Monday, March 25, 2024

অপারেশন সার্চলাইট পরিকল্পনা পদ্ধতি এবং জাতীয় গণহত্যা দিবসের স্বীকৃতি -- মোঃ হেলাল উদিন

 

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে ঢাকাসহ সারা বাংলায় গণহত্যা শুরু করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। গণহত্যা চালিয়ে বাঙালি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী যে সশস্ত্র অভিযান পরিচালনা করে, তারই সাংকেতিক নাম বা কোডনেম দিয়েছিল 'অপারেশন সার্চলাইট'। যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল তারও এক সপ্তাহ আগে, ১৮ই মার্চ।

গণপরিষদের অধিবেশন স্থগিত করায় ঢাকা তখন বিক্ষোভের শহর। ঢাকায় ইতিমধ্যে ডাক দেওয়া হয়েছে অসহযোগ আন্দোলন, বাংলার আকাশে ওড়ানো হয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা। এরই মধ্যে ৭ই মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে শেখ মুজিবুর রহমান ভাষণ দিয়ে বলেছেন, “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম

মধ্য মার্চে ঢাকায় তখন চলছে মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠক। আলোচনায় অংশ নিতে জুলফিকার আলী ভুট্টোও ছিলেন ঢাকা শহরে। সব মিলে ঢাকা শহরে খুবই উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজমান ছিলো।

১৯৭১ সালের পঁচিশে মার্চ দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার। বাইশে মার্চ বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে প্রাক্তন বাঙালি সৈনিকদের সঙ্গে বৈঠকে কর্নেল এমএজি ওসমানী সাহেব বঙ্গবন্ধুকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘ডু ইউ থিংক দ্যাট টুমরো উইল বি এ ক্রুসিয়াল ডে?’ জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘নো, আই থিংক, ইট উইল বি টুয়েন্টি ফিফথ্’। তখন ওসমানী পুনরায় তাঁর কাছে প্রশ্ন রাখেন, ‘কাল তো তেইশে মার্চ। পাকিস্তান দিবস। সে উপলক্ষে ওরা কী কিছু করতে চাইবে না?’ বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘ওরা যেকোন মুহূর্তে যেকোন কিছু করতে পারে। তার জন্য কোন দিবসের প্রয়োজন হয় না’। বঙ্গবন্ধু হিসাব করেই তিনি বলেছিলেন পঁচিশে মার্চেই পাকিস্তানিরা ক্র্যাকডাউন করবে।

বঙ্গবন্ধুর অনুমান এবং পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর ১৮ মার্চে অপারেশন সার্চলাইটের পরিকল্পনা করা ২৫ মার্চের গণহত্যার সেই ভয়াবহ সেনা অভিযানের পরিকল্পনা কীভাবে হয় তার ধারণা পাওয়া যায় সেসময় ঢাকায় দায়িত্বরত পাকিস্তানের অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তাদের স্মৃতিকথা থেকে।

‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে সামরিক অভিযানের অন্যতম পরিকল্পনাকারী মেজর জেনারেল খাদিম হুসাইন রাজা ‘আ স্ট্রেঞ্জার ইন মাই ঔন কান্ট্রি ইস্ট পাকিস্তান, ১৯৬৯-১৯৭১’ শিরোনামের একটি স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ তিনি লিখেছেন, ‘১৭ মার্চ, সকাল প্রায় ১০টা বাজে। টিক্কা খান আমাকে ও মেজর জেনারেল ফরমানকে কমান্ড হাউসে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করতে খবর পাঠান। খবর পেয়ে আমরা দুজন টিক্কা খানের সঙ্গে দেখা করি। গিয়ে দেখি, সেখানে জেনারেল আবদুল হামিদ খানও রয়েছেন। টিক্কা খান আমাদের বলেন, প্রেসিডেন্টের সঙ্গে শেখ মুজিবের সমঝোতা আলোচনা ইতিবাচক দিকে এগোচ্ছে না। প্রেসিডেন্ট চান আমরা যেন সামরিক অভিযানের প্রস্তুতি গ্রহণ করি এবং সে অনুযায়ী একটা পরিকল্পনা তৈরি করি। এ ছাড়া আর কোনো মৌখিক বা লিখিত নির্দেশনা আমরা পাইনি। আমাদের বলা হয়, পরদিন ১৮ মার্চ বিকেলে আমরা দুজন যেন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে ওই পরিকল্পনা চূড়ান্ত করি’।

পরদিন সকালেই খাদিম হোসেন রাজা তার কার্যালয়ে রাও ফরমান আলীকে নিয়ে বসেন। তারাই গণহত্যার এ অভিযানের নাম দেন অপারেশন সার্চলাইট। অপারেশন সার্চলাইট পরিকল্পনা সম্পর্কে খাদিম হুসাইন রাজা তাঁর বইয়ে লিখেছেন, পরিকল্পনার মূল দিকগুলো ছিল এরকম---

* যে কোন ধরণের বিদ্রোহ বা বিরোধিতাকে কঠোরভাবে দমন করা হবে

* সফল হওয়ার জন্য আকস্মিক চমক এবং চাতুরীর গুরুত্ব আছে। সেনাবাহিনী প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানকেও চাতুরীর আশ্রয় নিয়ে তাদের সাহায্য করার পরামর্শ দিয়েছিল

* বাঙ্গালি সেনা সদস্য ও পুলিশকে নিরস্ত্র করা হবে। বিশেষ করে পিলখানায় ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলসের অস্ত্রাগার, রাজারবাগের রিজার্ভ পুলিশ এবং চট্টগ্রামে কুড়ি হাজার রাইফেলের অস্ত্রভাণ্ডারের নিয়ন্ত্রণ আগেভাগে নিয়ে নেয়া,

* অপারেশন শুরুর সাথে সাথে সব রকমের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করতে হবে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে নতুন করে যাচাই-বাছাই করে যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করা হবে

* অস্ত্রশস্ত্র এবং অপরাধীদের খোঁজে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো ঘিরে ফেলতে হবে, এবং তল্লাশি চালাতে হবে

* শেখ মুজিবকে জীবিত অবস্থায় ধরতে হবে। এর বাইরে ১৫ জন আওয়ামী লীগ এবং কম্যুনিস্ট পার্টির নেতার বাড়িতে তল্লাশি চালাতে হবে, তাদের কাউকে পাওয়া গেলে গ্রেপ্তার করতে হবে।

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা দেশের বিভিন্ন ব্যারাকে ঘুরে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ব্যবস্থা তদারকি করলেও, অপারেশন সার্চলাইটে অংশ নেয়ার জন্য সামরিক বাহিনীর কারো কাছেই কোন লিখিত অর্ডার পাঠানো হয়নি।

২৫শে মার্চ সকাল ১১টায় লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান সময় জানিয়ে মেজর জেনারেল খাদিম হুসাইনের কাছে ফোন করে সংক্ষেপে বলেন, ‘খাদিম, আজ রাতেই’। আর সময় নির্দিষ্ট করা হয়েছিল রাত ১টা। হিসেব করা হয়েছিল, প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ততক্ষণে নিরাপদে করাচি পৌঁছে যাবেন।

তারপরের ইতিহাস তো সবার জানা। মার্কিন সাংবাদিক রবার্ট পেইন ২৫ মার্চ রাত সম্পর্কে লিখেছেন, ‘সেই রাতে ৭০০০ মানুষকে হত্যা করা হয়, গ্রেফতার করা হল আরও ৩ হাজার লোক। ঢাকায় ঘটনার শুরু মাত্র হয়েছিল। সমস্ত পূর্ব পাকিস্তান জুড়ে সৈন্যরা বাড়িয়ে চললো মৃতের সংখ্যা। জ্বালাতে শুরু করলো ঘর-বাড়ি, দোকান-পাট। লুট আর ধ্বংস যেন তাদের নেশায় পরিণত হল। রাস্তায় রাস্তায় পড়ে থাকা মৃতদেহগুলো কাক-শেয়ালের খাবারে পরিণত হল। সমস্ত বাংলাদেশ হয়ে উঠলো শকুন তাড়িত শ্মশান ভূমি।’

পাইকারি এই গণহত্যার স্বীকৃতি খোদ পাকিস্তান সরকার প্রকাশিত দলিলেও রয়েছে। পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্কট সম্পর্কে যে শ্বেতপত্র পাকিস্তান সরকার মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে প্রকাশ করেছিল, তাতে বলা হয়: ‘১৯৭১ সালের পয়লা মার্চ থেকে ২৫ মার্চ রাত পর্যন্ত ১ লাখেরও বেশি মানুষের জীবননাশ হয়েছিল।’

একাত্তরের ২৫ মার্চের গণহত্যা শুধু একটি রাতের হত্যাকাণ্ডই ছিল না, এটা ছিল মূলত বিশ্ব সভ্যতার জন্য এক কলঙ্কজনক জঘন্যতম গণহত্যার সূচনা মাত্র। কিন্তু এই গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তবে ২০১৭ সাল থেকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ২৫শে মার্চকে জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

 একাত্তরে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর গণহত্যার দিনটি জাতীয় ভাবে স্বীকৃতি দিতে ২০১৭ সালের ১১ মার্চ জাতীয় সংসদে ২৫ মার্চ জাতীয় গণহত্যা দিবস পালনের প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়। অক্সফোর্ড ডিকশনারী অনুযায়ী গণহত্যাকে সংজ্ঞায়িত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এদিন সংসদে বলেন, ‘জাতিসংঘ ১৯৪৮ সালের ৯ ডিসেম্বর ‘জেনোসাইড কনভেনশন’ গ্রহণ করে। ২০১৫ সালের ৯ ডিসেম্বরকে ‘জেনোসাইড ডে’ হিসেবে ঘোষণা দেয়। কাজেই আমাদের কাছে সেই সুযোগ রয়েছে, জাতিসংঘের কনভেনশন অনুযায়ী আমরা ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসাবে গ্রহণ করতে পারি।

সংসদ কার্যপ্রণালী বিধির ১৪৭ বিধিতে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) শিরীন আখতারের আনা প্রস্তাবের ওপর সাধারণ আলোচনা শেষে সংসদে তা সর্বসম্মতভাবে গ্রহণ করা হয়। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এ প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য প্রস্তাব করলে সংসদ তা পাস করে। পরে ২০ মার্চ অনুষ্ঠিত মন্ত্রীসভার বৈঠকে ২৫ মার্চকে ‘গণহত্যা দিবস’ ঘোষণা এবং জাতীয় ও আর্ন্তজাতিকভাবে দিবসটি পালনের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয় । দিবসটিকে ‘ক’ শ্রেণীভুক্ত দিবস অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব মন্ত্রীসভায় অনুমোদন করা হয় ।

অন্তর্জাতিক ভাবে ৯ ডিসেম্বরের পরিবর্তের ২৫ মার্চকে ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ের জন্য কাজ করে যাচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। ইতোমধ্যে এই অপরাধযজ্ঞকে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে জেনোসাইড ওয়াচ এবং লেমকিন ইন্সটিটিউট ফর জেনোসাইড প্রিভেনশন। এছাড়া সংস্থা দুটি জাতিসঙ্ঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যাকে স্বীকৃতি প্রদানের জন্য আহ্বান জানিয়েছে। এই নৃশংস গণহত্যাকে আরও স্বীকৃতি দিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব জেনোসাইড স্কলারস (আইএজিএস)। আশাকরা যায়, অদূর ভবিষ্যতে ৯ ডিসেম্বরের পরিবর্তের ২৫ মার্চ ‘আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি পাবে। 

 


পত্রিকায় প্রকাশিত নিবন্ধের লিঙ্কঃ 

 অপারেশন সার্চলাইট পরিকল্পনা পদ্ধতি এবং জাতীয় গণহত্যা দিবসের স্বীকৃতি 

-- মোঃ হেলাল উদিন

Wednesday, March 20, 2024

বাংলাদেশ সংবিধানের বৈশিষ্ট্যসমূহ -- মোঃ হেলাল উদ্দিন

সংবিধান দেশ ও শাসনভেদে ভিন্ন হয়। একটি দেশের সংবিধানের প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য দেখে সহজে সেই দেশের প্রকৃত অবস্থা জানা যায়। বাংলাদেশ যেহেতু একটি গণপ্রজাতন্ত্রী দেশ, সেই হিসেবে সংবিধানের বৈশিষ্ট্য হবে মূলত জনগণের অনুকূলে। ১৯৭২ সালে রচিত বাংলাদেশের সংবিধানের প্রধান বৈশিষ্ট্য সমূহের মধ্যে রয়েছে-

লিখিত দলিল: বাংলাদেশের সংবিধান একটি লিখিত দলিল। এর ১৫৩টি অনুচ্ছেদ রয়েছে। এটি ১১টি ভাগে বিভক্ত। এর একটি প্রস্তাবনাসহ সাতটি তফসিল রয়েছে।

দুষ্পরিবর্তনীয়: বাংলাদেশের সংবিধান দুষ্পরিবর্তনীয়। কারণ, এর কোনো নিয়ম পরিবর্তন বা সংশোধন করতে জাতীয় সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের সম্মতির প্রয়োজন হয়।

রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি: জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাকে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি নির্ধারণ করা হয়েছে। রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে এসব মূলনীতির দ্বারা অনুপ্রাণিত ও প্রভাবিত হয়ে বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে।

প্রজাতন্ত্র: সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশ একটি প্রজাতন্ত্রিক রাষ্ট্র। এখানে সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ। জনগণের পক্ষে নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ ক্ষমতা পরিচালনা করবেন।

মৌলিক অধিকার: সংবিধান হলো রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন। বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আমরা কী কী অধিকার ভোগ করতে পারব তা সংবিধানে উল্লেখ থাকায় এগুলোর গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে।

মালিকানার নীতি: বাংলাদেশ সংবিধানে তিন ধরনের মালিকানার কথা লিপিবদ্ধ আছে। যা বাংলাদেশ সংবিধানের বিশেষ একটা বৈশিষ্ট্য। সংবিধানের ১৩ নং অনুচ্ছেদে ক. রাষ্ট্রীয় মালিকানা, খ. সমবায় মালিকানা এবং গ. ব্যক্তিগত মালিকানা।

সার্বজনীন ভোটাধিকার: বাংলাদেশের সংবিধানের সার্বজনীন ভোটাধিকার প্রদান করা হয়েছে। অর্থাৎ জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, পেশা নির্বিশেষে ১৮ বছর বয়সের এ দেশের সকল নাগরিক ভোটাধিকার লাভ করেছে।

সংসদীয় সরকার: বাংলাদেশের সংবিধানে সংসদীয়শাসিত সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভার হাতে শাসনকার্য পরিচালনার ভার অর্পণ করা হয়। মন্ত্রি পরিষদ তার কাজের জন্য আইনসভার নিকট দায়ী থাকে।

এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র: বাংলাদেশ এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র। এখানে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার মতো কোনো অঙ্গরাজ্য বা প্রাদেশিক সরকার নেই। জাতীয় পর্যায়ে একটিমাত্র কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা সমগ্র দেশ পরিচালিত হয়।

আইনসভা: বাংলাদেশের আইনসভা এক কক্ষবিশিষ্ট। এটি সার্বেেভৗম আইন প্রণয়নকারী সংস্থা। এর নাম জাতীয় সংসদ। বর্তমানের জাতীয় সংসদ ৩৫০ জন সদস্য নিয়ে গঠিত। সংসদের মেয়াদ ৫ বছর।

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা: বাংলাদেশের সংবিধানে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার বিভাগের বিধান রয়েছে।

সর্বোচ্চ আইন: বাংলাদেশের সংবিধান রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন। কারণ বাংলাদেশের সংবিধানের সাথে দেশের প্রচলিত কোনো আইনের সংঘাত সৃষ্টি হলে সে ক্ষেত্রে সংবিধান প্রাধান্য পাবে। অর্থাৎ যদি কোনো আইন সংবিধানের সাথে সামঞ্জস্যহীন হয়, তাহলে ঐ আইনের যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ ততোখানি বাতিল হয়ে যাবে।


বাংলাদেশ সংবিধানের বৈশিষ্ট্যসমূহ 

-- মোঃ হেলাল উদ্দিন

Sunday, March 17, 2024

সন তারিখে বঙ্গবন্ধু -- মোঃ হেলাল উদ্দিন

  • ১৯২০:    ১৭ মার্চ ১৯২০ বঙ্গবন্ধুর শুভ জন্ম গ্রহণ করেন।
  • ১৯২৭:    বঙ্গবন্ধুর সাত বছর বয়সে গিমাডাঙ্গা প্রাইমারি স্কুলে পড়ালেখায় হাতেখড়ি।
  • ১৯২৯:    বঙ্গবন্ধু গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হন।
  • ১৯৩০:    সম্পত্তি রক্ষার জন্য পারিবারিক সিদ্ধান্তে বঙ্গবন্ধুর সাথে তার চাচতো বোন বেগম ফজিলাতুননেছার বিবাহ সম্পন্ন হয়।
  • ১৯৩৪:    মাত্র চৌদ্দ বছর বয়সে বঙ্গবন্ধু বেরিবেরি রোগে আক্রান্ত হন। চার বছর পড়ালেখা বন্ধ থাকে।
  • ১৯৩৭:    পুনরায় শিক্ষা জীবন শুরু;
    গোপালগঞ্জ মুসলিম সেবা সমিতির সম্পাদক নির্বাচিত।
  • ১৯৩৮: আনুষ্ঠানিকভাবে বঙ্গবন্ধুর সাথে তার চাচতো বোন বেগম ফজিলাতুননেছার বিবাহ সম্পন্ন হয়;
    অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শেরে বাংলা এ. কে ফজলুল হক ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী গোপালগঞ্জ মিশনারী স্কুল পরিদর্শনে আসলে বঙ্গবন্ধু স্কুলের বিভিন্ন দাবী দাওয়া তাদের সামনে তুলে ধরেন;
    স্থানীয় কংগ্রেসিদের সঙ্গে বিরোধের জেরে মিথ্যা অভিযোগে বঙ্গবন্ধুর প্রথম কারাবরণ।
  • ১৯৩৯:    বঙ্গবন্ধু গোপালগঞ্জ মহকুমা ছাত্রলীগ গঠন করেন।
  • ১৯৪০:    এ সময়ে তিনি ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন।
  • ১৯৪২:    বঙ্গবন্ধু এন্ট্রেস (এসএসসি) পাশ করেন।
  • ১৯৪৩:    সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন এবং মুসলিম লীগের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন;
    পঞ্চাশের (১৩৫০ বঙ্গাব্দ) মন্বন্তরে দুর্ভিক্ষ প্রতিরোধে লঙ্গরখানা পরিচালনা করেন।
  • ১৯৪৪:    কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে আই. এ পাশ করেন।
  • ১৯৪৫:    বঙ্গবন্ধু এ সময় ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র সংসদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাধারন সম্পাদক (জিএস) নির্বাচিত হন।
  • ১৯৪৬:    দিল্লীতে মুসলিম লীগের কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক শাখার কনভেনশনে যোগদান। এ সময় বঙ্গবন্ধু আজমীরে খাজা মইনুদ্দীন চিশতি, দিল্লীতে হযরত নিজামউদ্দিন আউলিয়ার মাজার এবং আগ্রার তাজমহল প্রভৃতি স্থান ভ্রমণ করেন।
  • ১৯৪৭:    কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ইসলামিয়া কলেজ থেকে বি. এ ডিগ্রি লাভ। দেশ ভাগ হলে বঙ্গবন্ধু কলকাতা ত্যাগ করে ঢাকায় চলে আসেন।
  • ১৯৪৮:    ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন;
    ৪ঠা জানুয়ারি প্রতিষ্ঠা করেন পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ;
    ১১ মার্চ বাংলা ভাষার দাবীতে ধর্মঘট পালনকালে গ্রেফতার হন; ১৫ মার্চ মুক্তি লাভ করেন। ১৬ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত ছাত্রসভায় সভাপতিত্ব করেন;
    ১৯ মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে নেতৃত্ব দেন। ১১ সেপ্টেম্বর পুনরায় গ্রেফতার হন।
  • ১৯৪৯: জেলে আটক থাকা অবস্থায় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত।
  • ১৯৫২: ভাষা আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্বে রাষ্ট্রভাষা বাংলা এবং রাজবন্দীদের মুক্তির দাবীতে বঙ্গবন্ধু ১৬ ফেব্রæয়ারি থেকে টানা ১৩ দিন অনশন পালন করেন;
    বঙ্গবন্ধুর প্রথমবার নয়াচীন ভ্রমণ। চীনের পিকিং-এ অনুষ্ঠিত বিশ্ব শান্তি সম্মেলনে যোগদান।
  • ১৯৫৩: ৯ জুলাই পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
  • ১৯৫৪: যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু গোপালগঞ্জের আসনে মুসলিম লীগের প্রভাবশালী নেতা ওয়াহিদুজ্জামানকে ১৩ হাজার ভোটে পরাজিত করে নির্বাচিত হন;
    ১৫ মে প্রাদেশিক সরকারের কৃষি ও বন মন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করেন।
  • ১৯৫৫: ৫ জুন গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন;
    ২১ অক্টোবর আওয়ামী মুসলিম লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে দলের নাম থেকে ‘মুসলিম’ শব্দ প্রত্যাহার করা হয়। বঙ্গবন্ধু পুনরায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
  • ১৯৫৬: ৩ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ মুখ্যমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাত করে খসড়া সংবিধানে প্রাদেশিক স্বায়ত্ত¡শাসনের বিষয়টি অন্তর্ভুক্তির দাবী জানান;
    ১৬ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু কোয়ালিশন সরকারের শিল্প, বাণিজ্য, শ্রম, দুর্নীতি দমন ও ভিলেজ এইড দপ্তরের মন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন;
    বঙ্গবন্ধু প্রথমবারের মত যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন।
  • ১৯৫৭: ৭ আগস্ট বঙ্গবন্ধু সরকারি সফরে চীন ও সোভিয়েত ইউনিয়ন গমন করেন।
  • ১৯৬০: বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে কাজ করার জন্য চাত্র নেতৃবৃন্দের দ্বারা ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ’ নামে একটি গোপন সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন।
  • ১৯৬২: ৬ ফেব্রুয়ারি জননিরাপত্তা আইনে বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হন।
  • ১৯৬৩: অসুস্থ হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে দেখতে এবং তার পরামর্শ গ্রহণের উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু লন্ডন সফর। ৫ ডিসেম্বর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী বৈরুতে ইন্তেকাল করেন।
  • ১৯৬৪: মাওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশ আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং বঙ্গবন্ধু সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত।
  • ১৯৬৬: ৫ ফেব্রুয়ারি লাহোরে বিরোধী দলসমূহের জাতীয় সম্মেলনের বিষয় নির্বাচনী কমিটিতে বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ছয় দফা দাবী উত্থাপন করেন;
  • ৭ জুন বঙ্গবন্ধু ও আটক নেতৃবৃন্দের মুক্তির দাবীতে এবং ৬ দফার পক্ষে সারাদেশে ধর্মঘট পালিত হয়। সর্বাত্মক ধর্মঘট চলাকালে মনু মিয়াসহ ১১ জন শ্রমিক নিহত হন। বর্তমানে ৭ জুন ছয় দফা দিবস হিসাবে পালিত হয়।
  • ১৯৬৬: ১ মার্চ বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন।
  • ১৯৬৮: ৩ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুকে ১ নম্বর আসামী করে মোট ৩৫ জনের বিরুদ্ধে পাকিস্তান সরকার রাষ্ট্রদ্রোহীতার অভিযোগে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করে।
  • ১৯৬৮: ১৯ জুন ঢাকা সেনানিবাসে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিচারকার্য শুরু হয়।
  • ১৯৬৯: আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা হতে প্যারোলে মুক্তিদান বঙ্গবন্ধু প্রত্যাখান করেন। ২২ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান সরকার আগরতলা ষরযন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করে বঙ্গবন্ধুসহ অন্যান্য আসামীদের মুক্তি দিতে বাধ্য হয়;
    ২৩ ফেব্রæয়ারি রেসকোর্স ময়দানে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে ১০ লক্ষের অধিক ছাত্র জনতার উপস্থিতিতে বঙ্গবন্ধুকে এক বিশাল সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সেখানে তিনি বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত হন;
    ৫ ডিসেম্বর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবাষির্কী উপলক্ষে আলোচনা সভায় বঙ্গবন্ধু পূর্ব বাংলার নামকরণ করেন ‘বাংলাদেশ’।
  • ১৯৭০: ৬ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পুনরায় আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন।
  • ১৯৭০: ১৭ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক হিসাবে ‘নৌকা’ প্রতীক চূড়ান্ত করেন।
  • ১৯৭১: ৩ জানুয়ারি, বঙ্গবন্ধু ১৯৭০ সালের নির্বাচনে জয়ী জনপ্রতিনিধিদের ৬দফার ভিত্তিতে শাসনতন্ত্র রচনা ও জনগণের প্রতি আনুগত্য থাকার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন
    ৩ মার্চ, পল্টনে স্বাধীন বাংলা ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ আয়োজিত জনসভায় বঙ্গবন্ধুকে ‘জাতির পিতা’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়;
    ৭ মার্চ, বঙ্গবন্ধু রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণে ঘোষণা করেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম, জয় বাংলা’;
    ১৬ মার্চ, ক্ষমতা হস্তান্তর প্রশ্নে মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠক শুরু;
    ২৪ মার্চ, ক্ষমতা হস্তান্তর প্রশ্নে মুজিব-ইহাহিয়া-ভুট্টো বৈঠক শুরু;
    ২৬ মার্চ, বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা প্রদান (২৫ মার্চ দিবাগত রাত ১২ টা ২০ মিনিটে) এবং প্রায় একই সময়ে তিনি পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার হন;
    ৫ এপ্রিল, মার্কিন সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন নিউজ উইক একটি কভার স্টোরি করে যার শিরোনাম ছিল ‘Civil War in Pakistan’ পত্রিকাটি প্রকাশিত নিবন্ধে বঙ্গবন্ধুকে ‘রাজনীতির কবি’ হিসাবে অভিহিত করে;
    ৭ সেপ্টেম্বর, পাকিস্তানের লায়ালপুর সামরিক জেলে বঙ্গবন্ধুর গোপন বিচার সম্পন্ন করে তাঁকে দেশদ্রোহী ঘোষণা করে মৃত্যুদন্ড প্রদানের রায় ঘোষণা হয়।
  • ১৯৭২:    ৮ জানুয়ারি, পাকিস্তান কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধুর মুক্তিলাভ, লন্ডন গমন;
    ৯ জানুয়ারি, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এডওয়ার্ড হিথের সাথে সাক্ষাৎ;
    ১০ জানুয়ারি, নয়াদিল্লীতে সংক্ষিপ্ত যাত্রাবিরতি। ভারতের রাষ্ট্রপতি ভি.ভি গিরি ও প্রধানমন্ত্রী মিসেস ইন্দ্রিরা গান্ধীর সাথে সাক্ষাৎ;
    ১০ জানুয়ারি, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন;
    ১২ জানুয়ারি, বঙ্গবন্ধুর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ;
    ১০ অক্টোবর, বঙ্গবন্ধু জুলিও কুরি পুরুস্কারে ভূষিত হন;
    ১৪ ডিসেম্বর, বাংলাদেশের প্রথম সংবিধানে বঙ্গবন্ধু স্বাক্ষর করেন;
    ১৫ ডিসেম্বর, বঙ্গবন্ধু মুক্তিযোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় খেতাব প্রদানের কথা ঘোষণা করেন।
  • ১৯৭৩:    বঙ্গবন্ধুর কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনে যোগদান। গ্রেট বৃটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের সাথে সাক্ষাৎ;
    ৬ সেপ্টেম্বর জোট নিরপেক্ষ সম্মেলনে যোগদানের উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু আলজেরিয়া সফর করেন;
    ১৭ অক্টোবর তিনি জাপান সফর করেন।
  • ১৯৭৪:    ২৩ ফেব্রুয়ারি ইসলামি সম্মেলন সংস্থার (ওআইসি) সম্মেলনে যোগদানের উদ্দেশ্যে পাকিস্তান সফর করেন;
    ২৪ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বাংলায় ভাষণ প্রদান করেন।
  • ১৯৭৫:    ২৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ (বাকশাল) গঠন;
    ১৫ আগস্ট, বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হন।
     
    সন তারিখে বঙ্গবন্ধু 

Friday, March 8, 2024

আন্তর্জাতিক নারী দিবসে নারীর মানসিক স্বাস্থ্যের কথা -- মোঃ হেলাল উদ্দিন

 “বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি, চির-কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।”


জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত ‘নারী’ কবিতার এই দুই লাইনের মাধ্যমে সহজেই বুঝা যায় বিশ্বের সার্বিক কল্যাণে নারীশক্তি কতোটা অপরিহার্য। বিশ্বে সুস্থ-নিরপেক্ষ সমাজ বিনির্মাণে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছেন। নারীর এই কাজের স্বীকৃতি এবং সমাজে নারীদের সুস্পষ্ট অবস্থান তৈরির লক্ষ্যে প্রতিবছর ৮ই মার্চ পালিত হয় “আন্তর্জাতিক নারী দিবস”। বিশ্বের বিভিন্ন দেশজুড়ে ১৯১৪ সাল থেকে এ দিবসটি পালিত হলেও জাতিসংঘ ১৯৭৫ সালে দিনটিকে নারী দিবস হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালনের মূল লক্ষ্য হলো নারী ও পুরুষের সমঅধিকার আদায়।


নারীদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক অর্জনকে স্মরণ করার জন্য এবং তাঁদের উৎসাহিত করে তোলার জন্য প্রতিবছর আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করা হয়ে থাকে। নারী দিবসের মাধ্যমে জেন্ডার সমতা, নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ করা, নারী-পুরুষের একতা, শিক্ষা, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে নারীর সমান অংশগ্রহণ ইত্যাদির উপর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। কেননা নারীদের কৃতিত্ব ও অবদান পৃথিবীর উন্নয়নের ক্ষেত্রে কোনো অংশেই কম নয়। বর্তমান বিশ্বে নারীরা গৃহিনী হতে শুরু করে রাষ্ট্রপ্রধান, বড় বড় প্রতিষ্ঠানের পরিচালকসহ নানান ক্ষেত্রে কর্মরত। কিন্তু ঘরে-বাইরে সর্বত্রই নারীর স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যাপারে উদাসীনতা দেখা যায়। বিশেষ করে তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর তেমনভাবে এখনো গুরুত্ব দেওয়া হয় না, অথচ নারীর সুস্থতায় পরিবার, সমাজ তথা রাষ্ট্রের সুস্থতা।


বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, পুরুষদের তুলনায় নারীদের মধ্যে মানসিক সমস্যার প্রাদুর্ভাব বেশি এবং নারীদের মধ্যে প্রতি ৫ জনের মধ্যে ১ জন নারী কোনো না কোনো মানসিক সমস্যায় ভুগে থাকেন। নারীদের সাধারনত একান্ত নিজস্ব যে মানসিক সমস্যাগুলো হয় সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো গর্ভকালীন বিষন্নতা, মাসিকের আগে ও পরে ঘন ঘন মেজাজ পরিবর্তন হওয়া, মেনোপজের আগে ও পরে বিভিন্ন মানসিক সমস্যা দেখা দেওয়া ইত্যাদি। তবে নারীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি যে মানসিক সমস্যা দেখা দেয় তা হল- হতাশা এবং উদ্বেগ। যা নারীদের বিকাশের ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। কেননা নারীদের এই মানসিক সমস্যাগুলোকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সমাজ এড়িয়ে যেতে চায় এবং কম গুরুত্ব দেয়।


বিভিন্ন উপসর্গের মাধ্যমে বোঝা যায় যে একজন নারীর মধ্যে মানসিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ মেন্টাল হেলথ্ (National Institute of Mental Health -NIMH) এর মতে, একজন নারীর মধ্যে মানসিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে কিনা তা বুঝার , বিভিন্ন উপসর্গের মধ্যে রয়েছে-

১. প্রতিনিয়ত দুঃখ বা হতাশার অনুভূতি
২. মাদকাসক্তি
৩. অতিরিক্ত পরিমাণে অ্যালকোহল পান করা
৪. খাওয়া ও ঘুমের অভ্যাসের আকস্মিক পরিবর্তন
৫. ক্ষুধা কমে যাওয়া বা অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়া
৬. প্রতিনিয়ত ক্লান্ত অনুভব করা
৭. হ্যালুসিনেশন হওয়া
৮. ঘন ঘন মেজাজ পরিবর্তন
৯. শারীরিক কোনো সমস্যা ছাড়াই মাথাব্যাথা ও হজমের সমস্যা
১০. নিজেকে ধীরে ধীরে সমাজ থেকে গুটিয়ে নেওয়া
১১. আত্মহত্যা করার প্রবনতা।
 
মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়া পারিবারিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে পুরুষদের তুলনায় কিছুটা কঠিন কেননা আমাদের সমাজে নারীদের বরাবরই উপেক্ষিত, যদিও মানসিক স্বাস্থ্য প্রত্যেকের জন্যই সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। নারীদের এই মানসিক সমস্যাগুলো কিছুটা কমানোর জন্য বা রোধ করবার জন্য দৈনন্দিন কিছু অভ্যাস পরিবর্তন করা প্রয়োজন। যেমন-
 
১. স্বাস্থ্যকর সুষম খাদ্য গ্রহন,
২. নিয়মিত ব্যায়াম করার অভ্যাস,
৩. মাদক ও এলকোহল আসক্তি থেকে দূরে থাকা,
৪. নিয়মিত শরীরের যত্ন নেওয়া,
৫. পরিমিত পরিমাণে ঘুমানো,
৬. পরিবারের সদস্য ও বন্ধুবান্ধবদের সাথে সুন্দর সময় কাটানো,
৭. যেকোনো মানসিক সমস্যা হলে চিকিৎসক বা থেরাপিস্টের পরামর্শ নেওয়া।
 
নারীদের যেকোনো মানসিক সমস্যার ক্ষেত্রে নিজেকে সবার আগে অগ্রাধিকার দিতে হবে এবং কুসংস্কার থেকে নিজেদের দূরে রাখতে হবে। বর্তমানে আমাদের সমাজের শিক্ষিতজনদের মাঝে অনেকেই নারীদের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সমস্যাগুলোকে সবার মাঝে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন এবং এ বিষয়ে সবাইকে অবহিত করছেন। এই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকলে ধীরে ধীরে সবাই নারীদের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিষয়গুলো সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠবেন এবং সমাজে সমতা ও শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। আন্তর্জাতিক নারী দিবসে সকল নারীর প্রতি শুভেচ্ছা।
 
 

পত্রিকায় প্রকাশিত লিঙ্কঃ