Saturday, September 21, 2024

সুন্দর দাম্পত্য জীবন গড়তে পড়ুন 'দাম্পত্য রসায়ন' -- মোঃ হেলাল উদ্দিন

জীবনসঙ্গীর মনের প্রতিটি ভাঁজে বিচরণ ও উপলব্ধি এবং তার হৃদয়কে অধ্যয়ন করা দাম্পত্য সুখের অপরিহার্য শর্ত। স্বামী-স্ত্রীর শারীরিক ও মানসিক বৈশিষ্ট্য ও গঠন সৃষ্টিগতভাবেই ভিন্ন। এই দুই ভিন্ন সত্তা যখন একই ধ্যানের মৃণাল ধরে জীবন সাজাতে সংকল্পবদ্ধ হয়, তখন পরস্পরের গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে অবগত হওয়া আবশ্যক হয়ে পড়ে। অন্যথায় দাম্পত্যজীবনের উষ্ণ লেনাদেনাকে যান্ত্রিক ও আরোপিত বলেই মনে হয়। ‘দাম্পত্য রসায়ন’ পাঠকের চিন্তা ও বোঝাপড়ায় এমন এক বোধ দিতে চায়, যা সঙ্গীর মনের ভাষা পড়তে সহায়ক হবে। দাম্পত্য সম্পর্ক প্রাণোচ্ছল করতে ‘দাম্পত্য রসায়ন’ পুস্তিকাটি হতে পারে স্বামী-স্ত্রীর দারুণ এক টোটকা।


উপরের কথাগুলো বইয়ের ফ্রাপের, তবে অতিরঞ্জিত নয়। তারপরেও কিছু কথা থেকে যায়। বইটি মাত্র চৌষট্টি পৃষ্ঠার এবং এটি একটি অনুদিত বই। অনুবাদক হয়ত চেষ্টা করেছেন ভালো অনুবাদ করা তথাপি শব্দ চয়নের ক্ষেত্রে আরো সর্তকতার দরকার ছিল। বইয়ের অর্ধেক আলোচনা পড়লে অনেকটা চটি বইয়ের মত মনে হয়, কিংবা ইসলাম শুধু নারীর দেহ কেন্দ্রিক আলোচনা করেছে বলে বুঝা যায়। ইসলামি আলোচনার ক্ষেত্রে আরো স্পষ্ট এবং ব্যাখ্যা বিশ্লেষণসহ আলোচনা না করলে মানুষ ইসলামকে ভুল বুঝার সুযোগ থেকে যায়। তবে বইয়ের শেষের দিকের আলোচনা এই বিবেচনায় কিছুটা ভালো। বইটি পাঠের মাধ্যমে বিবাহিত কিংবা যারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে যাচ্ছেন তারা তাদের বৈবাহিক সম্পর্কে একটু হলেও আরো মধুর কিংবা মজবুত করতে পারবেন বলে মনে হয়।


No photo description available.


বইঃ দাম্পত্য রসায়ন
লেখকঃ ড. ইয়াসির ক্বাদি
অনুবাদঃ ফাতেমা মাহফুজ
প্রকাশকঃ গার্ডিয়ান পাবলিকেশন্স
মূল্যঃ ৭০ টাকা।

Md. Helal Uddin

Monday, September 16, 2024

মুসলিম উম্মাহর অনুকরণীয় সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ মুহাম্মাদ (স) -- মোঃ হেলাল উদ্দিন

‘অ্যাইয়ামে জাহিলি’ যুগ হিসাবে পরিচিত সময়ে সবাই ধর্মহীন জীবনে নিমজ্জিত ছিলো। যেখানে কোথাও শান্তি ছিলো না। সর্বত্র অশান্তি বিরাজ করত। মানুষ ছিল হতাশাগ্রস্থ। তখন এই অন্ধকারাচ্ছন্ন, হতাশাগ্রস্থ মানুষ জাতির মুক্তির জন্য প্রয়োজন দেখা দেয় একজন আর্দশবান মানুষের। মহান আল্লাহ তাআলা আর্দশ মানুষ হিসাবে হযরত রাসুল (স) কে নির্বাচন করেন এবং কোরআনুল কারিমে মহান আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন- ‘আমি আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমতস্বরূপ পাঠিয়েছি।’ (সুরা আম্বিয়া : আয়াত ১০৭) এবং ‘তাদের জন্যে রাসুলুল্লাহর জীবনে উত্তম আদর্শ রয়েছে; যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে বেশি স্মরণ করে।' (সুরা আহজাব : আয়াত ২১) এই আর্দশ মানুষটির মাঝে অনেক গুনের সমাবেশ রয়েছে। চারিত্রিক বৈশিষ্টে তিনি ছিলেন শ্রেষ্ঠ মহামানব। আর্দশের দিক দিয়ে জাতি, বর্ণ, ধর্ম, গোত্র, সম্প্রদায়, দেশ, কাল সর্বক্ষেত্রে ছিলেন আর্দশের প্রতীক। মোটকথা, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সব কথা ও কাজ ছিল শান্তি, শৃঙ্খলা, নিরাপত্তা ও আন্তরিকতায় পরিপূর্ণ। দুনিয়ার জীবনের উন্নত দিকনির্দেশনা। তাঁর অসংখ্য আদর্শের মধ্যে জীবনঘনিষ্ঠ কিছু আদর্শ তথা উপদেশের মধ্যে রয়েছে-

* সালাম দেয়া
প্রিয় নবী (স) সবাইকে আগে আগে সালাম দিতেন। সাধারণ কেউ তাকে আগে সালাম দিতে পারতেন না। এটি ছিল বিশ্বনবীর অন্যতম শিক্ষা। এ কারণেই তিনি বলেছেন- ‘কথা বলার আগে সালাম দাও।’

* আল্লাহকে বেশি স্মরণ করা

আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন বাস্তবায়নই ছিল বিশ্বনবীর মিশন। তিনি সব সময় সব কাজে মহান আল্লাহকে স্মরণ করতেন এবং আল্লাহকে স্মরণ করতে বলতেন। আল্লাহর নির্দেশ- ‘সুতরাং তোমরা আমাকে স্মরণ কর; আমিও তোমাদের স্মরণ রাখবো আর আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর; অকৃতজ্ঞ হয়ো না।’ (সুরা বাকারা : আয়াত ১৫২) - হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে বেশি পরিমাণে স্মরণ কর।’ (সুরা আহজাব : আয়াত ৪১)

* নামাজ পড়া
নামাজ ছিল প্রিয় নবীর জীবনের শ্রেষ্ঠ ইবাদাত ও আদর্শ। এমনকি তিনি যখন কোনো বিপদে পড়তেন সঙ্গে সঙ্গে তিনি নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন। আবার কোনো কারণে কষ্ট বা হতাশা বা চিন্তাগ্রস্ত হলেও তিনি তাৎক্ষণিক নামাজে দাঁড়িয়ে যেতেন। আল্লাহ তাআলা প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়া সাল্লামকে বিশেষভাবে (রাতে) তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। আল্লাহ তাআলা বলেন-‘হে চাদর আবৃত, রাতের সালাতে দাঁড়াও; কিছু অংশ ছাড়া।’ (সুরা মুজাম্মিল : আয়াত ১-২)

* মুচকি হাসি
রাসুলুল্লাহ (স) কম হাসতেন এবং মুচকি হাসি হাসতেন। এর অনেক উপকারিতা রয়েছে। হাদিসে এসেছে- হজরত আবু হুরায়রা (রা) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (স) বলেছেন, সৎ আমলের কোনো কিছুকেই তুচ্ছ মনে করো না, যদি তা (সৎ আমলটি) তোমার নিজের ভাইয়ের সঙ্গে মুচকি হাসি দিয়ে মিলিত হওয়ার দ্বারাও হয়। (মুসলিম শরীফ)

* প্রতিশোধ পরায়ন না হওয়া
কারো প্রতি প্রতিশোধ না নেয়া ছিল বিশ্বনবীর অন্যতম আদর্শ। কেউ অপরাধ করে থাকলে ধৈর্যধারণ করাও শ্রেয়। রাসুলুল্লাহ (স) নিজের জন্য কখনোই প্রতিশোধ গ্রহণ করতেন না। এমন কি রাসুলুল্লাহ (স) কখনো কাউকে আঘাত করতেন না। শারীরিক আঘাত তো দূরের কথা তিনি কথা বা আচরণ দিয়েও কাউকে কষ্ট দিতেন না।

* শিশুদের স্নেহ করা
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোমলমতি শিশুদের বেশি স্নেহ করতেন এবং ভালোবাসতেন। হাদিসে এসেছে-
হজরত আবু হুরায়রা (রা) বলেন, এক ব্যক্তি একটি শিশু নিয়ে বিশ্বনবীর খিদমতে এসে শিশুটিকে চুমু দিতে লাগলেন। রাসুলুল্লাহ (স) এ দৃশ্য দেখে তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, শিশুটির প্রতি কি তোমার দয়া জেগে উঠেছে? সে বলল, ‘হ্যাঁ’, হে আল্লাহর রাসুল! তারপর রাসুলুল্লাহ (স) বললেন, ‘আল্লাহ তাআলা তোমার প্রতি এর চেয়েও অধিক দয়া করেন। কেননা তিনি দয়ালুদের শ্রেষ্ঠ দয়ালু। (বুখারি)

* পরিবারের সঙ্গে কোমল আচরণ
রাসুলুল্লাহ (স) নিজের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কোমল আচরণ করতেন। এবং অন্যদেরকে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কোমল ও উত্তম আচরণের নির্দেশ দিয়েছেন। খাবার-দাওয়া, কেনা-কাটা, সাংসারিক কাজে পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতা ও উত্তম জিনিস দেয়াকে উত্তম ইবাদত ও খরচ বলে উল্লেখ করেছেন।

* মিথ্যা পরিহার করা
মিথ্যা সব পাপের মূল। রাসুলুল্লাহ (স) সব সময় মিথ্যা থেকে বিরত থাকার কথা বলেছেন। তিনি মিথ্যাকে সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করতেন।

* সাদকা বা দান করা
রাসুলুল্লাহ (স) বেশি বেশি সাদকা করতেন। ইসলামের জন্য সাদকা করতে হজরত খাদিজা (রা) তার সমূদয় সম্পদ প্রিয় নবীকে দিয়েছিলেন। আর তিনি তা দ্বীনের পথে ব্যয় করেছেন। বেশি বেশি সাদকা বা দান করার নির্দেশ দিয়েছেন। রাসুলুল্লাহ (স) এর কাছে যখন কোনো সাদকা আসতো তিনি তা সবার মাঝে বিলিয়ে দিতেন। কেননা তিনি সাদকা খেতেন না।

* ক্ষমা করা
ক্ষমা মহান আল্লাহ তাআলার অন্যতম গুণ। রাসুলুল্লাহও (স) ক্ষমা করতে ভালোবাসতেন। হাদিসে প্রিয় নবী (স) ক্ষমার ব্যাপারে এভাবে দোয়া করতেন এবং তাঁর উম্মতেকে দোয়া করতে বলতেন- অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল; ক্ষমা করতে ভালোবাসেন; অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন। (মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মিশকাত)

* কাউকে অবহেলা না করা
রাসুলুল্লাহ (স) কখনো কাউকে অবহেলা করতেন না। কারো মর্যাদা বিনষ্ট হোক এটা তিনি কামনা করতেন না। সবার প্রতি তিনি উদার ছিলেন। বিশেষ করে তার কাছে আসা সব ব্যক্তিকেই তিনি সমাদর করতেন, গুরুত্ব দিতেন এবং তাদের কথা শুনতেন।

* সুস্পষ্ট কথা বলা
রাসুলুল্লাহ (স) ছিলেন সুস্পষ্টভাষী। তিনি ছিলেন সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী। সত্যের মানদণ্ডে তিনি ছিলেন স্পষ্টবাদী। কথা বলার সময় তিনি সুস্পষ্টভাষায় কথা বলতেন। এমন কেউ ছিলেন না যিনি প্রিয় নবীর কথা বুঝতেন না।

* অনাড়ম্বরতা
সৃষ্টির সেরা মানুষ হয়েও তিনি বিলাশসতামুক্ত অত্যন্ত সাদা-মাটা ও অনাড়ম্বর জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিলেন। রাসুলুল্লাহ (স) গাছের লতা-পাতা দিয়ে তৈরি করা বিছানায় ঘুমাতেন। এতে তার শরীর মুবারকে দাগ হয়ে যেত। সাহাবারা ভালো কোনো বিছানার ব্যবস্থা করার আবদার জানালে তার প্রতিউত্তরে তিনি বলতেন, ‘আমার দুনিয়ার প্রতি কোনো আকর্ষণ নেই। আমি দুনিয়াতে একজন পথচারী ছাড়া আর কিছুই নই। যে পথচারী একটা গাছের ছায়ায় আশ্রয় নিয়ে একটু পরে সেটা ছেড়ে চলে যায়।’ (তিরমিজি)

সুতরাং বিশ্ববাসীর উচিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণ ও অনুকরণ করা। তাঁর রেখে যাওয়া জীবনাচারে সবার জীবন সাজানো। আর তাতেই মিলবে মহান আল্লাহর ভালোবাসা, সন্তুষ্টি। থাকবে গোনাহ মাফের হাতছানি।আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে প্রিয় নবীর এ গুণগুলো যথাযথভাবে মেনে চলার তাওফিক দান করুন। বিশ্বনবীর আদর্শে নিজেকে রাঙিয়ে তোলার তাওফিক দান করুন। আমিন।

 

মুসলিম উম্মাহর অনুকরণীয় সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ মুহাম্মাদ (স) 

(মোঃ হেলাল উদ্দিন– শিক্ষক, লেখক ও গবেষক)