাই শাসনের পরিবর্তে সুশাসনের প্রয়োজন হয়।


‘সুশাসন’ বা ‘
Good Governance’ সম্পর্কে জানতে প্রথমেই জানা প্রয়োজন ‘শাসন’ বা ‘Governance’ বলতে কী বুঝায়। ‘গভর্নেন্সকে’ রাজনৈতিক ব্যবস্থায় ‘শাসনের ব্যবস্থা’ হিসেবে দেখা হয়ে থাকে। ল্যান্ডেল মিলস এবং সেরাজেল্ডিন (Landell Mills and Serageldin)-এর মতে, “জনগণ কীভাবে শাসিত হয়, কীভাবে রাষ্ট্রীয় বিষয়াদি পরিচালিত হয়, কীভাবে দেশের রাজনীতি আবর্তিত হয় এবং একই সাথে এ সকল প্রক্রিয়া কীভাবে লোকপ্রশাসন ও আইনের সাথে সম্পর্কিত সে বিষয়কেই ‘গভর্নেন্স’ বা শাসন বলে।” 


বিশ্ব ব্যাংক ১৯৯৪ সালে শাসনের সংজ্ঞায় বলে, ‘সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি দেশের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক সম্পদের ব্যবস্থাপনার জন্য ক্ষমতা প্রয়োগের পদ্ধতিই হলো শাসন বা গভর্নেন্স।’


হালফ্যানি (
Halfani) ও অন্যান্য গবেষকগণ সহমত পোষণ করে বলেন, ‘গভর্নেন্স বা শাসন হলো সরকারের এমন এক ব্যবস্থা যার লক্ষ্য কেন্দ্রীভূত থাকে রাষ্ট্র ও সিভিল সমাজের মধ্যে বৈধ সম্পর্ক ও উন্মুক্ত যোগাযোগ নিশ্চিত করা এবং সেই সাথে কার্যকরী ও দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান নির্মাণ, গণতান্ত্রিক রীতিনীতি, নির্বাচনি প্রক্রিয়া স্থাপন এবং প্রতিনিধিত্বকারী দায়িত্বশীল সরকারি কাঠামোকে ক্রিয়াশীলকরণ।’


‘গভর্নেন্স বা শাসনের সংজ্ঞায় ডি. কউফম্যান ও অন্যরা (
D. Kaufmann & others) বলেন, ‘যে প্রক্রিয়ায় শাসকবর্গ নির্বাচিত হন, জবাবদিহি করেন, নিরীক্ষিত ও পরিবর্তিত হন; সম্পদের ব্যবস্থাপনায় সরকারি দক্ষতা এবং নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন নির্ধারিত হয় এবং রাষ্ট্রীয় বিষয়াদিতে জনগণের অংশগ্রহণের মাত্রা বিবেচিত হয় তাকেই গভর্নেন্স বা শাসন বলে।’


অধ্যাপক মাহাবুবুর রহমান-এর মতে,     শাসন হলো এমন একটি ধারণা যেখানে কর্তৃপক্ষ উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করার জন্য সুসংগঠিত ব্যবস্থাপনা প্রয়োগ করে।’


শাসনের সাথে ‘সু’ প্রত্যয় যোগে ‘সুশাসন’ শব্দটির প্রকাশ করা হয়েছে। যার ফলে এর অর্থ দাঁড়ায় নির্ভুল, দক্ষ ও কার্যকরী শাসন। ‘সুশাসন’ বিশ্বব্যাংকের উদ্ভাবিত একটি ধারণা। ১৯৮৯ সালে বিশ্বব্যাংকের এক সমীক্ষায় সর্বপ্রথম ‘সুশাসন’ শব্দটি ব্যবহার করা হয় এবং বলা হয় উন্নয়নশীল দেশসমূহে সুশাসনের অভাবেই অনুন্নেয়ন ঘটেছে। তাই বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহের ঋণ সাহায্য ও প্রকল্প সাহায্য কার্যক্রম পরিচালনা করার ক্ষেত্রে সুশাসন নিশ্চিতকরণের জন্য যেসব শর্ত রয়েছে তা পূরণের শর্ত জুড়ে দেয়া হয়। বিশ^ব্যাংক ২০০০ সালে সুশাসনের প্রধান চারটি স্তম্ভ হিসাবে ১. দায়িত্বশীলতা, ২. স্বচ্ছতা, ৩. আইনি কাঠামো ও ৪. অংশগ্রহণ কে প্রকাশ করে।


বিশ্বব্যাংক (
World bank)-এর মতে, ‘সুশাসন হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয় যেখানে উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক সম্পদ ব্যবস্থাপনার জন্য ক্ষমতা প্রয়োগ করা হয়’ (Good Governance is a manner in which power is exercised in the management of a country's economic and social resources for development.)।


UNDP- এর মতে, ‘একটি দেশের সার্বিক স্তরের কার্যাবলি পরিচালনার জন্য অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক কর্তৃত্বের চর্চার বা প্রয়োগের পদ্ধতিই হলো সুশাসন’ (Good Governance is the exercise of economic, Political and administrative authority to manage a country's affairs at all levels.)।


জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান (
Kofi Annan) বলেছেন, ‘সুশাসন মানবাধিকার এবং আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধা নিশ্চিত করে, গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করে, জনপ্রশাসনের স্বচ্ছতা এবং সক্ষমতাকে প্রবর্তন করে।’
 

ভি. কে. চোপড়া (V. K. Chopra) বলেন, ‘সুশাসন হলো শাসনের একটি পদ্ধতি যা সমাজের মৌলিক মূল্যবোধগুলো দ্ব্যর্থহীনভাবে চিহ্নিত করতে সমর্থ, সেখানে মূল্যবোধগুলো হচ্ছে মানবাধিকারসহ অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক বিষয়ক এবং একটি দায়বদ্ধ ও সৎ প্রশাসনের মাধ্যমে এই মূল্যবোধগুলো অন্বেষণ করা’ (Good governance is a system of governance that is able to Unambiguously identify the basic values of the society where values are economic, political and socio-culture issues including human rights and pursue these values through and accountable and honest administration.)। 


জি. বিলনে (
G. Bilney)- সুশাসনের সংজ্ঞায় বলেন, ‘Good Governance is the effective management of a country's Social and economic resources in a manner that is open, transparent, accountable and equitable.


অধ্যাপক ড. মহব্বত খান-এর মতে, ‘সুশাসন হলো একটি দেশের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক সম্পদের কার্যকরী ব্যবস্থা। তবে ব্যবস্থাটি হবে উন্মুক্ত, স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক এবং ন্যায্য সমতাপূর্ণ।


ম্যাককরনী (
MacCorney) ‘সুশাসন’ সম্পর্কে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞা প্রদান কওে বলেন, ‘সুশাসন বলতে রাষ্ট্রের সাথে সুশীল সমাজের, সরকারের সাথে শাসিত জনগণের, শাসকের সাথে শাসিতের সম্পর্ককে বোঝায়’ (Good governance is the relationship between civil society and the state, between government an governed, the ruler and ruled)।


পশ্চিমা বিশ্বের মতামত
‘সুশাসন’ বিষয়টি একটি বহুমাত্রিক এবং একটি আন্তর্জাতিক ধারণা। পশ্চিমা রাষ্ট্রসমূহ সুশাসনের চারটি দিকের কথা উল্লখ করেছে। যথা-
    সুশাসন অধিকতর রাজনৈতিক প্রক্রিয়া এবং জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে শাসন ব্যবস্থা পরিচালনাকে বুঝায়
    সুশাসনের প্রক্রিয়া অবশ্যই আইনের উপর প্রতিষ্ঠিত হবে।
    রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ যাতে উত্তম শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়।
    প্রশাসনিক দক্ষতা এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা হবে শাসন কাঠামোর অন্যতম দিক।
 

দাতা সংস্থার মতামত
সুশাসন ধারণাটি বিশ্বব্যাংক কর্তৃক উদ্ভাবিত হলেও এর ব্যাখ্যা প্রদান করেছে বিভিন্ন দাতা ও সহযোগী সংস্থা। দাতা সংস্থাগুলো সুশাসনের কয়েকটি নির্দেশনা প্রদান করেছে। যথা-
    রাজনৈতিক স্বাধীনতা, বাক স্বাধীনতা এবং একটি অবাধ নির্বাচিত আইনসভা।
    ব্যক্তি সত্তার অধিকার সংরক্ষণে সংবিধান এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা।
    স্থিতিশীল মুদ্রা ব্যবস্থা এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ।
    শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবার মাধ্যমে সমাজের সার্বিক উন্নয়ন।
    একটি স্বাধীন নির্বাচিত আইনসভার নিকট নির্বাহী কর্তৃপক্ষের জবাবদিহি প্রভৃতি।
 

মোটকথা, প্রশাসনের যদি জবাবদিহিতা (Accountability), বৈধতা (Legitimacy), স্বচ্ছতা (Transparency) থাকে, এতে যদি অংশগ্রহণের সুযোগ উন্মুক্ত থাকে, বাক স্বাধীনতাসহ সকল রাজনৈতিক স্বাধীনতা সুরক্ষার ব্যবস্থা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, আইনের অনুশাসন থাকে তাহলে সে শাসনকে সুশাসন বলে।

 

সুশাসনের ধারণা - মোঃ হেলাল উদ্দিন